কাঁচা মরিচ গাছ এই নিয়মে লাগালে হবে বাম্পার ফলন
বাড়িতে বাগান করার শখ প্রায় অনেকেরই রয়েছে। গাছ লাগাতে প্রায় সবারই ভালো
লাগে। কেউ ফুলের বাগান করতে পছন্দ করেন আবার কেউ সবজির বাগান করতে পছন্দ করেন।
তারা বিভিন্ন ধরনের গাছ তাদের বাগানে লাগিয়ে থাকেন।
কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় গাছগুলো কোন কারনে মারা যাচ্ছে কিংবা সে গাছের ভালো
ফলন হচ্ছে না। এ সমস্যাটি প্রায় অনেকের হয়ে থাকে। তাই আজকে এই পোস্টে এই
সমস্যার সমাধান জানবো। সেই সঙ্গে মরিচ গাছ কিভাবে চাষ করতে হয় সেটিও জানবো। মরিচ
গাছ অনেকেই চাষ করে থাকেন কিংবা বাড়ির ছাদে লাগান।
ভূমিকা
প্রিয় পাঠক আজকে আপনাদের সামনে নিয়ে আসলাম আর একটি নতুন আর্টিকেল। আজকে আমরা
জানবো কম জায়গায় কিভাবে বাম্পারভাবে মরিচ চাষ করা যায়। এবং বাম্পার লাভ করা
যায় সেই সম্পর্কে। আমাদের প্রত্যেকদিন রান্নার কাজে ব্যবহার হয় এই মরিচ।
আপনার বাড়ির ছাদে সামান্য একটু বুদ্ধি খাটিয়ে চাষ করতে পারেন এই মরিচ।
তাহলে আপনার সারা বছরের মরিচের খরচ থেকে আপনি বেঁচে যাবেন। আজকে আপনাদের দেখাবো
অল্প জায়গায় কি করে মরিচ চাষ করা যায়।কিন্তু এর ভালো ফলন হচ্ছে না এর জন্য কি
করা উচত। এইসব সমাধান জানতে হলে অবশ্যই এই পোস্টটি আপনাদের পড়তে হবে।
মরিচ গাছের বীজ তৈরির উপায়ঃ
মরিচ গাছের বীজগুলো বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। কিন্তু যারা টাকা খরচ করতে চান না।
বাড়িতে বীজ তৈরি করতে চান তাহলে এই পোস্টটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।
বাড়িতে মরিচের বীজ তৈরি করা যায়। এর কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। এগুলো
অবলম্বন করলে মরিচের একটি ভালো বীজ আপনারা পাবেন।
তাই মরিচের বীজ তৈরি করতে হলে, প্রথমে আপনাদের প্রয়োজন একটি শুকনা মরিচের।
আপনারা যে ধরনের মরিচ চাষ করতে চান। সেই মরিচের শুকনা মরিচ নিয়ে
নেবেন। শুকনা মরিচকে আনার পর এটিকে একদিন রোদে রাখতে হবে।
আরো পড়ুনঃ বাড়ির ছাদে গোলাপ চাষ - গোলাপ ফুলের উপকারিতা
এবার এর ভেতরের বীজগুলোকে বের করে নিতে হবে। এগুলোকে বের করে নেওয়ার
পর প্রয়োজন হবে একটি কাপড়ের। আপনাদের বাড়ি যেকোন পুরাতন কাপড় এখানে ব্যবহার
করতে পারবেন। কাপড়টিতে বীজগুলো রেখে দিতে হবে।
এবার একটি গ্লাসে পানি দিয়ে , সেখানে ২৪ ঘন্টার মত বীজগুলোকে ভিজাতে দিতে হবে।
যখন ২৪ ঘন্টা হয়ে যাবে। তখন বীজগুলোকে বের করে নিতে হবে। এবার একটি পাত্রে তারপর
সহ বীজগুলো রেখে দিতে হবে। এটিকে বারো দিন পর্যন্ত রাখতে হবে। বারো দিন পর দেখবেন
বীজগুলো থেকে এক ধরনের সাদা অংশ বের হয়ে এসেছে।
এগুলো থেকে পরবর্তীতে মরিচ গাছ হবে। তাই কাপড়টি থেকে বীজগুলো বের করে
নেয়ার সময়, সাবধানে বের করতে হবে। জানো সেই সাদা অংশগুলো ভেঙ্গে না যায়। সাদা
