কারফিউ কি
সুপ্রিয় পাঠক কারফিউ শব্দটি খুব একটা পরিচিত শব্দ না হলেও, ২০১৪ সালে সম্প্রতি কারফিউ শব্দটি আমরা অনেকবার শুনে ফেলেছি। শুধু তাই নয় কারফিউম মানে কি সেটা সম্পর্কেও আমরা খুব সহজে বুঝে গেছি। এই সব কিছু দেখার পাশাপাশি কারফিউ নিয়ে এখনো অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে। যেমনঃ কারফিউ কি? কারফিউ কি জারি করতে পারে? আবার কারফিউ জারি করা হয় কোন আইনে? ১৪৪ ধারার সাথে কারফিউ এর পার্থক্য কি। তাই আমরা আজকের এই পোস্টে কারফিউ সম্পর্কে যেসব প্রশ্ন রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে আলোচনা করব। তাই আপনি যদি কারফিউ সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে জানতে চান তাহলে মনোযোগ সহকারে এ পোস্টটি পড়ুন। তাহলেই কারফিউই সম্পর্কে আপনার মনে যেসব প্রশ্ন ছিল সে সব প্রশ্নের উত্তর আপনি পেয়ে যাবেন।
কারফিউ কিঃ
কারফিউ মূলত একটি ইংরেজি শব্দ। এই শব্দটি এসেছে Couvre-feu(Anglo-French) থেকে। এটি একটি ফ্রেন্ডসের শব্দ।Couvre এর ইংলিশ অর্থ (To cover)। এবং feu অর্থ যার ইংলিশ fire। এবং এর বাংলা অর্থ হল আগুন ঢেকে রাখা, আচ্ছাদিত করে রাখা।Couvre-feu(Anglo-French) এই শব্দটিরও একটি ইতিহাস রয়েছে,
মধ্যযুগে ইউরোপিয়ান শহরগুলোর বাড়িগুলো সাধারণত কাঠ দিয়ে তৈরি করা হতো। এবং এ বাড়িগুলো একটি বাড়ির সাথে অন্য একটি বাড়ি গাদাগাদি করে নির্মাণ করা হতো। যার ফলে একটি বাড়িতে যদি আগুন লাগে তাহলে আরেকটি বাড়িতে আগুন লাগতে খুব বেশি সময় লাগতো না। এভাবে আগুন লাগার ফলে অনেকেরই ক্ষতি হয়েছিল। তাই আগুন লাগাকে প্রতিরোধ করতে সবাইকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আগুন ঢেকে রাখার নির্দেশ দেয়। যখনই আগুন ঢেকে রাখা সম্ভব তখন এক ধরনের সংকেত বাজানো হতো। আর এই সংকেত কে তারা Couvre fire bell বলে। আর আদি ফ্রেন্ডস যুগে এই আগুন ঢেকে রাখা কে বলা হত Couvre-feu। আর এই Couvre-feu শব্দটি ইংরেজি শব্দ ভান্ডারের যুক্ত হয়েছে curfew হিসেবে । এর অর্থ রয়েছে যার মধ্যে একটি হলঃ জনসাধারণকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কোন রাস্তায় করতে নিষেধ করা। এর আরো একটি অর্থ হচ্ছে সন্ধ্যা আইন। কারণ একটা সময়ে এই কারফিউ শুধুমাত্র সন্ধ্যার সময় করা হতো।
কারফিউ কেন জারি করা হয়?
