কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা - দুধ ও কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা
প্রিয় পাঠক আজকে আপনাদের সামনে আলোচনা করব কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা ও
দুধ ও কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। আপনি জেনে অবাক হবেন যে কিসমিস ভেজানো
পানি পান করলে দেহের মেটাবলিজম তিন থেকে চার গুণ বৃদ্ধি পায়। গবেষণায় দেখা গেছে
কিসমিস মিশানো পানি দেহের ভিতর যাওয়ার ৫ থেকে ৭ মিনিটের মধ্যে দেহের হজম শক্তি
দ্বিগুণ বেড়ে যায়।
তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেই কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। জানতে হলে পুরো পর্বটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। কিসমিস ভেজানো পানি পান করলে দেহের লিভার কিডনি চাঙ্গা থাকে চলুন জেনে নেই বিস্তারিত বিষয়গুলো।
কিসমিসের ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতাঃ
কিসমিসের ঔষধি গুলোর কথা না জেনে অনেকে এটিকে শুধুমাত্র একটি মসলা হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। আবার অনেকের এটিকে খেতে ভালো লাগে বলে খেয়ে থাকেন। কিন্তু কিসমিসের আসল উপকারিতা সম্পর্কে জানেন না। কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার পাশাপাশি, যে পানিতে ভিজিয়েছেন সে পানিও যদি আপনারা খেতে পারেন এটিও আপনাদের জন্য অনেক উপকারে।
যখন কোন একটা পুষ্টিকর খাবার কে শুকিয়ে ফেলা হয়। তখন তার পুষ্টিগুণ উপাদান আরো বৃদ্ধি পায়। তেমনটাই ঘটে এই কিসমিসের ক্ষেত্রে। কিসমিস তৈরি করা হয় আঙ্গুর ফল থেকে। আঙ্গুরের ও কিছু নির্দিষ্ট পুষ্টিকুণ রয়েছে। এগুলোকে যখন শুকানো হয় তখন এর পুষ্টিগুণ আরো বেড়ে যায়। তাই কিসমিসেরও পুষ্টিগুণ অনেক বেশি।
তাই কিসমিস যদি কোন পানিতে ভিজানো হয়, সে পানিও আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। তাহলে চলুন জেনে নিই ভেজানো কিসমিস ও যে পানিতে কিসমিস ভেজানো হয় সে পানের উপকারিতা।
ভেজানো কিসমিস
- হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। কিসমিস রক্তে খারাপ কোলেস্টের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমানোর ফলে হার্ট অ্যাটাক কিংবা স্টকের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। এছাড়াও হৃদরোগের বিভিন্ন সমস্যার ঝুঁকিও কমে যায়।
- রক্তস্বল্পতা দূর করে। কিসমিস হয়েছে আয়রন, আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্র সাহায্য করে, রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ার ফলে শরীরে অনেক রক্ত উৎপন্ন হয়। তাই রক্তস্বল্প কোথাও দূর হয়ে যায়।
- এছাড়াও স্পেশাল রয়েছে কার্বোহাইড্রেট। কার্বোহাইড্রেট শরীরে শক্তির যোগাতে সাহায্য করে।
- এছাড়াও কিসমিস খাওয়ার ফলে মহিলাদের বেশি স্বাস্থ্যের উপকারিতা পাওয়া যায়। তাই চিকিৎসকেরা মহিলাদের পরামর্শ দেন।
কিসমিস ভেজানো পানি
- কিসমিসের পানি লিভার বা যকৃত পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। গবেষণায় ও জানা গেছে যে, কিসমিসের ভেজানো পানি খাওয়ার ফলে, লিভারের জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া শুরু হয়।
- রক্ত পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও লিভারের পাশাপাশি কিডনি কেউ ভালো রাখতে হবে। নইলে শরীরের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিবে। এই কিসমিসের পানি কিডনি কেউ ভালো রাখতে সাহায্য করে।
- কিসমিসের পানি হজম শক্তি বাড়াতেও অনেক সাহায্য করে। তাই আমাদের শরীরের জন্য কিসমিসের পানের উপকারিতা অনেক।
আমরা এতক্ষন জানলাম কিসমিসের পানি আমাদের শরীরের জন্য কিভাবে উপকারি। কিন্তু শরীরের জন্য যে পানি উপকারী সেটিকে কিভাবে তৈরি করতে হয়, সেটা আমাদের জানতে হবে। তাহলে এর আসল উপকারিতা পাওয়া যাবে। দুই কাপ পানিতে 150 গ্রাম কিসমিস ব্যবহার করতে হবে। কিসমিস কেনার ক্ষেত্রেও কিন্তু সাবধানতা অবলম্বন করতে হয় ।
খুব চকচক করছে এমন কিসমিস যদি হয় তাহলে সে কিসমিস কেমিক্যাল মেশানো থাকে । গারো রঙের কিসমিস কিনতে হবে। যে কিসমিস গুলো খুব শখ তো না আবার নরমও নয়। এ কিসমিস গুলো আনার পর ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। দুই কাপ পানিতে সে কিসমিস গুলো দিয়ে সারারাত ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকালে ছেকে নিয়ে সে পানি টা হাগা গরম করে খেয়ে নিতে হবে। অবশ্যই পানি টিকে খালি পেটে খেতে হবে।
কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার নিয়ম ঃ
কিসমিস শুধু যে কোন পানিতে ভিজিয়ে কিছুক্ষণ রেখে খেয়ে নিলে হবে না। কিসমিস
ভেজানোর কিছু পদ্ধতি রয়েছে। আপনারা যদি এই পদ্ধতি অবলম্বন করে কিসমিস খেতে পারেন
তাহলে অনেক ভালো একটি উপকারিতা পাবেন। দুই কাপ পানিতে ১৫০ গ্রাম কিসমিস নিবেন।
