রূপচর্চায় দুধ ও কাঁচা হলুদের ব্যবহার - মুখে কাঁচা হলুদ ব্যবহার করলে কি হয়
রান্নাঘরে হোক কিংবা ত্বক পরিচর্যায় আমাদের অতি পরিচিত একটি উপকরণ হলো হলুদ। বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও ব্যবহার করা হয় এই হলুদের। আমরা ছোট থেকে কম বেশি হলুদের কিছু গুন সম্পর্কে জানি। ত্বকের সমস্যা কিংবা পেটের সমস্যা যেকোন সমস্যার সমাধান এই হলুদ।
কিন্তু হলুদে এমন কিছু উপকারিতা রয়েছে যেগুলো আমরা হয়তো এখনও জানি না। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেই রূপচর্চায় হলুদ - দুধের ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নেই। এবং আজকের এই পর্বে আরও জানবো মুখে কাঁচা হলুদ ব্যবহার করলে কি হয় এই বিষয়।
রোগ প্রতিরোধে হলুদের গুণাগুণ
আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ওষুধ তৈরি করতে অন্যতম একটি উপকরণ হলো এই হলুদ। বিভিন্ন চিকিৎসায় এর ব্যবহার হয়ে আসছে। গবেষণায় জানা গেছে হলুদে প্রচুর পরিমাণে এনটিঅক্সিডেন্ট, এন্টিভাইরাল ও এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে। এছাড়াও অ্যান্টি ডায়াবেটিক ও এন্টিফাঙ্গাল হলুদের গুনাগুন আরো বাড়িয়ে তুলেছে।
হলুদ আমাদের কি কি উপকার করেঃ
হলুদ কে ভারতীয় জাফরান বা সোনার হলুদ বলা হয়। হলুদের বিজ্ঞানসম্মত নাম হল CURCUMA LONGA। প্রায় আড়াই হাজার বছর ধরে বিভিন্ন চিকিৎসায় হলুদের ব্যবহার চলে আসছে। হলুদের সব থেকে শক্তিশালী উপাদান গুলো হলোঃCurcumin,Curcuminoids,Essential Oill যা আপনার স্বাস্থ্যের প্রতিটি কার্যকলাপকে আরো বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।
হাড়ের ব্যথা সমস্যা কিংবা ডায়বেটিসের সমস্যা হোক না কেন হলুদকে একটি ওষুধ উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাই আমাদের অবশ্যই জানা উচিত কেন আমাদের জন্য এতটা উপকারী।কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আইরন, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি৬, ফাইবার, কপার, পটাশিয়াম ইত্যাদি আর উপাদান রয়েছে। যেগুলো আমাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
নিয়মিত হলুদ পানি খাওয়ার উপকারিতা
আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় হলুদ রাখার ফলে এটি আমাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা
অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। তবে নিয়মিত কাঁচা হলুদ খাওয়া শুরু করার আগে হলুদের
উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে হবে। হলুদের রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট,
অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও এন্ড টি ভাইরাল উপাদান। যেগুলো শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা
বাড়ে তুলতে অনেক সাহায্য করে। এছাড়াও শরীরের যে কোন খারাপ ব্যাকটেরিয়া
গুলোকে ধ্বংস করে দিতেও সাহায্য করে। ফলে বড় বড় অনেক রোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে
যায়।
লিভার সুস্থ রাখে হলুদ
মানব দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল এই লিভার। তাই লিভার সুস্থ রাখাটা খুবই
প্রয়োজনীয়। হলুদের থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান গুলি লিভারের যেকোনো ধরনের
সমস্যা দূর করতে অনেক সাহায্য করে। গবেষণায় ও জানা গেছে যে হলুদে থাকা
