গর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে বুঝার উপায়
গর্ভের সন্তান ছেলে অথবা মেয়ে এমন পার্থক্য কখন হয়ঃ
সন্তান আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি নিয়ামত। গর্ভধারণ হলে মায়ের শারীরিক কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। যদিও সেগুলো সবার ক্ষেত্রে এক নয়। গর্ভধারণ করার পর গর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে এটি চেনার কৌতুহর সকল পিতা-মাতারি রয়েছে।
সন্তান হয় শুক্রানু ও ডিম্বানোর সম্ভাবনায়ে। ছেলে হোক কিংবা মেয়ে হোক দুজনেই শুক্রানো ও ডিম্বানো সম্ভব নয় তৈরি হয়। কখনো আবার তৃতীয় লিঙ্গ আরো সন্তান হয়। এখন প্রশ্ন হলো কিন্তু কেন হয়। মানবদেহ বিভিন্ন ধরনের কোষ দ্বারা গঠিত। গুলোতে ২৩ ক্রোমোজোম থাকে। যখন শুক্রাণু ও ডিম্বানু মিলিত হয় তখন ২৩ টি ক্রোমোজোম একত্রিত হয়।
এই ২৩ জন আক্রোমজোম এর মধ্যে ২২ হলো অটোসম অর্থাৎ এই ২২টি ছেলেমেয়ে সকলেরই একই রকম হয়। বাকি একজোড়া ক্রোমোজোম হলো সেক্স ক্রোমোজোম। আর এই সেক্স ক্রোমোজোমের মাধ্যমে নির্ধারিত হয় সন্তান ছেলে হবে না মেয়ে হবে। মেয়েদের সেক্স ক্রোমোজোম হলো(XX)। আর ছেলেদের সেক্স ক্রোমোজোম হলো(XY)।
শুক্রাণু ও ডিম্বানো মিলিত হওয়ার সময় ছেলেদের ক্রোমোজোম থেকে যে কোন একটি আসবে
এবং মেয়েদের ক্রোমোজোম থেকে যে কোন একটি আসবে। আর এভাবে যদি দুজনের থেকে(XX) আসে
তাহলে মেয়ে সন্তান হয়। আর যদি(XY) আসে তাহলে সে সন্তান ছেলে হবে। কিন্তু
আমাদের সমাজে ছেলে না হলে মেয়েদের দোষ দেওয়া হয়। এটি একদমই ভুল। এর সম্পূর্ণ
দায়ভার থাকে ছেলেদের উপরে।
গর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে এই নিয়ে অনেক কুসংস্কার রয়েছে। আলতাসনোগ্রাফি
ছাড়া অন্যান্য কোন মাধ্যম দ্বারা বোঝা যাবে না যে গর্ভের সন্তান সে নামে।
আলতাসোনাগ্রাফি এমন একটি আধুনিক যন্ত্র যার মাধ্যমে গর্ভের ভিতর যা রয়েছে স্পষ্ট
ভাবে দেখা যায়। গর্ভবতী হওয়ার ২০ সপ্তাহ পর সন্তানের আকার আকৃতি বোঝা যায়। তাই
সেই টাইমে আলতাসনোগ্রাফি করলে বোঝা যাবে গল্পের সন্তান ছেলে না মেয়ে।
গর্ভের ছেলে সন্তান থাকলে কোন পাশে থাকেঃ
অনেক আগে থেকে পরিবারের বড়রা কিংবা পরিবারের জ্ঞানী মানুষ। তাদের অনুমানের ওপর যাচাই করেছে যে গর্ভে সন্তান ছেলে না মেয়ে। এ অনুমানের বিজ্ঞানসম্মত কোন যুক্তি নেই। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই অনুমান্টি মিলে যায়।এর বিজ্ঞান সম্মত যুক্তি না থাকলেও এই অনুমান গুলো আকদম আজগবি ধরা যাবেনা।
আগে যখন বিজ্ঞানের চল ছিলনা তখন কবিরাজ কিংবা চিকিৎসকেরা অনুমানের উপর চিকিৎসা করতেন ।কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনুমান না মিল্লেও এই ভাবেই চিকিৎসা করা হতো। তাই এগুলোকে একদম তুচ্ছ বলে ফেলে দেওয়া যাবে না। এগুলোর হয়তো কিছু যুক্তি রয়েছে যা বিজ্ঞানের যুক্তির সঙ্গে মেলে না। এমন অনেক ঘটনায় রয়েছে যেগুলো বিজ্ঞানের যুক্তির সঙ্গে মেনে না।
এরকমই কিছু অনুমান রয়েছে যার মাধ্যমে বোঝা যায় গর্ভের সন্তান ছেলে নাকি
মেয়ে। আবারো বলছি এইগুলো কিন্তু সব ক্ষেত্রে ঠিক হয় না। এই গুলো শুধু
অনুমান মাত্র।তাই এইগুলো কে বিশ্বাস করে বসে থাকলে হবেনা। তারা গর্ভে সন্তানের
অবস্থান কিংবা পেটের আকার আকৃতি দেখে অনুমান করে থাকেন যে গর্ভে ছেলে সন্তান নাকি
মেয়ের সন্তান রয়েছে। এরকমই অনেক ধরনের অনুমান রয়েছে তার মধ্যে একটি অনেক
বেশি প্রচলিত। সেটি হলঃ
গর্ভে পুরো পেট জোরে অনেক বেশি নড়াচড়া করে কিংবা বাম পাশে বেশি নড়াচড়ার অনুভব করেন। আবার তার ওজন খুব হালকা মনে হলে, অনুমান করা হয় সেই গর্ভে সন্তানটি ছেলে সন্তান। গর্ভবতী অবস্থায় আপনার পেটকে যদি অনেক বেশি ভারী অনুভব করেন। তাহলে সে সন্তানটি মেয়ে সন্তান অনুমান করা হয়।