অংশ গুলো ভেঙে গেলে , সেখান থেকে আর গাছ হবে না। তাই সাবধানতা অবলম্বন করে
বীজগুলোকে তুলে নিতে হবে। তাহলে তৈরি হয়ে গেল মরিচের বীজ। এখন মাটিতে রোপন
করে দিলে সেখান থেকে মরিচের গাছ বের হবে।
মরিচ গাছের বিজ লাগানোর জন্য মাটি তৈরিঃ
অনেকেরই এমনটা হয় যে, মরিচের বীজ লাগানোর পর সেখান থেকে গাছ বের হয়। কিন্তু
সেটি বড় হওয়ার কিছুদিন পরে নষ্ট হয়ে যেতে শুরু করে। ফলে মরিচের গাছটা মরে
যায় কিংবা সেখানে কোন ফলন হয় না। এরকম সমস্যা প্রায় অনেকেরই রয়েছে।
তাই এই সমস্যার সমাধানের জন্য মরিচ গাছের বীজ লাগানোর মাটিটি ভালো হবে প্রস্তুত
করতে হবে। যদি মাটিতে ভালোভাবে প্রস্তুত করা যায় তাহলে এরকম সমস্যা আর হবে ।
এরকমটা হওয়ার কারণ, গাছের ঠিকমতো পুষ্টি পায় না কিংবা সেটি তার খাবার তৈরি
করতে পারে না। ফলে গাছটি মারা যায়। তাই গাছের সঠিক পুষ্টির জন্য আগে
মাটিটিকে ভালোভাবে প্রস্তুত করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ কমলা চাষ বাংলাদেশ - কমলা মিষ্টি করার উপায়
এর জন্য মাটির সঙ্গে কম্পোস্ট সার মিশাতে হবে। আপনারা যত পরিমাণ মাটি
ব্যবহার করবেন ঠিক তার সমান কম্পোস্ট সেখানে ব্যবহার করতে
হবে। মরিচের বীজের সাদা অংশটিকে মাটির নিচের দিকে দিতে হবে।
আপনারা চাইলে এখানে ডিমের খোসা গুঁড়ো করে দিতে পারেন।
এটি মরিচ গাছের জন্য অনেক ভালো হবে। আর ভালো ফলন দিতেও সাহায্য করবে। মরিচের
বীজটি রোপন করে দেওয়ার ৪-৫ দিন পর সেখান থেকে চারা বের হয়ে আসবে। এরপর আরও দশ
দিন পরে চারাটি প্রায় অনেক বড় হয়ে যাবে। আপনারা যদি মরিচের গাছটিকে টবে চাষ
করতে চান তাহলে একটি টবে একটি কাজ থাকাই ভালো। একটি টবে যদি একটি কাজ থাকে তাহলে
মরিচ গাছটি ভালো ফলন দিবে।
মরিচের ফলন বেশি করার কৌশলঃ
আমরা প্রায় সকলে বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগিয়ে থাকি। গাছ লাগানোর
এই এক্সপেরিয়েন্সটা প্রায় সকলের রয়েছে। আর আমরা প্রায় সকলেই জানি যে, কিভাবে
এই গাছগুলোকে লাগাতে হয়। আমরা এটা জানি যে এ কাজগুলোকে কিভাবে লাগাতে হয়,
কিন্তু আমাদের এই সাধারন নিয়ম অবলম্বন করে গাছ লাগানোর পর ভালো কোনো ফলন
হয় না।
এরকম সমস্যা প্রায় সকলের রয়েছে যে, গাছ লাগানোর পর তার ভালো ফলন হয় না।
তাহলে গাছের ভালো ফলন হওয়ার কি কোন উপায় নেই। অবশ্যই উপায় আছে। শুধু কিছু
নিয়ম মেনে গাছগুলোকে লাগাতে হবে এবং সেগুলোর যত্ন করতে হবে। তাহলে খুব কম
সময়ে ভালো ফলন পাওয়া যাবে। মরিচ গাছের ভালো ফলন পাওয়ার জন্য দুইটি পদ্ধতি
অবলম্বন করতে হবে। এ দুইটি পদ্ধতি অবলম্বন করলে মরিচ গাছের ভালো ফলন পাওয়া
যাবে।
১। 3G কাটিং
মরিচ গাছের ভালো ফলন হওয়ার জন্য এই পদ্ধতিটি অনেক কার্যকরী। এ পদ্ধতিটি যদি
