শবে বরাত কি - শবে বরাতের ফজিলত
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর উম্মতের জন্য আল্লাহ তায়ালা বিশেষ কিছু সুযোগ সুবিধা করে দিয়েছেন। তারা চাইলে খুব সহজেই আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে ক্ষমা লাভ করতে পারবে। আল্লাহ তাআলা তাদের জীবিত জীবন কম করে দিলেও। আগের মানুষ যেভাবে ১০০,২০০ বছর এবাদত করত।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর উম্মতেরাও এক রাতের মধ্যে সেই সব ইবাদত করতে পারবে। এজন্য আল্লাহতালা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর উম্মতের জন্য বেশ কিছু বিশেষ রজনী দান করেছেন। এসব রজনীতে তারা এবাদত করে আল্লাহ তাআলার কাছ থেকে ক্ষমা পান। তেমনি এক ধরনের রাত হল লাইলাতুল বরাত। এই দিনটিও মুসলমানদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন।
শবে বরাত কিঃ
শবে বরাত একটি ফার্সি শব্দ আর এই কারণে এই শব্দে আরবিতে কোন ব্যবহার নেই। তবে ইসলামের শাবান মাসের গুরুত্ব অনেক বেশি। একটি হাদিসে বলা হয়েছে যে,
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলা মধ্য শাবানের রাতে
আত্মপ্রকাশ করেন এবং তার সকল সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন। শুধুমাত্র মুশরিক ও
হিংসুক ব্যতীত।
শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাত হিজরি শাবান মাসের ১৪ ও ১৫ তারিখের মধ্যবর্তী রাতে পালন করা হয়। এটি মুসলমানদের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত। আর এই রাতকে সবাই শবে বরাত হিসেবে চেনে। ইসলামী বিশ্বাস মতে, এই রাতে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদেরকে বিশেষভাবে ক্ষমা করে দেন। এ কারণে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় মুসলমান এ রাতে অনেক নফল ইবাদত করে। এমনকি রোজাও রাখেন।
এমনকি অনেক অনেক জায়গায় পূর্বে যে আত্মীয়স্বজনেরা মারা গেছে তাদের জন্য,
আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য বিশেষ আয়োজন করা হয়ে থাকে। এটির আবার অনেকেি
বিরোধিতা করেন। ই এই সবকিছু মিলেই শবেবরাত মুসলমানদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ
দিন।
শুধু শবে বরাত বলে, সারা রাত জেগে নফল নামাজ পড়তে হবে। আর বাকি দিনগুলোতে পাঁচ
ওয়াক্ত নামাজ পড়বে না। এমন করলে কিনতে হবে না। এগুলো নফল নামাজ। আর যে
নামাজগুলো আসল সেগুলো যদি না করি, তাহলে এই নামাজের কোন মূল্য নেই। তাই সঠিকভাবে
আল্লাহর ইবাদত পালন করতে হবে।
২০২৪ সালের শবে বরাত কবেঃ
ইসলামে দিন শুরু হয় সন্ধ্যার পর অর্থাৎ সূর্যাস্ত হওয়ার পর ইসলামিক দিনের
শুরু হয়। আর যেটা আমাদের ইংলিশ ক্যালেন্ডার রাত বারোটার পর পরের দিন আসে। এই
অনুযায়ী সাবান মাসের ১৪ তারিখে সূর্যাস্তের পর শবে বরাত পালন করা হয়।
আর ২০২৪ সালের শাবান মাস শুরু হবে ১২ই ফেব্রুয়ারি। আর শবে বরাতের রাতটি ১৪
এবং ১৫ তারিখের মাঝামাঝি সময়ে হবে। সেই অনুযায়ী ২০২৪ সালে শবে বরাতের রাত্রি হল
২৫ শে ফেব্রুয়ারির রবিবারের রাত। আর যারা নফল রোজা রাখতে চান তারা এর রাতের
পর রোজা রাখতে পারেন। মানে ২৬ তারিখে রোজা রাখতে হবে।
শবে বরাতের ফজিলতঃ
শবেবরাতে আল্লাহর ইবাদত এবং রোজা রাখার জন্য বেশ কিছু ফজিলত রয়েছে। আর এই
শবে বরাতের রাত একজন মুসলমানের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত। আর এই
গুরুত্বপূর্ণ রাত হওয়ার পাশাপাশি এর ফজিলতও রয়েছে।
শবে বরাতের এই ফজিলতটি একটি হাদিসে স্পষ্ট ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, যেখানে
বলা হয়েছে যে আল্লাহ তা'আলা ঘোষণা করেছিলেন যে যারা আল্লাহ তায়ালাকে বিশ্বাস
করে তাদের জন্য একটি লাইলাতুল বরাতের জন্য আকাশের ৩০০ টি দরজা খুলে দেওয়া
হবে।
এ রাতে অনেকে রাত জেগে নফল নামাজ পড়েন, পরের দিন রোজা রাখেন। রাতে নফল নামাজ
পড়া পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের জিকির তওবা করা হয় এবং কোরআন তেলোয়াত করে
থাকেন অনেকে। ছেলেরাও জামাতের সাথে নফল নামাজগুলো পড়ে থাকে। আর মেয়েরা বাড়িতে
