রক্তস্বল্পতার সমস্যা দূর করার উপায়
প্রতিনিয়ত রক্তস্বল্পতার কারণে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। কারণ শুরুর দিকে রক্ত সল্পতা খুবই স্বাভাবিক মনে হলেও, যখনই সমস্যা আরো বৃদ্ধি পাবে তখন ধীরে ধীরে এটা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করবে। তাই আগে থেকে রক্তস্বল্পতা লক্ষণ গুলো সম্পর্কে জানতে হবে। লক্ষণগুলো জানার পর কিভাবে এই রক্তস্বল্পতা দূর করা যায় সেগুলো জানতে হবে।
এগুলো জানার পাশাপাশি অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। আপনার আসলে রক্তস্বল্পতা হয়েছে কিনা সেটি টেস্ট করে দেখতে পারেন। টেস্ট করার পর ডাক্তার আপনাকে যে নির্দেশ অনুযায়ী চলতে বলবে সে নির্দেশ অনুযায়ী চলতে পারেন। এরই ধারাবাহিকতায় আজকে আমরা আলোচনা করব রক্তসল্পতার সমস্যা দূর করার উপায় সম্পর্কে জানতে হলে পুরো পর্বটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ভূমিকা
আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে রক্তস্বল্পতা দূর করার উপায়। রক্তস্বল্পতা হলে কি কি সমস্যা দেখা দেয়, রক্তস্বল্পতা হওয়ার লক্ষণ গুলো কি কি।এছাড়া আপনার যদি খুব বেশি পরিমাণে সমস্যা না হয়। তখন নিচে দেওয়া এই টিপস গুলোকে ফলো করতে পারেন। এগুলোর মাধ্যমে আপনার রক্তস্বল্পতা অনেকটাই দূর হয়ে যাবে।
আর এমনিতেও এখানে যে খাবারগুলোর কথা বলা হয়েছে সেগুলো, ডাক্তারেরা খাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আপনারা শুরু থেকে লক্ষণ গুলো জানার পর এগুলো যদি খেতে থাকেন তাহলে, রক্তস্বল্পতার সমস্যা একেবারেই কমে যাবে।
রক্তস্বল্পতার হওয়ার লক্ষণগুলো কিভাবে বুঝবঃ
আমরা হয়তো সকলেই জানি যে আয়রন আমাদের শরীরে রক্তের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কিন্তু যখন আমাদের শরীরে এই আয়রনের ঘাটতি দেখা যায় তখন, আমাদের শরীরের রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। শুধু আয়রন নয় আরো কিছু পুষ্টি উপাদান রয়েছে যেগুলোর অভাবের কারণে রক্তস্বল্পতা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এছাড়াও যখন আমাদের শরীর থেকে অনেক রক্ত বের হয়ে যায় তখন ও রক্তস্বল্পতার
সমস্যা দেখা দিতে পারে। এখন কথা হলো আমাদের শরীরে কোথাও কাটা কিংবা অন্য কোন
কারণে চলে রক্ত বের হয়ে যায় তাহলে তো, বোঝা যাবে আমাদের শরীরের রক্তস্বল্পতা
দেখা যেতে পারে। কিন্তু যখন আমাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি কিংবা অন্য কোন পোস্ট
উপাদানের ঘাটতি দেখা দিবে, যার কারণে আমাদের রক্তস্বল্পতা হতে পারে তখন আমরা কি
করে বুঝবো।
আমাদের শরীরের রক্তস্বল্পতা দেখা দিলে, বেশ কিছু লক্ষণেরও দেখা পাওয়া যায়। আমরা সেগুলোকে যদি খেয়াল করি তাহলে বুঝতে পারবো যে আসলে আমাদের রক্তস্বল্পতা সমস্যা হয়েছে। রক্তস্বল্পতা হলে ঘরে বসে থাকা যাবে না, কারণ রক্তস্বল্প দরকার কারণে অনেকের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই আমাদের আগে থেকেই বুঝতে হবে যে, আমাদের শরীরের রক্তস্বল্পতা লক্ষণগুলো আছে কিনা। এর ফলে আমরা আগে থেকে সচেতন হয়ে যেতে পারবো এবং রক্তস্বল্পতা দূর করার জন্য। যা যা করণীয় সেগুলো করব।
দুর্বল বোধ করা
রক্তস্বল্পতা হওয়ার লক্ষণ গুলোর মধ্যে দুর্বল বোধ করার লক্ষণ রয়েছে। কারণ আমাদের শরীরে যখন রক্তের স্বল্পতা দেখা যাবে আমাদের শরীর অটোমেটিক ভাবে দুর্বল হয়ে যাবে। রক্তের মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রতিটা অঙ্গে অক্সিজেন পৌঁছায়। রক্তস্বল্পতার কারণে ঠিকমতো সব জায়গাতে অক্সিজেন পৌঁছাতে পারে না। এর ফলে আমরা দুর্বল বোধ করতে থাকে।