অবলম্বন করা যায় । তাহলে মরিচ গাছের ডালপালার সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকবে। আর
যদি মরিচ গাছের ডালপালার সংখ্যা বৃদ্ধি পায় তাহলে অবশ্যই মরিচের
ফলনও বৃদ্ধি পাবে। তাই চলুন দেখেনি কিভাবে থ্রিজি কাটিং করতে হয়।
আপনারা যে চারাটি মাটিতে কিংবা টবে লাগিয়েছেন সেই চারাটি যখন কিছুটা
বড় হয়ে যাবে। তখন সে গাছের আগার অংশটিকে সামান্য একটু কেটে দিতে হবে।
এভাবে কেটে দেওয়ার ফলে গাছটি থেকে অনেক শাখা প্রশাখা বের হতে শুরু করবে। 1G
কাটিং করার পর গাছের যে, নতুন নতুন শাখা বের হবে।
২। মরিচ গাছের সার
এতক্ষণ তো দেখলাম মরিচ গাছের শাখা প্রশাখা কিভাবে আরো বৃদ্ধি পায়।
শাখা-প্রশাখা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে এগুলোতে অনেক মরিচ ধরবে। কিন্তু
এছাড়াও মরিচ গাছের ভালো ফলনের জন্য প্রয়োজন ভালো সারের। তাহলে মরিচ
গাছের ফলন ভালো হবে। এছাড়াও এর সার ব্যবহার করার ফলে মাটিতে যেসব
ব্যাকটেরিয়া গুলো থাকে। সেই সব দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়া এটি মাটির উর্বর
শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তাই এই সার দেওয়ার পদ্ধতিটি মুরগি গাছের জন্য
অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
এই সারটি তৈরি করার জন্য, তেমন বেশি টাকা খরচ হবে না। তাই এটি খুব সহজে আপনারা
তৈরি করতে পারবেন। এর জন্য প্রয়োজন হবে একটি প্লাস্টিক গ্লাসের। সেখানে
পানি দিতে হবে, এরপর কলা এবং কলার খোসা ভালো করে কুচি করে কেটে দিতে হবে।
এরপর সেখানে ব্যবহার করতে হবে, আখের গুড়। এটি এই সার তৈরি করার একটি
গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
এটি গাছের ফলনের জন্য অনেক উপকারি। এটির দামও খুব একটা বেশি নয়। তাই খুব সহজে
বাজারে এটি পেয়ে যাবেন। এই সারটি আপনারা সব ধরনের গাছে ব্যবহার করতে পারবেন। এটি
গাছের বেশি ফলন হতে অনেক সাহায্য করবে। এর শার্টটিকে সুপারফিট বলা হয়। এরপর
এটিকে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর এটিকে ৭ দিন পর্যন্ত রেখে দিতে হবে। সাত
দিন পর মরিচ গাছের গোড়ায় এটিকে ব্যবহার করতে হবে।
পাতা মুড়িয়ে যাওয়ার সমস্যার সমাধান
এছাড়াও গাছের আরো একটি সমস্যা রয়েছে। সেটি হল পাতা মুড়িয়ে যাওয়া। এটি
হওয়ার কারণ মূলত বিভিন্ন প্রকার আক্রমণের জন্য। এটি থেকে মুক্তি পেতে হলে
কয়েকদিন পর পর নিমপাতা রস গাছে স্প্রে করতে পারেন। এটি গাছের জন্য অনেক
উপকারী হবে। সে সঙ্গে খারাপ ব্যাকটেরিয়া গুলো দূর করতেও সাহায্য করবে। আশা করছি
পাকা মরে যাওয়ার সমাধান আপনি পেয়ে গেছেন।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক আশা করছি আজকের আর্টিকেলটি আপনার অনেক উপকার লাগবে। আজকের আর্টিকেল
পড়ে যদি আপনি কোন ভাবে উপকৃত হন তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url