বসে এ নফল ইবাদত গুলো করেন।
শবে বরাতের কেন সৃষ্টি হলঃ
শবে বরাত একটি ফার্সি শব্দ। শবে অর্থরাত এবং বরাত অর্থ ভাগ্য। অর্থাৎ শবে বরাত মুসলমানদের কাছে একটি ভাগ্যময় রাত। এ রাত্রিকে পালন করবে মুসলিম উম্মতেরা। মানুষদের সৃষ্টি করার আগে আল্লাহতালা তার ফেরেশতাদের ডেকে বললেন, আমি মানুষ সৃষ্টি করব।
তখন ফেরেশতারা জবাবে বলল, আমরাতো আপনার এবাদত বন্দেগী করছি তাহলে মানুষ সৃষ্টি
করার কি প্রয়োজন। আর মানুষ যদি সৃষ্টি করেন তারা পৃথিবীতে যে, মারামারি
ঝগড়া-বিবাদ এসব সৃষ্টি করবে। তবুও আল্লাহতালা ১৮ হাজার মাখলুকাতের মধ্যে মানুষকে
সর্বশ্রেষ্ঠ মাখলুকাত হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে
সৃষ্টি করেছেন। আশরাফুল মাখলুকাতের অর্থ হলো সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ জীব।
আল্লাহ তায়ালা যখন মানুষ সৃষ্টি করেছিলেন, তখন মানুষ অনেক সময় পর্যন্ত জীবিত থাকতো। কিন্তু আল্লাহ তাআলা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর উম্মতদের বেঁচে থাকার বয়স কম করে দিয়েছেন। আগেকার মানুষ ১০০ থেকে ২০০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারতো। কিন্তু মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর উম্মত শুধুমাত্র ৭০অথবা ৮০ বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকে।
খুব বেশি হলে ১০০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। কিন্তু এখন প্রশ্ন হল, আগের যুগের
মানুষেরা তো ১০০ থেকে ২০০ বছর পর্যন্ত বেঁচে ছিল। তারা তাদের পুরো জীবন জুড়ে
আল্লাহর এবাদত করেছেন এবং আল্লাহ তাআলার মন সন্তুষ্ট করেছেন। তাহলে মহানবী
সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর উম্মতেরা, কিভাবে তাদের সমান ইবাদত করে আল্লাহ
তায়ালার মন সন্তুষ্ট করবেন।
এই সমস্যা সমাধানের জন্য আল্লাহতালা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর উম্মতদের জন্য কয়েকটি বিশেষ রজনী দান করেছেন। এ সকল রজনীতে ইবাদত করলে আগের যুগের মানুষের মতো পূর্ণ এবাদত করতে পারবে। তাই এসব রজনী মুসলমানদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই রজনীগুলোর মধ্যে শবে বরাত অন্যতম।
রোজার শবে কদর রজনীর পরে, এই শাবান মাসের শবে বরাত রজনী আসে এবং এই
শবেবরাতের কিছুদিন পর থেকেই রোজার শুরু হয়। এছাড়াও এমনিতে ইবাদতের জন্য শাবান
মাস অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি রোজার পূর্ববর্তী মাস। এ সময় মহানবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোজার জন্য প্রস্তুতি নিতেন।
শবে বরাত সম্পর্কিত কিছু হাদিসঃ
শবে বরাত সম্পর্কিত বেশ কিছু হাদিস রয়েছে। সেগুলোর থেকে আমার জানতে পারি যে, শবে
বরাতের রাত মুসলমানদের জন্য ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত।
- এ রাত্রে আল্লাহ তায়ালার বান্দারা তার কাছ থেকে বিশেষ ক্ষমা লাভ করবে বলে হাদিসে বলা হয়েছে। অন্য একটি হাদিসে এও বলা হয়েছে যে, এ রাতে আল্লাহ তা'আলা তাঁর বান্দাদের দিকে নেক নজরে তাকান এবং তাকে মাফ করে দেন।
- আবার অন্য একটি হাদিসে বলা হয়েছে যে, শবে বরাতের রাতে যদি কোন ব্যক্তি সারারাত জেগে নফল নামাজ পড়ে এবং আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা চান। তাহলে আল্লাহ তাআলা তার ১০০ বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন। শুধুমাত্র যারা মুনাফিক এবং হিংসুক ব্যাতিত।
- আবার অন্য একটি হাদিসে বলা হয়েছে যে, শবে বরাতে রাত্রে অর্থাৎ ১৫ এর শাবানের রাতে, সারারাত জেগে নামাজ পড়ার পর পরের দিন রোজা রাখতে। কারন এ রাতের পর আল্লাহতালা অনেক নিচের আসমানে চলে আসেন এবং তিনি বলেন, কে আছো যে আমার কাছে ক্ষমা চাও। আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো। কে আছ যে রিযিক প্রার্থনা করছ, আমি তাকে রিজিক দেবো। কে আছ বিপদগ্রস্ত, আমি তার বিপদ দূর করে দেব।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url