শিয়াল ও বকের গল্প

এক সময়ের কথা, একটা ছোট্ট গ্রামে এক পিচ্চি শিয়াল এবং তার সঙ্গী বক বাস করত। তারা ছিল খুব ভালো বন্ধু, কিন্তু স্বভাব ছিল একেবারেই আলাদা। শিয়াল ছিল খুব চালাক ও ধূর্ত, তার মধ্যে ছিল খুঁজে বের করার অসীম আগ্রহ, আর বক ছিল শান্ত, দায়িত্ববান, এবং সত্যিকার অর্থে বিশ্বস্ত। 

শিয়াল ও বকের গল্প


তারা দুজনেই বনের কিনারায় এক সুন্দর হ্রদের কাছে বাস করত। সেই জায়গা ছিল সবুজে ভরা, আর বিশাল বড় এক পুকুর যেখানে তারা প্রায়ই ঘুরে বেড়াত।

একদিন, শিয়াল ভাবল, "এমন কিছু একটা করা উচিত, যাতে আমি সহজেই খাবারের খোঁজ পেতে পারি।" সে খুব ভালো করেই জানত, খাবারের সন্ধানে বক অনেকটা সময় ব্যয় করে না। তার সঙ্গী ছিল প্রকৃতির কাছে সন্তুষ্ট, আর সাদাসিধে জীবনযাপন করতে ভালোবাসত। তাই শিয়াল একটা কুচক্রী পরিকল্পনা করল, যাতে সে সহজেই তার সঙ্গীকে ঠকিয়ে কিছু খাবার পেতে পারে।

শিয়াল বকের কাছে গেল এবং তাকে বলল, “বক ভাই, তুমি তো খুব ভালো মনের মানুষ। আমি জানি তুমি প্রকৃতির কাছ থেকে সব সময় শান্তি ও সুখ পেতে। তবে, আমি কিছু নতুন ব্যাপার শিখেছি, তোমার মতো শান্ত ব্যক্তির জন্যও কিছু নতুন পথে যেতে দরকার।”

বক হালকা হাসি দিয়ে বলল, “তুমি জানো শিয়াল, আমি কোনো ভুল পথে যেতে চাই না। আমি যা জানি, তাই নিয়ে সন্তুষ্ট। প্রকৃতির সঙ্গেই শান্তি পেয়ে থাকি।”

শিয়াল আরও মিষ্টি কণ্ঠে বলল, “বিলকুল, তবে একবার শুধু তোমাকে দেখিয়ে দিতে চাই, তুমি হয়তো কিছু নতুন সুবিধা পেতে পারো। আসলে, হ্রদের ওপারে বেশ কিছু সুস্বাদু মাছ আছে। তুমি যদি সেখানে যেতে পারো, তাহলে খাওয়ার জন্য আরও বেশি খাবার পাবে।”

বক কিছুটা সন্দেহের চোখে শিয়ালের দিকে তাকিয়ে বলল, “তবে, শিয়াল, আমি তো জানি না সেখানে কীভাবে যেতে হবে। তুমি তো জানো, আমি যখন উড়ে যাই, তখন সাধারণত দূর-দূরান্তে যাই না।”

শিয়াল বলল, “দেখো, তুমি উড়তে পার, তাই তো! আর আমি জানি কোথায় কী রয়েছে, আমি তোমাকে পথ দেখাতে পারি। তুমি শুধু আমাকে অনুসরণ করো, আমি নিশ্চিত তোমার অনেক লাভ হবে।”

বক এক মুহূর্ত ভাবল। শিয়ালের কথা শুনে তার মনে হল, যদি সেখানে সত্যিই এত ভাল কিছু থাকে, তবে সে না গেলেও পারে না। তবে তার মনের মধ্যে একটা অদ্ভুত সন্দেহ ছিল। তারপরেও, বক তার সঙ্গী শিয়ালের কথায় বিশ্বাস করে বলল, “তাহলে আমাকে দেখাও, কোথায় সেই জায়গা?”

