চিয়া বীজের অসংখ্য গুন থাকা সত্ত্বেও এটিকি আপনার জন্য উপকারী
চিয়া বীজের পুষ্টিগুণঃ
চিয়া বীজের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমন রয়েছে এর পুষ্টিগুণ উপাদান। আপনারা জানলে অবাক হবেন যে, দুধের মত অধিক ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবারের তুলনায় চিয়া বীজে অনেক পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে। সেই সঙ্গে পালং শাকের থেকে ছয়গুণ বেশি আয়রন থাকে। আর অন্য খাবারের তুলনায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান অনেক বেশি রয়েছে এই চিয়া বীজে। এমনকি এতে ম্যাগনেসিয়ামের এর পরিমাণ অনেক বেশি রয়েছে ব্রকলির তুলনায়। আর এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার।
এখানে শুধু এক ধরনের ফাইবার নয় আরো তিন ধরনের ফাইবার রয়েছে। তাই আপনি যদি এই চিয়া বীজকে দিনে তিনবার অথবা দুইবার খেতে পারেন, এমনিতে আপনার ওজন কমে যাবে। ওজন কমানোর জন্য কোন ধরনের ব্যায়াম কিংবা ডায়েট কন্ট্রোল করতে হবে না। আপনারা হয়তো সকলেই জানেন যে মাছের চর্বি থেকে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায়।
মাছে একমাত্র যেখানে অন্যান্য খাবারের তুলনায় ওমেগা থ্রি ফাটিড বেশি পাওয়া যায়। কিন্তু আপনারা শুনে অবাক হবেন যে চিয়া বীজে মাছের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড রয়েছে। এসব দেখে জানায় যাচ্ছে যে, চিয়া বীজে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ঠিক কতটা উপকারী।
চিয়া বীজের উপকারিতাঃ
আমরা এতক্ষণ জানলাম এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। এর যেমন অন্যান্য খাবারের তুলনায় অনেক বেশি পুষ্টিগুণ সংখ্যা রয়েছে তেমনি অন্যান্য খাবারের তুলনায় এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশি উপকারী। তাই আমরা যদি নিয়মিত ভাবে এটি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলি।
তাহলে আমাদের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। কোন ধরনের রোগের আশঙ্কা থাকবে না। তাই
আমাদের শরীরকে যদি আমার রোগ মুক্ত রাখতে চাই তাহলে, অবশ্যই চিয়া বীজ খেতে হবে।
কারণ এটি আমাদের জন্য অনেক উপকা্রী তাহলে চলুন জেনে নিই চিয়া বীজের কিছু
উপকারিতা সম্পর্কে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে
চিয়া বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আর আমরা হয়তো সকলে জানি যে আন্টি অক্সিজেন আমাদের শরীরের জন্য ঠিক কতটা উপকারী। এটি যেমন আমাদের শরীরের উপকারি তেমনি এটি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। কারণ এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান আমাদের শরীরে থাকা খারাপ ব্যাকটেরিয়া গুলোকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে।
যখন আমাদের শরীরে খারাপ ব্যক্তি গুলো ধ্বংস হয়ে যায় তখন এমনিতে আমাদের শরীরে
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। আর শরীরে থাকা ভালো ব্যাকটেরিয়া গুলো
আমাদের শরীর ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাই এটা যেমন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে
সাহায্য করে তেমনি বিভিন্ন ধরনের রোগও প্রতিরোধ করতে পারে। তাই যাদের শরীরে রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা কম রয়েছে এটি তাদের জন্য অনেক উপকারী।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
চিয়া বীজে রয়েছে অনেক ধরনের ফাইবার উপাদান। ফলে আমরা যদি চিয়া বীজ দিনের অন্তত দুইবার খায় তাহলে, এমনিতে আমাদের ওজন কমে যাবে। কারণ এ ফাইবার আমাদের পাকস্থলের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করতে যেমন সাহায্য করে তেমনি আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করে।
আর যখন আমাদের শরীরে হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে তখন, আমাদের শরীরে থাকা যে অতিরিক্ত খাবার গুলো সেগুলো হজম হয়ে যাবে। সে ফলে আমাদের শরীরে চর্বি কমে যাবে। আর এছাড়াও ফাইবার যুক্ত খাবার আমাদের পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে।
তাই যাদের বেশি খাবারের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্যও চিয়া বীজ অনেক উপকারী। তারা
