রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ pdf - ২০২৪ সালের রোজার ঈদ কত তারিখে
প্রিয় পাঠক এখন চলতেছে রমজান মাস। আত্ম সংযমের মাস, ১১ মাস পর পর এই রমজান মাস আসে। এই রমজান মাসের গুরুত্ব আমাদের মুসলিম জাতির কাছে অপসিম। এই পবিত্র রমজান মাসে কোরআন নাজিল হয়েছিল আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপরে। এই রমজান মাসে রোজা আমাদের জন্য ফরজ করে দেয়া হয়েছে।
ভূমিকা - রমজানের ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত
আমাদের প্রত্যেক মুসলমানের জন্যই রোজা রাখা ফরজ। রমজান মাস পুরোটাই মুসলমানদের কাছে একটি ভাগ্যবান মাস। কারণ এটি ইবাদতের সবথেকে ভালো মাস বলে বিবেচিত হয়। আর এ মাসের রয়েছে শবে কদরের রাত। যেটি মাত্র বছরে ১ বার এসে থাকে। এটি বৎসরে একবার আসলেও মুসলমানদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত। কারণ এই দিনে সারারাত জেগে ইবাদত করার ফলে হাজার মাসের ইবাদত করার সমান সওয়াব পাওয়া যায়।
শুধু কদরের রাতের জন্য না এই মাসে রোজা রাখার জন্য বিশেষ কিছু উপহারের ব্যবস্থা করে রেখেছেন পরকালে। যেহেতু প্রত্যেক মুসলমানের জন্য রোজা রাখা ফরজ তাই রোজা কি কি কারণে ভাঙ্গা যেতে পারে সেইসব বিষয়েও জানতে হবে। যেসব কারণে রোজা ভেঙে যায়, কিন্তু আসলে সেসব কারণে রোজা ভাঙ্গে না। এগুলোর কারণে অনেক সময় অনেকেই বিভ্রান্তিতে পড়ে যান। তাই এসব বিষয়ে আগে থেকে জানা প্রয়োজন যেন পরবর্তীতে কোন ধরনের সমস্যা না হয়।
২০২৪ সালের রোজার ঈদ কত তারিখেঃ
প্রিয় পাঠক আপনি কি জানেন ২০২৪ সালের রোজার ঈদ কত তারিখে অনুষ্ঠিত হবে। যদি না জেনে থাকেন তাহলে আজকের এই পর্বের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন ২০২৪ সালের রোজার ঈদ কত তারিখে অনুষ্ঠিত হবে। তাহলে চলুন জেনে নিই ২০২৪ সালের রোজার ঈদ কত তারিখে হবে।
রোজার ঈদ নির্ভর করা সম্পূর্ণ চাঁদ দেখার ওপরে। প্রতি বছর যে শুধু, ৩০ টা রোজায় হয় তা কিন্তু নয় বরং মাঝে মাঝে ২৯ টা রোজাও হয়ে থাকে। তবে সে অনুযায়ী এ বছর ২৯ টা রোজা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর যদি ২৯ টা রোজা হয় তাহলে এই বছর ঈদুল ফিতর ১১ই এপ্রিল হতে পারে। তবে এই সময় পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু ক্যালেন্ডার অনুসারে এবছর ১১ই এপ্রিল ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা যাচ্ছে।
রমজান মাস কেন গুরুত্বপূর্ণ।রমজানের ফজিলত ও গুরুত্ব
প্রতিবছর এই রমজান মাসটা আমাদের মুসলিমদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। কারণ এ মাসে আল্লাহ তায়ালা আমাদের রহমত করেন। এ মাসটি ইবাদতের সবথেকে ভালো মাস। প্রতিটা মুসলিমের জন্য এই মাসে রোজা রাখা ফরজ সেটি নারী কিংবা পুরুষ হোক। রোজা মানে হলো পানাহার থাকা অর্থাৎ সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত না খেয়ে থাকাকেই রোজা বলা হয়।