শিয়াল খুশি হয়ে বলল, “চলো, আমাকে অনুসরণ করো।”

তারা হ্রদের পাশ দিয়ে যেতে লাগল। শিয়াল জানত, হ্রদের ওপারে এক ধরনের মাছ আছে, যেগুলি খুবই সুস্বাদু, কিন্তু সেখানে পৌঁছাতে হলে তাকে আরেকটা বোকা বানানোর দরকার ছিল। সে ভাবল, “এবার আমার পরিকল্পনা সফল হবে।” শিয়াল বককে নিয়ে গিয়ে একটি বড় শাল গাছের নিচে বসে বলল, “দেখো, ওই ওপারে মাছগুলো পাবে। তবে তোমাকে একটু ধৈর্য্য ধরতে হবে। আমি এখানে অপেক্ষা করি, তুমি মাছগুলো ধরো। আমি তোমার জন্য কিছু খাবার এনেছি।”

বক হেসে বলল, “ঠিক আছে, আমি যাচ্ছি।”

শিয়াল মনেকরে বসে রইল এবং তার চিন্তা পুরোপুরি সফল হওয়ার অপেক্ষায় ছিল। বক পুকুরের দিকে উড়ে গেল। শিয়াল জানত, মাছগুলো পানির নিচে, এবং বক তাদের ধরতে পারবে না। তবে সে তা জানাতেও চায়নি। শিয়াল বসে ছিল নিশ্চিন্তে, বকের কাছে গোপনভাবে সাফল্য হাসিল করার খোঁজে।

কিছু সময় পর, বক বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও মাছ ধরতে পারল না। সে অবশেষে ক্লান্ত হয়ে ফিরে আসল। হঠাৎ, তার চোখে পড়ল শিয়াল দাঁড়িয়ে হাসছে।

বক ক্ষুব্ধ হয়ে বলল, “শিয়াল, তুমি তো বলেছিলে যে এখানে মাছ আছে! আমি তো তাদের কিছুই দেখলাম না।”

শিয়াল হাসতে হাসতে বলল, “ও হ্যাঁ, মাছ তো ছিল। তবে তোমার মতো গোঁয়ার মানুষ যেন তাদের ধরতে পারে—এমন কথা আমি বলিনি।”

বক বিস্মিত হয়ে বলল, “তুমি কি আমাকে ধোঁকা দিয়েছো?”

শিয়াল একদম নির্বিকারভাবে উত্তর দিল, “বিলকুল! তুমি খুব সহজেই বিশ্বাস করেছিলে। তুমি আসলেই খুব সহজেই বোকা বানানো যায় এমন একজন।”

বক বুঝতে পারল, শিয়াল তার ওপর খেলা খেলেছে। সে খুবই ক্ষুব্ধ হয়ে বলল, “শিয়াল, তুমি এত ধূর্ত, কিন্তু একদিন তোমার ধূর্ততার শাস্তি পাবে। প্রতিটি পদক্ষেপে, প্রতিটি বিশ্বাসের প্রতিদান আসে।”

শিয়াল হাসতে হাসতে চলে গেল, কারণ সে জানত, আজকের মতো আরেকটি সুবিধা তাকে পেতে আর কিছুই দরকার ছিল না। কিন্তু বক তার কথায় একটি শিক্ষা নিয়ে ফিরে গেল। সে জানল, কখনও কাউকে খুব সহজেই বিশ্বাস করা ঠিক নয়, বিশেষ করে যদি সে তোমাকে ঠকানোর উদ্দেশ্যে কিছু বলে।

বক শিয়ালের ধূর্ততার শিকার হয়ে বুঝল, “বিশ্বাসের জায়গায় সতর্কতা দরকার। সবাই যে ভালো থাকে, এমন নয়। আমি অবশ্যই আরও সতর্ক হয়ে চলব।”

এভাবে, শিয়াল এবং বকের গল্প শেষ হলেও, বক শিখল এক বড় পাঠ—বিশ্বাস করো, কিন্তু সতর্ক থেকেও থাকো।

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url