দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির উপায়
দুশ্চিন্তা সবারই রয়েছে। হোক সেটা ছোটখাটো বিষয় কিংবা বড় বিষয়। কিন্তু অতিরিক্ত দুশ্চিন্তাও ভালো নয়। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করাকে এক ধরনের মানসিক চাপ বলা হয়। এ ধরনের রোগকে বলা হয় এক্সাইটিং ডিসঅটার।
যারা এ ধরনের সমস্যায় ভোগে, তারা খুব সহজেই দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। ছোটখাটো বিষয়কে খুব সিরিয়াস ভাবে নিয়ে নেয়। খুব অল্পতেই তারা অনেক দুশ্চিন্তা করতে শুরু করে।আজকে আমরা আলোচনা করব দুশ্চিন্তা থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যায় এই সম্পর্কে। যদি জানতে চান তাহলে পুরো পর্বটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ভূমিকা
দুশ্চিন্তা হলো এমন একটা জিনিস যেমন ধরেন, আপনাকে কোন একটা কাজ দেওয়া হলো। সে কাজের জন্য আপনার কাছে খুব কম সময় আছে কিংবা আপনি সে কাজের সম্পর্কে খুব ভালো জানেন না।তখন অবশ্যই আপনার মাথায় বিভিন্ন ধরনের চিন্তা ভাবনা আসে যে, আমি কিভাবে কাজটা করবো ।
আমি কি আদৌ করতে পারব। এধরনের চিন্তা গুলোকে মূলত বলা হয় দুশ্চিন্তা। এ ধরনের চিন্তাভাবনাকে দুশ্চিন্তা বলার কারণ, ধরুন আপনাকে সে কাজটা দেওয়া হয়েছে আপনি এখন সে কাজটা সম্পর্কে খুব ভালো জানেন না। কিন্তু আপনি তো চেষ্টা করতে পারেন।
হ্যাঁ একটু খাটনি করতে হবে, কিন্তু চেষ্টা করলে তো অবশ্যই পারবেন। তাই এ ধরনের চিন্তাভাবনাকে দুশ্চিন্তা বলা হয়ে থাকে। ফলে ব্রেনের উপর মানসিক চাপ পড়তে থাকে। এ থেকে মূলত আপনার অতিরিক্ত দুশ্চিন্ত করার সমস্যাটা শুরু হয়ে থাকে।
অজান্তে দুশ্চিন্তায় ভোগা
আমাদের মানসিক চাপটা দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি ভালো এবং অপরটি খারাপ। ভালো টি
হলো যেমনঃ ধরুন আপনার সামনে পরীক্ষা। অবশ্যই আপনার অনেক চিন্তা রয়েছে যে
পরীক্ষার পড়া গুলো খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে। তাড়াতাড়ি সব পড়াগুলোকে রিভাইস
করতে হবে।এ ধরনের চিন্তা গুলোকে পজেটিভ চিন্তাভাবনা বলে। আর অন্যদিকে, যে
চিন্তা আপনাকে শান্তিতে থাকতে দেয় না। বা বহুদিন ধরে সে চিন্তা
আপনাকে বিরক্ত করে যাচ্ছে। এ ধরনের চিন্তাগুলোকে খারাপ চিন্তা ভাবনা বলা
হয়।
দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির উপায়
আমাদের প্রত্যেকের জীবনে দুশ্চিন্তা রয়েছে। এই দুশ্চিন্তার মাধ্যমে একজন মানুষ সফল হতে পারে তার জীবনে। আবার এই দুশ্চিন্তার কারণে অনেক মানুষ তার জীবনে অসফল হয়ে থাকে। এরকমটি হওয়ার কারণ হল, তারা নিজের দুশ্চিন্তাকে কন্ট্রোল করতে পারে না।
কথায় আছে না যখন ব্রেইন আপনার হাতের মুঠোয় হয়ে যাবে তখন যা ইচ্ছা আপনি তাই করতে পারবেন। তখন অসম্ভব তাজ ও সহজে যায়। তেমনি হল এই দুশ্চিন্তা এই দুশ্চিন্তাকে যদি আপনি আপনার নিজের কন্ট্রোলে রাখতে পারেন।