অন্যান্য রাতের তুলনায় এই রাত্রি অনেক গুরুত্বপূর্ণ মুসলমানদের কাছে। কারণ মহানবী সাঃ এর আগের মানুষেরা অনেকদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতো। তারা তাদের সারা জীবন ধরে আল্লাহ তাআলার ইবাদত পালন করতো এবং আল্লাহকে খুশি করত। কিন্তু মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর উম্মতের বেঁচে থাকার সময় অনেক কম তাদের তুলনায়।
আল্লাহ তায়ালা তাদের জন্য একটি বিশেষ দিনের কথা বলেছেন, যেদিনে সারারাত জেগে যদি ইবাদত করা যায় এবং আল্লাহ তাআলার কাছে মাফ চাওয়া যায়। তাহলে আল্লাহ তা'আলা তাঁর আগামী এক হাজার বছরের নামাজ পড়ার সমান সওয়াব দিয়ে দেয় এবং তার পূর্ববর্তী পাপ গুলোকে মাফ করে দেন। এইসব মিলিয়ে রমজান মাস মুসলমানদের কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস।
রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ pdf
তবে আমরাও তো মানুষ শারীরিক কিছু সমস্যা, অসুস্থতা কিংবা দুর্ঘটনা জনিত কিছু কারণে রোজা ভেঙে যায়। কিন্তু কি কি কারণে যে রোজা ভেঙে যায় এটি অনেকে হয়তো ভালোভাবে জানে না। প্রত্যেক মুসল্লির জন্যই যেহেতু রোজা রাখা ফরজ তাই তাদেরকে রোজা ভাঙার কারণ সম্পর্কে জানতে হবে। এছাড়াও আরো যেসব কারণ রয়েছে যেগুলো করলেও রোজা ভাঙবে না সেগুলো সম্পর্কেও জানতে হবে, কারণ রোজা ভাঙা নিয়ে অনেকের মধ্যে ভুল ধারণার প্রচলিত রয়েছে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের ভারসাম্য রক্ষা করে রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। যেন রোজা রাখার কারণ রোজাদারের শারীরিক কোন ক্ষতি না হয়। আবার সে যেন রোজা বিনষ্টকারী কোন কাজেও লিপ্ত না হয়। এ কারণে রোজা বিনষ্টকারী বিষয়গুলোকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। কারণ রোজা বিভিন্ন কারণে ভঙ্গ হয়ে থাকে। এ কারণে রোজা ভঙ্গের বিষয়গুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তাহলে চলুন জেনে নেই রোজা ভঙ্গের কারণগুলো।
রোজা ভাঙ্গার মূল সাতটি কারণঃ
১।ইচ্ছাকৃতভাবে কোন কিছু খাওয়া
২।ইচ্ছাকৃতভাবে কোন কিছু পান করা
৩।শরীর থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়া।রোজা অবস্থায় শরীর থেকে রক্ত বের হলে
৪।রোজা থাকা অবস্থায় সহবাস করা
৫।মুখ ভর্তি বমি হওয়া।অনিচ্ছায় বমি হলে রোজা ভেঙে যাবে কি
৬। হাইজ ও নিফাসের রক্ত নির্গত হওয়া।মেয়েদের রোজা ভঙ্গের কারণ ও করণীয়
৭।ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহারের স্থলাভিষিক্ত কোন কিছু গ্রহণ করা
এটা দুইটি বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করেঃ
১। যদি রোজাদারের শরীরে রক্ত পুশ করা হয়। যেমনঃ আহত হয়ে রক্তক্ষরণের কারণে কারো শরীরে যদি রক্ত পুশ করা হয়, তাহলে সে রাতে রোজা ভেঙে যাবে। যেহেতু পানাহারের উদ্দেশ্য হচ্ছে রক্ত তৈরি করা।
২। খাদ্যের বিকল্প হিসেবে ইনজেকশন পুশ করা। কারণ এমন ইঞ্জেকশন নিলে পানাহারের প্রয়োজন হয় না। তবে যেসব ইনজেকশন পানাহারের স্থলাভিষিক্ত নয় বরং চিকিৎসার জন্য দেওয়া হয়, উদাহরণস্বরূপ ইনসুলিন, পেনিসিলিন কিংবা টিকা এগুলোর কারণে রোজা ভঙ্গ হবে না। তাই এসব দেওয়া হোক কিংবা সে রাতে দেওয়া হোক রোজা ভঙ্গ হবে না।