খুব সহজেই ডায়েট করতে পারবে। এর জন্য অতিরিক্ত কষ্ট করতে হবে না। তাই ওজন কমাতে
চাইলে অবশ্যই চিয়া বীজ আপনার জন্য অনেক উপকারী।
হাড়ের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে
দুধের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে এই চিয়া বীজে। তাই অবশ্যই চিয়া বিজ আমাদের হাড়ের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে। কারণ একমাত্র ক্যালসিয়াম রয়েছে যেটি আমাদের হাড়ের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করে। আর এই ক্যালসিয়ামের অভাবে মূলত আমাদের হাড়ের সমস্যা দেখা দেয়। ক্যালসিয়াম আমাদের হাড়ের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করতে অনেক উপকারী।
রক্তস্বল্পতা কমাতে সাহায্য করে
চিয়াবি যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন যে, আইরনের ভান্ডার হিসেবে পালং শাক অনেক জনপ্রিয়। কিন্তু পালং শাকের তুলনায় অনেক বেশি আয়রন রয়েছে চিয়া বিজে। তাই আমাদের রক্তস্বল্পতা দূর করতে অনেক সাহায্য করে।
সেই সাথে এটি আমাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। তাই যাদের
অ্যানিমিয়া রোগ রয়েছে এটি তাদের জন্য অনেক উপকারী। কারণ এই
হিমোগ্লোবিন রক্ত বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। সেই সাথে লোহিত রক্ত কণিকার
পরিমাণ বাড়িয়ে দিতেও সাহায্য করে।
হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে
আমরা হয়তো সকলেই জানি যে মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। যেটি অন্য কোন খাবারে নেই। কিন্তু এটি হয়তো অনেকে জানে না যে, মাছের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড রয়েছে চুলের সমস্যা দূর করে চিয়া বীজে।
এই ফ্যাটিয়া সেট আমাদের হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি রক্তের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতেও সাহায্য করে। সেসঙ্গে রক্তে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতেও সাহায্য করে। তাই এটা আমাদের জন্য অনেক উপকারী। এছাড়াও হার্ট অ্যাটাক কিংবা স্ট্রোকের মতো রোগের আশঙ্কা কমাতেও সাহায্য করে।
চিয়া বীজের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াঃ
চিয়া বীজের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে। তার সম্পর্কে জানার পর, অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে এটিকে আসলে আমাদের জন্য খুবই উপকারী। হ্যাঁ এটা অবশ্যই আমাদের জন্য উপকারী কিন্তু এর বেশি পরিমাণ আমাদের জন্য মোটেও উপকারী নয়। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়া প্রয়োজন। উপকার পাওয়ার আশায় বেশি পরিমাণে খেতে গিয়ে যেকোনো ধরনের সমস্যা হতে পারে। তাহলে চলুন জেনে নেই চিয়া বীজের কিছু অপকারিতা সম্পর্কে।
পেটে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে
প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। ফাইবার যেমন আমাদের পেটের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে
তাহলে এর অতিরিক্ত মাত্রা পেটের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। তাই চিয়া বীজ
সীমিত আকারেই খেতে হবে। এর বেশি পরিমাণ কখনো আমাদের জন্য ভালো প্রভাব ফেলবে না।
কারণ এটা থাকা প্রত্যেকটি উপাদান অনেক বেশি পরিমাণে রয়েছে। তাই খাওয়ার আগে
অবশ্যই হিসাব করে খেতে হবে।
অস্বাভাবিকভাবে অতিরিক্ত ওজন কমে যেতে পারে
এতক্ষণ জানলাম যে এটি আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটি আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে তাই বলে যে বেশি পরিমাণে খেতে হবে তা কিন্তু নয়। বেশি পরিমাণে খাওয়ার ফলে, অনেক ওজন কমে যেতে পারে। এজন্য আপনার বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। যেমনঃ শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া, মাথা ঘোরা হাত-পা কাঁপা ইত্যাদি আরো বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে।চিয়া বীজ তাই ওজন কমার আশায় অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া যাবে না।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url