মধু ভেজাল না খাঁটি? সহজে বুঝার দারুন উপায়

সুস্থ জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজন সঠিক খাদ্য অভ্যাসের। কারণ সঠিক খাদ্য অভ্যাসের মাধ্যমে আমাদের জীবনকে আমরা সুন্দর করে গড়ে তুলতে পারবো। সঠিক খাদ্য অভ্যাসে প্রয়োজন কারণ আমাদের দেহের যাবতীয় প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ এই খাবার থেকেই পায়। 


তাই সুস্থ থাকার জন্য অবশ্যই সঠিক খাদ্য অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। আমরা প্রকৃতি থেকে বিভিন্ন পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাদ্য পায়।এক একটি খাদ্যের এক এক পুষ্টিগুণ রয়েছে। তেমনি এক ধরনের অন্যতম খাদ্য হলো মধু।মধু পাওয়া যায় বিভিন্ন ফুল থেকে। মৌমাছিরা সে ফুলগুলো থেকে মধু সংগ্রহ করে মৌচাকে রাখে। আর সেখান থেকে আমরা এ মধু পাই।

ভূমিকা

মধুগুলো বিভিন্ন ফুলের মিশ্রণে তৈরি হয়ে থাকে। তাই এগুলোর পুষ্টিগুণও অধিক।বহু বছর আগে থেকে ভারতে এগুলো এক ধরনের আয়ুর্বেদিক হিসেবে ব্যবহার করা হতো।এমনকি আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানও গবেষণা করে জানতে পেরেছেন মধুর বিভিন্ন গুণাবলী সম্পর্কে। 
এমনকি মিশরীয় সভ্যতায়ও বিভিন্ন চিকিৎসায় মধুর ব্যবহার করা হতো যেমনঃ চোখের সমস্যা, বিভিন্ন আঘাত ও ত্বকের সমস্যা ভালো করার জন্য মধু ব্যবহার করা হতো। আজও মধু আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় একটি কার্য করে ভূমিকা রেখে চলেছে।

মধু খাওয়ার উপকারিতা ও এর পুষ্টিগুণ

মধু সংগ্রহ করা হয় বিভিন্ন ফুল থেকে। একটি ফুলের যদি একটি পুষ্টিগুণ থাকে তাহলে, অনেকগুলো ফুলের অনেক পুষ্টিগুণ থাকবে। তাই মধুর পুষ্টিগুণও অধিক। পুরনো কাল থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত মধু আমাদের বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করে আসছে। শীতকালে শরীর গরম রাখার জন্যও মধু অন্যতম ভূমিকা পালন করে। 

মধু প্রাচীনকাল থেকেই প্রাকৃতিক খাদ্য হিসেবে, চিকিৎসা সামগ্রী হিসেবে ও সৌন্দর্য চর্চা সহ নানা কাজে এই মধু ব্যবহার হয়ে আসছে। এছাড়া শরীরের সুস্থতায় মধুর নানা উপকারিতাও রয়েছে।মধুতে রয়েছে গ্লুকোজ, অ্যামাইনো এসিড, ক্যালরি, খনিজ লবণ এছাড়াও বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এইসব কারণে মধু আমাদের জন্য অনেক উপকারী। তাই চলুন জেনে নিন মধু কিছু উপকারিতা সম্পর্কে।

মধু খাওয়ার উপকারিতা

মধুতে রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। যেগুলো আমাদের শরীরের বাইরে ও ভেতরের বিভিন্ন খারাপ ব্যাকটেরিয়া গুলোকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে। যেকোনো ধরনের সংক্রমণ থেকে দেহকে রক্ষা করে। এসব রোগের সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচানোর পাশাপাশি এটির প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও অনেক সাহায্য করে।

