বঙ্গবন্ধুর জীবনী বাংলা রচনা ১০০০ শব্দের

 বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যাকে প্রায়ই বাংলাদেশের জাতির পিতা বলা হয়, ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া, বাংলাদেশের (সাবেক পূর্ব বাংলা) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং পরে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি (১৯৭১-১৯৭২) এবং প্রধানমন্ত্রী (১৯৭২-১৯৭৫) হন।
বঙ্গবন্ধুর জীবনী বাংলা রচনা ১০০০ শব্দের

মুজিব যেমন স্নেহের সাথে পরিচিত ছিলেন, তেমনি ছোটবেলা থেকেই রাজনীতিতে গভীরভাবে জড়িত ছিলেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি অল ইন্ডিয়া মুসলিম স্টুডেন্টস ফেডারেশনে যোগ দেন এবং পাকিস্তানের বৃহত্তর কাঠামোর মধ্যে বাঙালিদের অধিকারের পক্ষে সোচ্চার উকিল হয়ে ওঠেন। সময়ের সাথে সাথে, তিনি পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা হিসাবে আবির্ভূত হন।

ভূমিকাঃবঙ্গবন্ধুর জীবনী বাংলা রচনা 

প্রতিটি স্বাধীন দেশের পিছনে রয়েছে এক বীরত্বের কাহিনী। প্রত্যেক দেশপ্রেমীরাই তাদের দেশের জন্য জীবন দিতে রাজি থাকলেও, দেশকে স্বাধীন করতে হলে প্রয়োজন হয় একজন নেতার। সেই নেতার সঠিক নেতৃত্বে সকলের যদি একসাথে মিলে যুদ্ধ করে তাহলে সেই দেশের স্বাধীন হতে আর কেউ বাধা দিতে পারবে না। 

তেমনি আমাদের বাংলাদেশের স্বাধীন হওয়ার পেছনেও কিন্তু রয়েছে এক বীরের কাহিনী। তিনি হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার নেতৃত্বে আজ আমাদের বাংলাদেশ স্বাধীন। তার আত্মত্যাগের কারণে আমরা আজ নিজের মাতৃভাষায় কথা বলতে পারছি। বঙ্গবন্ধুর সেই ৭ই মার্চের ভাষণ বাঙ্গালীদের মনে জাদুর ছোঁয়ার মতো গেঁথে গিয়েছিল। 

তারা সে ভাষণ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে নেমে পড়েছিলেন। তারা তাদের জীবনের পরোয়া না করে যুদ্ধ করেছেন এবং আমাদের বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছেন।

জন্ম পরিচয়ঃ

শেখ মুজিবুর রহমান যে বাংলার মাটিতে জন্ম ছিলেন এটি বাংলাদেশের অনেক বড় সৌভাগ্য। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ জন্মগ্রহণ করেন(৩ই চৈত্র ১৩২৭ বঙ্গাব্দ)। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পিতার নাম ছিল লুৎফর রহমান এবং মাতার নাম ছিল সায়েরা খাতুন। 

শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তার মাতা পিতার তৃতীয়তম সন্তান। শেখ মুজিবুর রহমানের ছোটবেলার ডাকনাম ছিল খোকা। শেখ মুজিবুর রহমানের মাতা তাকে আদর করে খোকা বলে ডাকতেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি মানুষের কষ্ট দেখে তাদের সাহায্য করতেন। নিজের ছাতা অন্যজনকে দিয়ে বৃষ্টিতে ভিজেও তিনি বাড়ি ফিরেছেন। তাই ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশ প্রেম অটুট ছিল।

শিক্ষাজীবনীঃ

১৯২৭ সালেশেখ মুজিবুর রহমান সাত বছর বয়সে গেমা ডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এটাই ছিল তার জীবনের প্রথম বিদ্যালয়। এর পরে তিনি নয় বছর বয়সে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীতে গিয়ে ভর্তি হন। এরপরে তিনি গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুলে ভর্তি হন। শেখ মুজিবুর রহমান গোপালগঞ্জ মিশন স্কুল থেকেই মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। 

এরপরে তিনি কলকাতায় যেয়ে ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হয় এবং সেখান থেকে ১৯৪৭ সালে তিনি স্নাতক সম্পূর্ণ করেন। এরপরে তিনি সে ইসলামিয়া কলেজ থেকে আই.এ পাস করেন। এই কলেজ থেকে তিনি আবার ১৯৪৭ সালে বিএ পাস করেন। এরপর তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে ঢাকা আইন বিভাগে ভর্তি হবেন ।

সেইমতো তিনি ১৯৪৮ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগকে ভর্তি হন। তো দুর্ভাগ্যের ব্যাপার যে তিনি কোর্সটি শেষ করতে পারেননি। কারণ ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা রয়েছে তাদের দাবি দেওয়া আদায় লোককে ধর্মঘট ঘোষণা করলে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওই ধর্মঘটের প্রতি সমর্থন জানান।

বিবাহিত জীবনঃ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র ১৮ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বেগম ফজিলাতুন্নেছার সাথে বিয়ে হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫ জন সন্তান ছিল। তাদের মধ্যে দুইজন মেয়ে এবং তিনজন ছেলে। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এবং তিনজন ছেলে ছিল শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল।

বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনঃ

বলতে গেলে ভালো মানুষ শেখ মুজিবুর রহমানের ছোটবেলা থেকেই রাজনীতির হাতে খড়ি হয়েছে। কারণ তিনি ছোটবেলা থেকে গরিব দুঃখীর পাশে দাঁড়িয়েছেন। অন্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে। এই প্রতিবাদ করতে যেয়ে তিনি অষ্টম শ্রেণীতে থাকাকালে জেলে গিয়েছিলেন।  তিনি যখন ইসলামিয়া কলেজে অধ্যায়ন করছিলেন তখন হোসেন শহীদ সোহরা ওয়ারদির সন্নিধ্যে আসেন। 

এখান থেকেই তিনি রাজনৈতিক জীবনের দিকে ক্রমশ এগিয়ে যেতে থাকেন। তিনি ছাত্র জীবনে থাকা অবস্থায় অনেক সংগ্রাম এবং আন্দোলন করেছেন। এরপর থেকে রাজনৈতিক জীবনী তার কাছে প্রধান হয়ে দাঁড়ায়। এরপরেই তিনি বঙ্গবন্ধু উপাধি পেয়েছিলেন। কে রাজনৈতিক জীবনে আসার পরে তিনি বাঙালির নেতা হিসেবে পরিচিত হন। তার ৭ই মার্চের ভাষায় বাঙালির মনে যখন জাদুর ছোঁয়ার মত কাজ করে, তখন বাঙালিরা যুদ্ধের জন্য মাঠে নেমে পড়েন। আর এরপরে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।

মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুঃ

একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য প্রয়োজন হয় একটি আদর্শ নেতার। তেমনি আমাদের বাংলাদেশের আদর্শ নেতা হলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বয়ং বাংলার সৌভাগ্য যে, বাংলাদেশের মাটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্ম নিয়েছিল। তার নেতৃত্বে সকল বাঙ্গালীরা প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছেন। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই ৭ই মার্চের ভাষণ বাঙ্গালীদের মনে যেন জাদুর ছোড়ার মত ছোঁয়া দিয়েছিল। বাঙালিরাও সেই ভাষণ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের জন্য মাঠে নেমে পড়েছিল। ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে অবশেষে স্বাধীন বাংলাকে আমরা ফিরে পেয়েছি। তাই অবশ্যই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানকে আমরা সম্মান করি।

বঙ্গবন্ধুর দেশের জন্য আত্মত্যাগঃ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন যে বিজয়ের আলোক বার্তা জাতির পিতা আমাদের হাতে একটি মশাল তুলে দিয়ে এগিয়েছেন তোমরা কি জানো সে মশাল কি সে মশাল হলো আমাদের বাংলার মানুষ। হৃদয় জুড়ে ছিল আমাদের বাংলার মানুষ। ছোটবেলা থেকেইমানুষদের সাহায্য করতে অনেক পছন্দ করতেন। কেউ যদি বিপদে পড়েন তিনি সবার আগে ঝাপিয়ে পড়েন। তার এ উদারতার জবাব হয় না।

 এমনকি তিনি রাজনৈতিক জীবনে যাওয়ার পরও বাংলার মানুষদের জন্য লড়াই করে গেছেন। এমনকি অনেকবার তাকে জেলেও যেতে হয়েছে। জেলে যাওয়ার পরেও কিন্তু তিনি দমে থাকেননি। তিনি লড়ে গেছেন বাংলার মানুষের জন্য বাংলাদেশের জন্য। তিনি অনেক বছর বাঁচতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই স্বার্থপরেরা তাকে বাঁচতে দেয়নি। তাই তাকে অকালে মৃত্যুবরণ করতে হয়। কিন্তু মৃত্যুবরণ করার পরেও শত শত বছরে তিনি বাঙ্গালীদের মধ্যে বেঁচে থাকবন। এমনকি এখনো তিনি আমাদের বাঙ্গালীদের মধ্যে বেঁচে আছেন।

শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুঃ

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বাংলার জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যু হয়। কিছু দেশে ও বিদেশীদের চক্রান্তের ষড়যন্ত্রে পড়ে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অকালে চলে যেতে হয়েছে। শুধু সেদিন তাকে একাই নয় বরং তার পরিবার সহ সবাইকে মেরে ফেলা হয়েছিল। বাঙ্গালীদের জীবনের একটি কালো অধ্যায়। টুঙ্গিপাড়া গ্রামের বাড়িতে কবর দেওয়া হয়।

উপসংহারঃবঙ্গবন্ধুর জীবনী বাংলা রচনা 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের বাংলার জাতির পিতা। তিনি আজ আমাদের মধ্যে না থাকলেও তার অবদান চিরকাল আমাদের মাঝে থেকে যাবে। তিনি অনেক দিন বাঁচতে চেয়েছিলেন কিন্তু তিনি বাঁচতে পারেননি সেই ষড়যন্ত্রকারীদের জন্য। কিন্তু সব থেকে বড় সৌভাগ্যের ব্যাপার এই যে চিরকাল তিনি আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন। তার এই আমরা কখনো ভুলতে পারবো না। তাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই আত্মত্যাগ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের দেশের জন্য কাজ করতে হবে।

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url