তাহলে এ থেকে আপনি আপনার জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে পারবেন। আর যদি না কন্ট্রোল করতে পারেন তাহলে আপনার জীবনকে আপনি শূন্য করে গড়ে তুলতে পারবেন না। আবার এই অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণে হতে পারে বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যা। তাই অবশ্যই দুশ্চিন্তাকে নিজের কন্ট্রোলে রাখতে হবে। তাই নিচে দুশ্চিন্তা কন্ট্রোলে রাখার কিংবা দুশ্চিন্তা দূর করার কিছু উপায় দেওয়া হলোঃ
১। নিজের পছন্দ অনুযায়ী কাজ করা
কাজের ফাঁকে আপনি যখন সময় পাবেন। তখন আপনি আপনার নিজের ইচ্ছা মত কাজ করবেন। এতে করে আপনার মনটা ভালো থাকবে। সেই সঙ্গে আপনার দুশ্চিন্তাও দূর হয়ে যাবে। যেমন ধরুন আপনার নতুন জামা পড়তে ইচ্ছা করে তাহলে নতুন জামা বের করে পড়ে ফেলুন। আবার আপনারা খাবার খেতে ভালো লাগে । তাহলে বাড়িতে বানিয়ে কিংবা বাহিরে রেস্টুরেন্টে যেয়ে কোন একটা ভালো খাবার খেয়ে নিন। আবার যাদের সাজতে ভালো লাগে তারা ঘরে বসে সাজবে।
তাহলে মনের দুশ্চিন্তা টা অনেকটাই কমে যাবে। আর মনটা ভালো থাকবে। আবার কারো ড্রইং
করতে ভালো লাগে, তারা ড্রইং করবেন। আবার অনেকের মুভি দেখতে ভালো
লাগে তারা মুভি দেখবেন। যদি একা দেখতে ভালো না লাগে পাশে কাউকে নিবেন। তাহলে
আপনি তার সাথে কথা বলতে পারবেন ফলে আপনার মনটাও হালকা হয়ে যাবে।
২। নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখা
নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখা দুশ্চিন্তা দূর করার একটি ভালো উপায়। কারণ আপনি যখন
আপনার কাজে ব্যস্ত থাকবেন। তখন আপনার পুরো মনোযোগ আপনার কাজের উপরে থাকবে।
ফলে আপনি আপনার দুশ্চিন্তার কথা ভুলে যাবেন। আবার সেই
দুশ্চিন্তার কারণে আপনার মানসিক চাপের মতো কোনো প্রভাব পড়বে না। তাই
যখন দুশ্চিন্তায় ভুগছেন তখন যতটা খারাপ নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা
করুন।
৩। ফানি ভিডিও দেখা
দুশ্চিন্তা দূর করার অন্যতম একটা মাধ্যম হলো ফানি ভিডিও দেখা। ফানি ভিডিও দেখার
ফলে আপনার মন একটু ভালো হবে। কারণ ফানি ভিডিওতে এমন এমন ভিডিও থাকে
যেগুলো দেখে আপনি এমনিতে হেসে দিবেন। আর হাসাটা স্বাস্থ্যের পক্ষেও কিন্তু অনেক
ভালো। তাই দুশ্চিন্তে ভুগলে ফানি ভিডিও দেখা কার্যকর একটি উপায় হতে পারে।
আর যাদের ফানি ভিডিও ভালো লাগে না, তারা অন্য কোন মুভি দেখতে পারে যেটা দেখতে
তাদের ভালো লাগে।
অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা কীভাবে দূর করবেন
এটাই দুশ্চিন্তা দূর করার একটি কার্যকরী মাধ্যম। কারণ আপনি যখন কোন দুশ্চিন্তায়
ভুগছেন তখন আপনার নিজের মধ্যে আপনি কতগুলো প্রশ্ন এবং সেগুলোর জবাব দেন। ফলে
আপনি কনফিউজ হয়ে যান যে আপনি কি করবেন। তখন যদি আপনার দুশ্চিন্তার কথাগুলো কারো
কাছে শেয়ার করেন এবং সে আপনাকে যদি কিছু পরামর্শ দেয় তাহলে এটা আপনার জন্য
অবশ্যই ভালো হবে। আর মনের কথা শেয়ার করার ফলে আপনার মনটা একটু হালকা হয়ে যাবে।
ফলে দুশ্চিন্তা অনেকটাই কমে আসবে।
পজেটিভ চিন্তা করা বা নেতিবাচক চিন্তা থেকে দূরে থাকবেন যেভাবে