যেমনঃ আগে যেসব ভারি কাজ করতে পারতেন সেইসব ভারি কাজ বর্তমানে করতে পারছেন না।
মাথা ঘোরার মত সমস্যা ইত্যাদি আরও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা রয়েছে যেগুলো শরীর
দুর্বল হওয়ার পর দেখা যায়। তাই যখন দেখছেন অতিরিক্ত পরিমাণে আপনার শরীর দুর্বল
হয়ে পড়ছে এটি কোন স্বাভাবিক ব্যাপার নয়। দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
ক্লান্তি বোধ করা
দুর্বলতার পাশাপাশি একটু কাজ করেই ক্লান্তি বোধ করার রক্তস্বল্পতার অন্যতম একটি
লক্ষণ। কারণ আমাদের শরীর যখন দুর্বল থাকবে তখন একটু কাজ করে আমরা ক্লান্তি বোধ
করতে থাকবো। যখন আমাদের শরীরে রক্তস্বল্পতা দেখা যায় তখন অতিরিক্ত পরিমাণে ঘুম
আসে। এটি হয়তো অনেকেই জানে না। আগের তুলনায় যদি অতিরিক্ত পরিমাণে ঘুম আসে তাহলে
বুঝবেন আপনার শরীর অনেক দুর্বল হয়ে গেছে। তখন আপনাকে দুর্বলতা কমানোর জন্য
পুষ্টিকর খাবার বেশি বেশি খেতে হবে।
মাথা ব্যথা
এ লক্ষণটি অনেক স্বাভাবিক। কারণ প্রায় আমাদের বিভিন্ন কারণে মাথাব্যথা হয়ে
থাকে। তাই মাথাব্যথা যে রক্তস্বল্পতার লক্ষণ সেটি আমরা বুঝতে পারি না। আমাদের
বিভিন্ন কারণে মাথা ব্যথার সমস্যা হতে পারে, তবে কোন কারণ ছাড়া যদি আপনার হঠাৎ
করে মাথা ব্যথার সমস্যা হতে থাকে তখন সেটির রক্তস্বল্পতার জন্য হতে পারে। কারণ
মস্তিষ্ক পর্যন্ত রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন পৌঁছাতে পারে না। তাই তখন মাথা
ব্যথার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
হাত পায়ে কাঁপনির সৃষ্টি হওয়া
এরকম অনেকেরই হয়েছে যে, আপনি হাটছেন কিংবা শুয়ে আছেন সেই সময়ে আপনার হাত অথবা
পা হালকা করে কেঁপে উঠছে। এ কেঁপে উঠার লক্ষণটা কিন্তু রক্তস্বল্পতার। যখন আমাদের
শরীরের রক্তস্বল্পতা কম হয়ে থাকে তখন এ ধরনের সমস্যা প্রায়ই দেখা যায়।
শুধুমাত্র একটা লক্ষণ এর উপর ভিত্তি করে, রক্তস্বল্পতা হয়েছে তা নির্ধারণ করা
যায় না। যখন এই সব ধরনের সমস্যা একই সাথে হতে থাকে তখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
আর যদি ভিন্ন ভিন্ন ভাবে এই লক্ষণ গুলো দেখা যায় তাহলে, বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের
পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। যেমনঃ বিভিন্ন ধরনের ফল, সবজি, ছুপ ইত্যাদি আরও
বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর খাবার। এগুলো খাওয়ার মাধ্যমে আপনার সমস্যা দূর হয়ে
যাবে।
রক্তস্বল্পতা দূর করার উপায়ঃ
আমরা এতক্ষন জানলাম, আমাদের রক্তস্বল্পতা হয়েছে কিনা তা বোঝার লক্ষণ গুলো সম্পর্কে। এখন কথা হল রক্তস্বল্পতা কিভাবে দূর করা যায়। এটা অবশ্যই জানতে হবে। কারণ আমাদের মধ্যে অনেকেই জানে না যে সামান্য রক্তস্বল্পতার কারণে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এটি একবারে হয় না। আপনি যখন রক্ত সল্পতার লক্ষণগুলো বুঝতে পারবেন না এবং স্বাভাবিকভাবে দিন কাটাবেন।
তখন ধীরে ধীরে আপনার শরীরের অবস্থা আরো খারাপ হতে থাকবে। একটা সময় গিয়ে যখন আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার রক্তস্বল্পতা হয়েছে তখন অনেকটা দেরি হয়ে যাবে। তাই আগে থেকে লক্ষণ গুলো জানা অনেক প্রয়োজনীয়। লক্ষণগুলো জানার পর, আমাদের অবশ্যই জানতে হবে কিভাবে আমরা রক্তস্বল্পতা দূর করতে পারবো। তাহলে চলুন জেনে নিই রক্তস্বল্পতা দূর করার কিছু উপায়।
বিট্রুথ