Curcumin উপাদান লিভারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা পালন
করে। ফল এ লিভারের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়।
টাইপ টু ডায়াবেটিসদের জন্য হলুদ অনেক উপকারী
ডায়াবেটিস রোগীদের অবশ্যই শর্করা জাতীয় খাবার একটু সাবধানে খেতে হবে। আর যতটা সম্ভব চেষ্টা করতে হবে শর্করা জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলার। আর এই হলুদ রক্তের শর্করা মাত্রা নিয়ন্ত্রণা রাখতে সাহায্য করে। গবেষণায় ও জানা গেছে যে, প্রতিদিন সকালে কাঁচা হলুদ খাওয়ার ফলে শরীরে এমন কিছু উপাদান সৃষ্টি হয় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক উপকারী।
যেগুলো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে অনেক সাহায্য করে। এ ছাড়া এগুলো রক্তে
ইনসুলিনের মাত্রা বৃদ্ধি করতো সাহায্য করে। আর আমরা হয়তো সকলেই জানি যে,
ইনসুলিনের মাত্রা কম হওয়ার কারণে মূলত ডায়াবেটিস রোগের দেখা দেয়। তাই যদি
ইনসুলিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় তাহলে এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক উপকারি।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে হলুদ
হলুদের থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান শরীরের বিভিন্ন খারাপ ব্যাকটেরিয়া গুলোকে
ধ্বংস করতে সাহায্য করে। ফলে শরীরে বিভিন্ন রোগের আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়। তেমনই
হলুদের থাকা এই এন্ট্যাকসিন উপাদান গুলো ক্যান্সার কোষ তৈরি করতে বাধা প্রদান
করে। এমনকি এটি গবেষণা জানা গেছে যে, যারা নিয়মিত কাঁচা হলুদ খান তাদের বিভিন্ন
ধরনের ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
বর্তমানে মানুষ বাহিরে বেশি খাবার খাচ্ছে। আর বাহিরে এই খাবারগুলোতে ক্যালরির
পরিমাণ অনেক বেশি রয়েছে। এছাড়া কিছু হরমোন কত কারণে ও জন বৃদ্ধি হয়ে যায়। অনেক
কিছু করেও ওজন কমানো যায় না। হলুদে থাকা অ্যান্টি অভিসেটি
উপাদানগুলো শরীরে অতিরিক্ত মেদ সৃষ্টি হতে বাধা প্রদান করে। ফলের
শরীরের ওজন খুব সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
মুখে কাঁচা হলুদ ব্যবহার করলে কি হয়ঃ
বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার পাশাপাশি রূপচর্চায়ও কাঁচা হলুদের ব্যবহার হয়ে আসছে
বহুকাল থেকে। রূপচর্চার অন্যতম একটি উপাদান হল এই হলুদ। এমনকি এর বিভিন্ন
উপকারিতাও প্রমাণিত হয়েছে। হলুদে যেহেতু অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান অনেক
পরিমাণে রয়েছে। তাই এটি ত্বকের বিভিন্ন ধরনের খারাপ ব্যাকটেরিয়া দূর করতে
সাহায্য করে। এবং ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করত সাহায্য করে।
বয়স কিংবা হরমোনগত কিছু কারণের জন্য আগে ত্বক ফর্সা থাকলেও ধীরে ধীরে কালো
হয়ে যায়। এটির আরও বিভিন্ন কারণ রয়েছে। কিন্তু হলুদ ত্বকে ব্যবহার করার ফলে,
ত্বকের বিভিন্ন উপকারিতা পাওয়া যায়। এটি ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে অনেক
সাহায্য করে। ত্বকের বিভিন্ন দাগ দূর করা থেকে শুরু করে ত্বক ফর্সা করতে
সাহায্য করে এই হলুদ। তাই মানুষ বিভিন্নভাবে হল ত্বকে ব্যবহার করেন।
ত্বকের যত্নে হলুদের ব্যবহারঃ
আমরা বিভিন্নভাবে ত্বকের যত্নে হলুদ ব্যবহার করি। অনেকে কাঁচা হলুদ এমনিতে ব্লেন্ড করে মুখে ব্যবহার করেন।আপনারা চাইলেও হলুদের সাথে বিভিন্ন উপকরণ মিশিয়ে করে মুখে ব্যবহার করতে পারবেন। যেমনঃ