বাচ্চার অবস্থান দেখে লিঙ্গ নির্ধারণ করা যায় এর কোন বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই। তবে বহু বছর ধরে এই ধরনের অনুমান চলে আসছে। ছেলে কিংবা মেয়ে যে সন্তানই হোক না কেন সন্তান আল্লাহর দান। পৃথিবীতে এমন দম্পতি রয়েছে যাদের কোন সন্তান নেই। তারা হাজার আল্লাহর কাছে চেয়েও সন্তান পায় না। আর যেখানে মেয়েকে বা ছেলেই হোক, আপনার তো সন্তান রয়েছে।
তাদের মুখ থেকে মা ডাক কিংবা বাবা ডাক শুনতে পারেন। তাই আল্লাহ যে আপনাকে
সন্তানের বাবা মা হওয়ার সুযোগ দিয়েছে এটাই অনেক। তাই সন্তান ছেলে কিংবা
মেয়ে নিয়ে অসন্তুষ্ট না হয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন।
নাভি দেখে কি করে বোঝা যায় গর্ভের সন্তান ছেলে নাকি মেয়েঃ
গর্ভের বাচ্চার নড়াচড়ার পাশাপাশি, গর্ভবতী মায়ের নাভির আকার আকৃতি দেখেও অনেক সময় অনুমান করা হয় গর্ভের সন্তান ছেলে নাকি মেয়ে। এগুলোর বিজ্ঞানসম্মত যুক্তি নিয়ে তবুও অনেক জায়গায় এগুলোর বিশ্বাসের প্রচলন রয়েছে। গর্ভবতী মায়ের নাভি যদি বাইরের দিকে বের হয়ে থাকে, তাহলে ধরা হয় সেই গর্ভের সন্তান ছেলে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।আর যদি গর্ভ হতে নাভি ভেতর দিকে থাকে তাহলে, সেই সন্তান মেয়ে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু নাভি দেখে নয়।
গর্ভবতী পেটের ওপর কিছু দাগ দেখেও অনুমান করা হয় সেই গর্ভে সন্তান ছেলে
নাকি মেয়ে।গর্ভবতীদের পেট যখন ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে তখন, পেটের উপর বিভিন্ন
ধরনের দাগ দেখা যায়। সেই দাম যদি নাভির ওপরে অর্থাৎ বুকের কাছে চলে আসে,
তাহলে সেই গর্ভের সন্তান ছেলে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। আর
যদি দাগ নাভি পর্যন্ত এসে আর ওপরে না যায় তাহলে, সেই গর্ভের সন্তান মেয়ে
হবে বলে ধারণা করা যায়।
এছাড়াও গর্ভবতীর পেট উপর দিকে আছে নাকি নিচে ঝুলে আছে সেটার ওপরও অনেকে
অনুমান করে। কিন্তু এই অনুমান একেবারে যুক্তিহীন। কারণ যখন প্রথমবার একজন গর্ভবতী
হয় তখন তার পেটের পেশিগুলো মজবুত থাকে। তাই স্বাভাবিকভাবেই তার পেট উপর
দিকে থাকবে। আর এর পরবর্তী সময় যদি সে গর্ভবতী হয় তখন তার বেশি গুলো আগের থেকে
একটু হলেও দুর্বল হয়ে যাবে। তাই সেই সময়ে পেট নিচের দিকে ঝুলে যাওয়া সম্ভাবনা
রয়েছে।
গর্ভবতীদের যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবেঃ
গর্ভবতী অবস্থায় অনেক কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। কারণ গর্ভবতীর সময়টা অনেক
কঠিন সময় হয়ে থাকে মেয়েদের জন্য। কারণ এই সময় কোন একটি ভুলের
কারণে আপনার কিংবা আপনার সন্তানের যে কোন কিছু হয়ে যেতে পারে। তাই এই সময়ে
তাদের অনেক সচেতন থাকতে হয়। গর্ভবতীদের নিয়ে কিছু সতর্ক বাণী রয়েছে।
সেইসব অবশ্যই জানা প্রয়োজন।
- অতিরিক্ত আবেগ, মানসিক চাপ , দুশ্চিন্তা, ভয় এসব থেকে দূরে থাকতে হবে। এগুলো গর্ভবতীর জন্য একদমই ভালো নয়।
- গর্ভবতীকে সবসময় রোগ মুক্ত থাকতে হবে। তাই স্বাস্থ্যকর খাবার ও শরীর পরিষ্কার রাখা খুবই জরুরী। আর এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ বেশি বেশি খাবার খাওয়া। এগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে।
- যেকোনো ওষুধ খাবার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। আর সময় মতো চেকআপ করাতে হবে।
-
কোন কোন খাবার খাওয়া উচিত এবং কোন কোন খাবার খাওয়া উচিত নয় সেগুলো ডাক্তারের
কাছ থেকে জেনে নিতে হবে। কারণ এমন কিছু খাবার রয়েছে যেগুলোর
কারণে গর্ভবতীদের কিছু সমস্যা হতে পারে।
- ভারি ভারি জিনিসের কাজ খুব কমই করতে হবে।
শেষ কথা
সুপ্রিয় পাঠক আজকে আমরা এই আর্টিকেলে শেষ পর্যন্ত চলে এসেছি আশা করছি আপনি আজকের
দিন পুরো পরবর্তী মনোযোগ সহকারে করেছেন এবং জানতে পেরেছেন গর্ভের সন্তান ছেলে না
মেয়ে এসব বিষয়ে বিস্তারিত। যদি আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে
অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url