মেদ-ভুঁড়ি আর বাড়তি ওজন কমাতে মধু ডায়েট

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য মধু একটি কার্যকরী খাবার। কারণ এটি শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে অনেক সাহায্য করে। এছাড়া মধু খাওয়ার ফলে বেশিরভাগ সময় আমাদের পেট ভরা থাকে। তাই অন্যান্য খাবার খেতেও মন চায় না। এর ফলে ডায়েট কন্ট্রোল হয়ে যাবে। তাই খুব সহজেই ওজনও নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে।

বুদ্ধি বাড়ে মধুতে

মধু যে শুধু আমাদের শরীরের শক্তি বাড়ায় তা কিন্তু নয়। শরীরের শক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি বুদ্ধি শক্তিও বাড়াতে সাহায্য করে। প্রতিদিন রাতে যদি মধু খাওয়া যায় তাহলে, ব্রেনের সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। তার ফলে মস্তিষ্কের কর্ম ক্ষমতা আরো বৃদ্ধি পায়। সে সঙ্গে বুদ্ধির জোরো আরো বেড়ে যায়।  কম সময়ের জটিল কোন সমস্যার সমাধান খুব সহজেই করা যাবে।

পেশির শক্তি বাড়ায়ঃ

মধুতে রয়েছে প্রাকৃতিক চিনি যেগুলো আমাদের শরীরের শক্তি যোগাতে সাহায্য করে। পেশিকে কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে। ফলে বেশি শক্তি আরও বৃদ্ধি পায়। তাই বেশি শক্তি বাড়াতে মধু অনেক সাহায্য করে।

শরীরের বিভিন্ন ব্যথা দূর করে

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে বিভিন্ন ধরনের ব্যথা সৃষ্টি হয়। এছাড়াও বিভিন্ন কারণে শরীরের ব্যথা সৃষ্টি হতে পারে। এগুলো দূর করতে মধু অনেক সাহায্য করে। তাই বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের মধু নিয়মিত খেতে হবে।

তরুণ্য ধরে রাখে

মধু এমন একটি উপাদান যার মধ্যে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যেগুলো ত্বকের খারাপ ব্যাকটেরিয়া গুলোকে ধ্বংস করে। সে সঙ্গে ত্বকের উজ্জ্বলতাকে আরো বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এই এন্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।

রক্তনালী পরিষ্কার রাখে

মধু নিয়মিত খেলে রক্তনালীর বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়ে যায়। অর্থাৎ রক্তনালী পরিষ্কার থাকে। সেখানে দূষিত কোন পদার্থ বেশীক্ষণ থাকতে পারবেনা। ফলের হৃদরোগের ঝুঁকে অনেকটা কমে যায়। এছাড়াও মধু খাওয়ার ফলে শরীরের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়। 

সেই সঙ্গে ভালো কোলেস্টেরনের মাত্রা বাড়াতেও সাহায্য করে। তাই হার্ট অ্যাটাক কিংবা স্টকের মত বিভিন্ন ঝুকির আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়।

রক্তস্বল্পতা কামায়

মধুতে রয়েছে আয়রনের একটি ভালো উৎস। আয়রন আমাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে রক্ত উৎপাদনও বেড়ে যায়। তাই যারা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন তারা নিয়মিতভাবে মধু খেতে পারেন। এতে আপনাদের রক্তস্বল্পতার সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে। এছাড়াও যারা অ্যানিমিয়া রোগে আক্রান্ত। মধু তাদের জন্য অনেক উপকারী।

মধু ভেজাল না খাঁটি? সহজে বুঝার দারুন উপায়

আজকাল বাজারে বিভিন্ন ভেজাল যুক্ত খাবার প্রায় দেখা যায়। এসব আমাদের শরীরের জন্য ভালো নয়। এ থেকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। মধু আমাদের জন্য অনেক উপকারী। তাই অবশ্যই নিয়মিত ভাবে মধু খাওয়া প্রয়োজন। বাজারে যেসব মধু কিনতে পাওয়া যায়, সেই মধুগুলোতে মধুর আসল পুষ্টিগণ থাকে না। মানুষের চাহিদা মিটানোর জন্য বিভিন্ন জিনিসে মধুতে মেশানো হয়। তাই মধুর যে আসল উপকারিতা গুলো, সেগুলো পাওয়া যায় না।