- কাঁচা হলুদ ব্লেন্ড করে এর সাথে দুধ ব্যবহার করতে পারেন। এটি ত্বকের বিভিন্ন দাগ দূর করতে ও ত্বক কোমল রাখতে সাহায্য করবে।
- শুষ্ক ত্বকের সমস্যা প্রায় সবারই রয়েছে। সেজন্য কাঁচা হলুদের ব্লেন্ডের সাথে মধু ব্যবহার করতে পারেন। এটি তাকে শুষ্কতা দূর করতে অনেক সাহায্য করবে।
- কাঁচা হলুদের রসও ত্বকের জন্য অনেক উপকারী।
কাঁচা হলুদের কি কি অপকারিতা রয়েছেঃ
কাঁচা হলদে যেমন অনেক উপকারিতা হয়েছে তেমনি এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে। তাহলে
চলুন জেনে নেই এর কিছু অপারিত সম্পর্কে। একটা খাবারের উপকারী ও অপকারী দিক
সম্পর্কে আগে থেকে জানা প্রয়োজন। কারণ পরবর্তী কোনো সময়ে ঝামেলা সম্মুখীন
না হতে হয়।
আমরা এতক্ষণ জানলাম যে, হল ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক উপকারী। কিন্তু ডায়াবেটিসের মেডিসিন নেওয়ার পাশাপাশি যদি supplement হিসেবে হলুদও খাওয়া হয় তাহলে এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রাখা দিতে পারে। কারণ আমরা আগে জেনেছে হলুদ রক্ত সুগারের কমাতে সাহায্য করে। যদি মেডিসিন খাওয়ার পাশাপাশি হলুদও নিয়মিত ভাবে খাওয়া হয়। তাহলে রক্ত অনেক কমে যাবে। যা একদমে ভালো লক্ষণ নয়। এ থেকে বড় কোন সমস্যা হয়ে যেতে পারে।
তাই নিয়মিত হলুদ খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ দিতে হবে।হলুদ প্রচুর পরিমাণে খাওয়ার ফলে পেটের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমনঃ পেট ফাঁপা, পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া, এছাড়া এসিডিটিরও সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার মাথা ব্যথা কিংবা মাথা ঘোরার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই একদম অতিরিক্ত পরিমাণে হলুদ খাওয়া ভালো নয়।
এছাড়াও গর্ভবতী মহিলাদের জন্য হলুদ খাওয়া একদম উপকারী নয়। তবুও ডাক্তারের
পরামর্শ নিতে পারেন। কারণ হলুদ খাওয়ার ফলে আপনার মিস ক্যারেজ হয়ে যেতে পারে।
তাই গর্ভবতী অবস্থায় যেকোনো খাবার খুব সাবধানতার সাথে খেতে হবে।
রূপচর্চায় দুধ ও কাঁচা হলুদের ব্যবহার
প্রিয় পাঠক আপনি জানতে চেয়েছেন রূপচর্চায় দুধ ও কাঁচা হলুদের ব্যবহার
সম্পর্কে। রূপচর্চায় দুধ ও কাঁচা হলুদের ব্যবহার সম্পর্কে জানতে নিম্নে আলোচনা
করেছি বিস্তারিত বিষয় দেখে নিন।
রূপচর্চায় দুধ এবং কাঁচা হলুদ হলো দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। দুধ হল পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু, যা ত্বকে তাজজনন ও উজ্জ্বলতা দেয়। দুধে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন এবং বিভিন্ন ধাতুর প্রস্তুতি থাকে, যা শারীরিক ও মানসিক উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
কাঁচা হলুদ তার উজ্জ্বল হলুদ রঙের জন্য পরিচিত, যা খাদ্য এবং চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি ভিটামিন, এন্টিঅক্সিডেন্ট, এবং এন্টিইনফ্ল্যামেটরি গুণের জন্য পরিচিত। তার ব্যবহার ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করতে, রক্তনালী শোকের সাহায্যে, এবং অনেক চিকিৎসার উপকারিতা দেয়।
এই উপাদানগুলির একত্রে ব্যবহার করতে তাদের সমন্বয় তৈরি করে দুধে হলুদ চা বা ক্যারামেলে অনেক স্বাদের স্বাদ নিতে পারেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url