এ ফলটি খাওয়ার মাধ্যমে আপনারা, আপনাদের রক্ত সল্পতার সমস্যা অনেক সহজেই কামাতে পারবেন। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আইরন। আর আমরা হয়তো সকলেই জানি যে আয়রন আমাদের রক্তস্বল্পতা কমাতে অনেক সাহায্য করে। আর এটি আমাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতেও সাহায্য করে।
আরে হিমোগ্লোবিন আমাদের শরীরে রক্ত উৎপাদন করতে সাহায্য করে। তাই আপনারা চাইলে বিট্রুথ এর জুস করে খেতে পারেন। এটি রক্তস্বল্পতার সমস্যা কমাতে অনেক সাহায্য করবে। বিট্রুথ ভালো করে ব্লেন্ড করে, এতে কিছু পরিমাণে পানি মিক্স করে ছেঁকে নিয়ে খেতে পারেন। এটা আপনার রক্তস্বল্পতা সমস্যা কমাতে অনেক সাহায্য করবে। আপনি যেভাবে খান না কেন, জুস অথবা সেদ্ধ করে দুটি আপনার জন্য অনেক উপকারী।
রক্তস্বল্পতা দূর করতে পালং শাক
পালং শাক এমন এক ধরনের শাক, যেটিতে প্রচুর পরিমাণে আইরন রয়েছে। আমাদের শরীরে যে পরিমাণে আয়রন এর প্রয়োজন হয়, তার অনেকাংশই এ পালং শাক পূরণ করতে পারবে। তাই আপনারা যদি রক্তস্বল্পতা সমস্যা হয়ে থাকে অবশ্যই পালং শাক খাওয়ার অভ্যাস করুন। এটি আপনার রক্তস্বল্পতা সমস্যা কমাতে অনেক সাহায্য করবে।
শুধু তাই নয় এতে আরো বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ রয়েছে। সেগুলো আপনার রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করবে। তার পাশাপাশি লোহিত রক্তকণিকা বাড়াতে সাহায্য করবে। আমরা হয়তো সকলেই জানি যে লোহিত রক্ত কণিকার অভাবে আমাদের শরীরের রক্তস্বল্পতা সমস্যা দেখা যায়।
তাই যদি এ লোহিত রক্তকণিকা মাত্রাটি বাড়ানো যায় তাহলে আমাদের শরীরের রক্তশক্ত
সমস্যা আমি এটাই কমে যাবে। আপনি যেভাবে খান না কেন সবগুলো আপনার রক্তস্বল্পতা
কমাতে অনেক সাহায্য করবে। আপনি চাইলে ভাজি হিসেবে খেতে পারেন কিংবা জুস করে খেতে
পারেন। এটি আপনার ইচ্ছার উপর নির্ভর করবে। আপনি যেভাবে খান এটি আপনার জন্য অনেক
উপকারী।
রক্তস্বল্পতা দূর করতে কিসমিসের তুলনা অপরিসিম
আমরা হয়তো সকলেই জানি যে কিসমিস আঙ্গুর থেকে তৈরি করা হয়। আমরা যে বাহিরে কেনা আঙ্গুলগুলো খায় সেগুলো দিয়ে কিন্তু কিসমিস তৈরি করা হয় না। অন্য এক ধরনের আঙ্গুর দিয়ে এই কিসমিস তৈরি করা হয়। যেগুলোর পুষ্টিগুণ উপাদান অনেক বেশি।
আর বিশেষ করে যখন সে পুষ্টিগুণ উপাদানকে শুকানো হয় তখন তার পুষ্টিগণ আরো বৃদ্ধি
পাই। কিসমিস রয়েছে আরও বিভিন্ন ধরনের উপাদান রয়েছে। এগুলো আপনার রক্তস্বল্পতার
সংশোধন করার পাশাপাশি আপনার শরীর ভালো রাখতে সাহায্য করবে। তাই আপনারা কিসমিস
খেতে পারেন।
রক্তস্বল্পতা দূর করতে বেদেনার অবদান
এমন একটি ফল যেটি খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের রক্তস্বল্পতা অনেকটাই কমে যায়।
আপনি যদি ডাক্তারের কাছে যেও পরামর্শ নিয়ে থাকেন যে কোন কোন খাবারগুলো খেতে হবে
এর রক্তস্বল্পতার সমস্যা দূর করার জন্য। সবার প্রথমে ডাক্তার আপনাকে বেদনার
খাওয়ার জন্য পরামর্শ দিবেন। বেদেনা আপনার শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে
সাহায্য করবে। এছাড়া এতে প্রচুর পরিমাণে আইরন রয়েছে যেগুলো আপনার রক্তস্বল্পতা
সমস্যা কমিয়ে দিবে।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক আশা করছি আপনি আজকের এই পর্বটি খুব মনোযোগ সহকারে পড়েছেন। এবং আপনি
জানতে পেরেছেন রক্তস্বল্পতা সমস্যা দূর করার উপায় সম্পর্কে। এবং আপনি আরো জানতে
পেরেছেন রক্তস্বল্পতার লক্ষণ গুলো কি কি এবং কিভাবে এখান থেকে পরিত্রাণ
পাওয়া যায়। আজকের এই পর্ব যদি আপনার ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশ্যই আপনার কমেন্ট
করে আমাদেরকে জানাবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url