এরপর এটিকে বিকালে কিংবা সন্ধ্যায় পানিতে দিয়ে দিতে হবে। এরপর
সকাল বেলা ছেকে নিয়ে এটাকে খাওয়া যাবে। এই নিয়মে যদি আপনারা কিসমিস খেতে
পারেন। তাহলে কিসমিসের সকল উপকারিতা গুণগুলো আপনারা পাবেন।
দুধ ও কিসমিস খাওয়ার উপকারিতাঃ
আমরা জানি দুধ আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী। আমাদের শরীরের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এটি বাচ্চাদের জন্য অনেক বেশি উপকারী। তাই বাচ্চাদের দুধ বেশি খাওয়ানো হয়। এটি বাচ্চাদের শারীরিক বৃদ্ধি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
সেই সঙ্গে ব্রেনের বিকাশে অনেক সাহায্য করে। আবার কিসমিস ও আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এর পুষ্টিগুণ ক্ষমতা অনেক বেশি। এই দুইটি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবারকে যদি একসাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়। তাহলে এর পুষ্টিগুণ ক্ষমতা অনেক বেশি বেড়ে যায়।
তাই এটি আমাদের জন্য অনেক উপকারি। দুধ ও কিসমিস মিশিয়ে খেলে কি হয়।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে
- হাড় ক্ষয় রোধ ও হাড় শক্ত রাখতে সাহায্য করে।
- ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে এবং শরীরে দুর্বলতা কমাতে সাহায্য করে
- রক্তস্বল্পতা কমায়
- হজমে সাহায্য করে
আপনারা কিসমিস দুধের সাথে দুইভাবে খেতে পারবেন। এক নাম্বার হলোঃ সারারাত দুধে
কিসমিস ভিজিয়ে রেখে সকালে খেতে পারবেন। আবার দুধের সাথে কিসমিস জাল করার খেতে
পারবেন। যেভাবে খান না কেন, দুধ ও কিসমিস একসাথে মিশিয়ে খেলে শরীরের জন্য অনেক
উপকারী।
খালি পেটে কিসমিস ভিজিয়ে খেলে কি হবেঃ
খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি কারণ, সকালে আমাদের পেট পুরোপুরি খালি থাকে। রাতের খাবারগুলো রাতে হজম হয়ে যায়। সকাল বেলা পেট খালি থাকে। এই টাইমে যদি কোন পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া যায় তাহলে, এটি সঙ্গে সঙ্গে কাজ করা শুরু করে দিবে।
তাই সকাল বেলা খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা অন্যরকম। কিন্তু কিসমিস খাওয়ার
পর আধাঘন্টা কোন কিছু খাওয়া যাবে না। এই নিয়মটি ফলো করে যদি আপনি কয়েকদিন
কিসমিস খান তাহলে কিসমিসের উপকারিতা খুব শীঘ্রই আপনি পেয়ে যাবেন। আপনি
বুঝতে পারবেন কিসমিসের উপকারিতা ঠিক কতটুকু।
রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে কি হবেঃ
শুধু সকালে খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে তা কিন্তু নয়। রাতে শুকনো
কিসমিস খাওয়ার অনেক উপকারিতা হয়েছে। আমরা হয়তো এখনো সেগুলো জানিনা। তাহলে চলুন
জেনে নেই রাতে কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা গুলো।
- যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য রাতে কিসমিস খাওয়া অনেক উপকারে। কারণ কিসমিস হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তাই রাতে যদি কিসমিস খেয়ে ঘুমোতে পারেন তাহলে এসিডের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
- আবার যাদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে, টেনশন কিংবা অন্যান্য কোন কারনে রাত্রেবেলা ঘুমোতে পারেন না ঘুম ধরে না। এমন সমস্যা অনেকেরই রয়েছে। তাই যাদের এ ধরনের সমস্যা রয়েছে তারা রাতে কিসমিস খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এটি আপনাদের ঘুমের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে।
- ঘুম থেকে ওঠার পর অনেকে শরীরে এক ধরনের ব্যথা অনুভব করেন। এ ধরনের ব্যথা দূর করত কিসমিস অনেক সাহায্য করবে। এছাড়াও কিসমিস শরীরের যে কোন বর্জ্য পদার্থ দূর করতে অনেক সাহায্য করে। তাই কিসমিস খেলে শরীরের ভেতরে পরিষ্কার থাকে।
- কিসমিসে রয়েছে ফাইবার, প্রতিদিন রাতে যদি ঘুমানোর আগে কিসমিস খাওয়া যায়। তাহলে এটি ওজন কমাতে অনেক সাহায্য করে। রাতে যদি ঘুমানোর আগে থেকে খাওয়া যায় তাহলে, রক্তের শর্করা বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে অনেক সাহায্য করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। কিসমিসে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। এগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। ঘুমের জন্য অনেক বেশি উপকারী। বিভিন্ন ধরনের কোষ সুস্থ রাখতেও সাহায্য করে।
- রক্ত পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া রক্ত পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি রক্তস্বল্পতা দূর ও রক্ত চাপের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। তাই রক্তের যেকোন সমস্যার জন্য প্রতিদিন রাতে কিসমিস খাওয়া যাবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url