কারফিউ জারি করা হয় মূলত, যদি বর্তমানে কোন ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ হয় তাহলে সে ধ্বংসযজ্ঞ কে প্রতিহত করার জন্য যে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয় তাকেই মূলত কারফিউ বলে। অনেকেই দেখে থাকবেন যে, বাংলাদেশেও ঠিক এমনই ধ্বংসযজ্ঞ চলছে। যার ফলে জনগণের অনেক ক্ষতি হচ্ছে এর পাশাপাশি অনেকেও মৃত্যুবরণ করছে। তাই এ পরিস্থিতি প্রতিহত করার জন্যই মূলত কারফিউ জারি করা হয়েছে।
বাংলাদেশের কোন আইনে এই কারফিউ এর কথা বলা হয়েছেঃ
সুপ্রিয় পাঠাকেরা আমরা কারফিউম কি এবং কারফিউম এর পিছনে কি কি ইতিহাস রয়েছে সে সবকিছু সম্পর্কে জানলাম। কিন্তু আপনারা কি জানেন বাংলাদেশের কোন আইনে কারফিউম সম্পর্কে বলা হয়েছে। বা বাংলাদেশ কারফিউ জারি করা যাবে । তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেই বাংলাদেশের কোন আইনে কারফিউ সম্পর্কে বলা হয়েছে।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা লাভের পর গঠিত বাংলাদেশের তৎকালীন ও বিধ্বস্ত সরকারকে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের পাশাপাশি মোকাবেলা করতে হয়েছিল অভ্যন্তর নানা ধরনের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে। তারি ধারাবাহিকতায় যখন দেশের নিরাপত্তা বিরোধী নানা কার্যকলাপ করা শুরু করে তখন ১৯৭৪ সালে ৯ই ফেব্রুয়ারি প্রণয়ন করা হয় Special powers act,1974 নামে একটি বিশেষ আইন। বাংলায় যাকে বলা হয় বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন আইন। কার্যকলাপ প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে বর্তমানে আটকসহ প্রবর্তন করা হয়েছে কারফিউ। আর এ ধারা অনুযায়ী যদি কেউ লগ্ন করে তাহলে তাকে এক বছর পর্যন্ত শাস্তি দেওয়া যেতে পারে আবার অর্থদণ্ডেও শাস্তি দেওয়া যেতে পারে, কোন কোন ক্ষেত্রে উভয় দন্ড এই দণ্ডিত হয়। আর এই কারফিউ ম একটি দেশের যেকোনো নির্দিষ্ট এলাকায় কিংবা সম্পূর্ণ দেশে কিছু নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আবার অনির্দিষ্টকালের জন্য জারি করতে পারে। আর এই কারফিউ জারি করা হয় মূলত যে কোন জায়গায় কোন ধ্বংসযজ্ঞ প্রতিরোধ করার জন্য।
১৪৪ ধারার সাথে কারফিউএর পার্থক্য কি?
এত কিছু জানার পর আপনার মনে হয় তো এ প্রশ্নটি একবার হলেও জেগেছে যে, ১৪৪ ধারা সাথে কারফিউ এর আবার কি সম্পর্ক। দুটির মধ্যে কিছু সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকলেও দুটির মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে।
১৪৪ ধারা মতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা এই উদ্দেশ্যে বিশেষ ক্ষমতা প্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গণ উৎপাত অথবা বিপদের আশঙ্কার জরুরী সঙ্গে সঙ্গে আদেশ জারি করতে পারেন, আর এই বিধানটি প্রায় প্রতিনিয়ত আমরা জারি হতে দেখি।
১৪৪ ধারা পার্থক্য হলঃ রাষ্ট্রবিরোধী কিংবা চরম ধ্বংসযজ্ঞ কোন কার্যকলাপ চলমান থাকলে তা প্রতিহত করার জন্য সরকারি সিদ্ধান্তে জারি করা হয় কারফিউ। কিন্তু ১৪৪ ধারা আদেশ জারি করা হয় মূলত কোন ধ্বংসযজ্ঞের আশঙ্কা থাকলে তা আগে থেকেই প্রতিহত করার জন্য এই ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। সাধারণ সরকারের সিদ্ধান্ত বা নিয়ন্ত্রণের কোন বালাই নেই। কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা নির্দিষ্ট সম্পত্তির বিষয়ে নয় বরং গণহারে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় কিংবা সারাদেশে জারি করা হয় কারফিউম। অপরদিকে ১৪৪ ধারা আদায়ের সাধারণত কোন একটি ব্যক্তি বা নির্দিষ্ট সম্পত্তির বিষয়ও জারি করা যায়। কাফি ভঙ্গ করলে ২৪(২) ধারার মতে যদি এই বিধানের ব্যাতিক্রম হয় তাহলে এক বছর পর্যন্ত কিংবা অর্থ দণ্ড আবার উভয় দণ্ড হতে পারে। কিন্তু অন্যদিকে ১৪৪ ধারা আদেশ লগ্ন করলে দন্ডবিধির ১৮৮ ধারা মোতাবেক উক্ত অপরাধীদের শাস্তি হচ্ছে ছয় মাস পর্যন্ত ১ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থ দণ্ড আবার উভয় দন্ডে হতে পারে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url