তাই বাজার থেকে কিনে আনা মধু কি খাঁটি না নকল সেটা কি করে বুঝবো এটা অবশ্যই সকলের জানা প্রয়োজন। তাহলে সেসব খারাপ মধু থেকে কোন ধরনের ক্ষতি হওয়ার আগে সচেতন হওয়া যাবে। তাই অবশ্যই জানা উচিত। তাহলে চলুন দেখে নেই মধু কি আসল না নকল সেটা কিভাবে বুঝবো।খাঁটি মধু চেনার যে উপায়গুলো নিচে দেওয়া হয়েছে, সেভাবে পরীক্ষা করে আপনি খুব সহজে বুঝতে পারবেন যে মধুটি খাঁটি কিনা।

খাঁটি মধু চেনার কিছু কার্যকরী উপায়ঃ

১। মধু চেনার প্রথম উপায় হল চা। চায়ের সঙ্গে বাজার থেকে কেনা আনা সে মধু চিনির বদলে ব্যবহার করতে হবে। চিনি দেওয়ার পর যেমন চিনেটিকে গুলিয়ে নেওয়া হয়। মধুতেও ঠিক তেমনভাবে হালকা করে একটু গুলিয়ে নিতে হবে। এরপরে চা খাওয়ার পর যদি, চা মিষ্টি লাগে তাহলে বুঝবেন মধুটি খাঁটি নয়। আর যদি চা খাওয়ার পর খুব একটা মিষ্টি নয় সেই সঙ্গে লিকারের ফ্লেভারটা পাওয়া যায়, তাহলে বুঝবেন মধুটি আসলেই খাঁটি।

২। আমাদের নানা- নানি কিংবা দাদা- দাদীরা পান খেয়ে থাকে। তারা পান খাওয়ার সময় চুন ব্যবহার করে। চুন এক ধরনের ক্ষার জাতীয় পদার্থ। এ প্রক্রিয়া মধুটিকে পরীক্ষা করতে হলে, প্রথমে হাতের তালুতে কিছু পরিমাণ মধু  নিয়ে নিতে হবে। এরপর সামান্য পরিমাণে চুন নিতে হবে। এরপর হাতে থাকা ভালো করে ঘষতে হবে। মধু এবং চুন হাতে ঘসার সময় সেখানে এক ধরনের তাপ উৎপন্ন হবে। আপনার হাতে যদি তাপ উৎপন্ন হয় তাহলে বুঝবেন মধুটি খাটি। আর যদি গরম অনুপাত না হয়ে শুধু আঠালো অনুভব হয়, তাহলে বুঝবেন মধুটি খাঁটি নয়।

৩। এই পরীক্ষাটি করতে হলে আপনার প্রয়োজন একটি গ্যাস লাইটারের এবং একটি কাগজের। কাগজটি সামান্য পরিমাণে প্রয়োজন হবে। একটা আঙ্গুলের সমান করে কাগজ থেকে কেটে নিতে হবে, এ পরীক্ষাটি করার জন্য মধু সে কাগজে ভরাতে হবে। এরপরে গ্যাস লাইট এর সেই কাগজে আগুন ধরাতে হবে। মধু এমন একটি পদার্থ এটি তে আগুন দিলে সহজে আগুন আরো জ্বলে ওঠে। তাই কাগজটি যদি জ্বলে উঠে তাহলে বুঝবেন মধু। যদি ভেজাল সমৃদ্ধ থাকে তাহলে সহজে সেখানে আগুন ধরবে না এ থেকে বুঝে নিতে পারবেন যে মধুটি খাঁটি নয়।

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url