দুশ্চিন্তা দূর করার জন্য এবং নিজেকে আরও ভেতর থেকে শক্ত করে তোলার জন্য পজেটিভ চিন্তাভাবনা অনেক দরকার। কারণ পজিটিভ চিন্তা ভাবনার কারণে মনের জোর বাড়ে। ফলে দুশ্চিন্তাও দূর হয়ে যায়। যখন আপনি কোন দুশ্চিন্তার ভেতরে পজেটিভ চিন্তাভাবনা ঢুকাবেন।তখন অটোমেটিকলি আপনার দুশ্চিন্তাটি দূর হয়ে যাবে। মনের সাহস বাড়বে। তাই দুশ্চিন্তা দূর করা এবং মনের সাহস বাড়ানোর জন্য পজেটিভ চিন্তাভাবনাটি অনেক প্রয়োজন।
দুশ্চিন্তা, হতাশা ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে ইসলামিক সমাধান
অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন সাহাবীরা ও নবী রাসুলরা তাদের দুশ্চিন্তা কিংবা
ডিপ্রেশন দূর করার জন্য ইসলামিক উপায় বেছে নিতেন। কারণ ইসলাম অর্থ শান্তি।
তাই ইসলাম বিভিন্ন ধরনের দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ ও ডিপ্রেশন খুব সহজে
দূর করে দেয়। অন্যান্য উপায় ব্যবহার করার পাশাপাশি ইসলামিক
উপায়েও দুশ্চিন্তা দূর করা যায়। তাই ইসলামিক উপায়ে কিভাবে দুশ্চিন্তা দূর
করা যায় তারও কিছু নিয়ম নিচে দেওয়া হলঃ
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া
নামাজ এমন একটা জিনিস। যে জায়নামাজে দাঁড়ানোর পরে আপনার মনে একটা প্রশান্তির বাতাস বয়ে যাবে। যখন আপনি হাত তুলে আল্লাহর কাছে আপনার মনের কথাগুলো বলবেন । তখন আপনার মনে অনেকটা কষ্ট দূর হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা স্বয়ং আপনার দুশ্চিন্তাগুলোকে দূর করে দিবন।
তাই দুশ্চিন্তা দূর করতে হলে অবশ্যই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হবে। শুধু যে দুশ্চিন্তা দূর করার জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হবে তা কিন্তু হবে না। মনে রাখবেন, আল্লাহর ইবাদত করার ফলে এখানে আল্লাহর কোন সুবিধা হচ্ছে না। বরং সেখানে আপনার সুবিধা হচ্ছে। কারণ আপনি যখন আল্লাহকে খুশি করবেন।
তখন খুশি হয়ে আল্লাহ তায়ালা আপনার মনের ইচ্ছা গুলো পূরণ করবে। আর আপনি যদি
ইসলামের পথে থাকতে পারেন এবং ঈমান নিয়ে থাকতে পারেন তাহলে আপনি আপনার জীবনে একজন
সফল ব্যক্তি হতে পারবেন।
কোরআন তেলোয়াত শোনা কিংবা তেলাওয়াত করা
কোরআন তেলাওয়াত শোনা কিংবা তেলাওয়াত করার মধ্যে দিয়ে মনের মধ্যে একটা অন্য
ধরনের প্রশান্তি কাজ করে। তাই এটিও দুশ্চিন্তা দূর করার একটি ভালো মাধ্যম। তাই
দুশ্চিন্তা দূর করতে হলে অনেকে কোরআন তেলাওয়াত শুনতে পারেন।আবার অনেকে চাইলে
কোরআন তেলাওয়াত করতে পারেন।
আল্লাহর জিকির করা
এটিও দুশ্চিন্তা দূর করার একটি ভালো উপায়। অনেক সময় বলা হয় জিকির করার মাধ্যমে রুহ সতেজ থাকে। তাই আল্লাহর জিকির করা উচিত। দুশ্চিন্ত থেকে দূর করতে হলে আপনারা আল্লাহর জিকির করতে পারেন।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক আশা করছি আজকের এই পর্বটি আপনি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন তাহলে অবশ্যই জানতে পেরেছেন দুশ্চিন্তার মুক্তির উপায় কি। আজকের এই পর্ব যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনি কমেন্ট করে জানাবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url