তবে সাবধানতা স্বরূপ এসব এনজেকশন রাতে নেওয়ায় ভালো। কিডনির ডায়ালাইসিসের ক্ষেত্রে রোগীর শরীর থেকে রক্ত বের করে সে রক্ত পরিশোধন করে কিছু কেমিক্যাল ও খাদ্য উপাদান যেমনঃ সুগার ও লবণ ইত্যাদি যোগ করে তার পুনরায় শরীরটা পুশ করা হয় এতে রোজা ভেঙে যাবে।
যেসব কারণে রোজা ভাঙবে নাঃ
উপরোক্ত কারণগুলো ছাড়াও সমাজে কিছু প্রচলিত কারণ রয়েছে যেসব কারণে ধরা হয় রোজা ভেঙে যাবে। তবে সেগুলো শুধু ভুল ধারণা। এইসব ব্যাপারগুলোকে এড়িয়ে চলতে হবে। আর এইসব কারণে তিনি নিজে যেমন কষ্ট ভোগ করেন তেমনি চারিপাশের মানুষকেও বিরম্বনায় ফেলেন। যেমন ধরুনঃ অনেকেই বলেন যে রোজা রাখা অবস্থায় দাঁত ব্রাশ করা যাবে না, কিন্তু দীর্ঘ সময় দাঁত ব্রাশ না করার ফলে মুখে এক ধরনের সৃষ্টি হয় তাতে কথা বলার সময় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।
কিন্তু এই গন্ধের বিষয়ে অনেক রোজাদারকে বলতে শোনা যায় যে, রোজাদার মুখের
দুর্গন্ধ ভালো বা রোজাদার ব্যক্তির মুখের দুর্গন্ধ বিরক্ত হওয়া যাবে না। আসলে
দাঁত ব্রাশ করলে রোজা ভাঙ্গে না। তবে পেস্ট গলায় গেলে রোজা মাকরুহ হবে। এটা
সেহরি খাওয়ার পর পরে করে নেওয়া উত্তম। তাছাড়া রোজা থাকা অবস্থায় মিসওয়াক
করা সুন্নত। এমনকি কাঁচা ডাল দ্বারা মেসওয়াক করা মাকরুহ নয়। এগুলো ছাড়াও
আরো কারণ রয়েছে যেসব কারণে মানুষেরা মনে করেন যে রোজা ভাঙ্গে কিন্তু আসলে তো
সেসব কারণে রোজা ভাঙ্গে না।
- অ্যানিমা ব্যবহার করা
- চোখে কিংবা কানে ড্রপ দেওয়া
- দাঁত তোলা
- ভুল করে পানাহার করলে রোজা ভাঙবে না।
- কোন ক্ষতস্থানের চিকিৎসা করা এসব কারণে রোজা ভাঙ্গে না।
- হাঁপানি রোগের চিকিৎসা কিংবা অন্য কোন রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে জিহ্ববা নিচে যে ট্যাবলেট রাখা হয় সেটা থেকে নির্গত কোন পদার্থ বলার ভিতরে চলে না গেলে রোজা ভাঙবে না।
- মেডিকেল টেস্ট এর জন্য সাপোজিটার, লোশন, কলপোস্কোপ, হাতের আঙ্গুল ইত্যাদি শরীরে প্রবেশ করানো হলে রোজা ভাঙবে না। পেকুলাম বা আই ইউ ভি বা এজাতীয় কোন মেডিকেল যন্ত্রপাতি জলের ভিতর প্রবেশ করানো হলে রোজা ভাঙবে না।
পাঠকের মন্তব্য। রোজা রাখলে কি কি উপকারিতা হয়
প্রিয় পাঠক আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত রমজান মাসে রোজা রাখা। রোজা রাখলে যে শুধু পরকালই উপকার হবে তা না রোজা রাখার ফলে আমাদের দেহের বিষাক্ত ব্যাকটেরিয়া গুলো ধ্বংস হয়ে যায় এবং আমাদের শরীরে জমে থাকা ক্যান্সারের কোসগুলো নষ্ট হয়ে যায়। এবং দেহে জমে থাকা সমস্ত রকম খারাপ কোলেস্টরেল কমে যায়। এবং পাকস্থলী সুন্দরভাবে কাজ করতে পারে।
আজকের পর্বের মাধ্যমে আপনি নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ এবং ২০১৪ সালে কবে ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হবে সেই সম্পর্কে। আজকের এই আর্টিকেল থেকে যদি আপনি কোন ভাবে উপকৃত হন তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url