অশান্ত মন শান্ত করার ৫ উপায়

মানসিক অশান্তির ফলে মানুষের জীবন অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। মানুষের অশান্তির ফলে কোন কাজে মন বসে না। কোন কিছু ভালো লাগে না। মানুষের জীবনে অশান্তি আসবে এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু সকলে অশান্তি কাটিয়ে তুলতে পারে না। ফলে তার জীবন দুর্বিষয় হয়ে ওঠে।


কোথায় আছে মনের শান্তি বড় শান্তি। মন শান্ত না থাকলে আশেপাশের কোন কিছুই ভালো লাগেনা। মনের অশান্তির ফলে অনেকেই শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। তাই মনের অশান্তি দূর করা খুবই প্রয়োজন।

মানুষের মন অশান্ত হয় কেনঃ

মানুষ সারাদিন কিছু না কিছু ভাবতে থাকে। আমাদের মাথায় চিন্তা সৃষ্টি হয়, যখন আমাদের ব্রেন কোন কাজ থেকে বিরতি নেই। সেই সময় আমাদের মাথায় বিভিন্ন ধরনের চিন্তাভাবনা সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে এই যেমনঃ কি করব, কাজটা করা কি ঠিক হয়েছে, ভবিষ্যতে কি হবে ইত্যাদি আরও নানা ধরনের চিন্তাভাবনা আমরা পড়ে থাকি। 

চিন্তা ভাবনা মূলত এখন আর কল্পনা। আমরা কল্পনার জগতে গিয়ে এইসব চিন্তা ভাবনা করে থাকি। চিন্তা আসতে পারে যেমনঃ পুরনো কোন স্মৃতি, খারাপ সময় গুলো, ভালো সময় আরো বিভিন্ন ধরনের চিন্তাভাবনা করে থাকে।মানুষের দুশ্চিন্তার ও অশান্তির মূল কারণ হলো এই ভাবনা । 

যে বিষয়ে মানুষ যত বেশি ভাবে সেই বিষয়ে চিন্তা আমাদের মাথায় ঘুরতে থাকে। যদি খারাপ সময় গুলোর কথা বারবার ভাবি। তাহলে মাথায় সেটা ঘুরপাক খেতে থাকে।আর এই কারণে মূলত মনে অশান্তির সৃষ্টি হয়। মন অস্থির হয়ে পড়ে।মানুষের মাথায় চিন্তা ভাবনা আসবে এটা স্বাভাবিক। 

তাই বলে যে সবসময় মাথায় চিন্তা ভাবনা আসবে এটি কিন্তু অস্বাভাবিক। সব সময় চিন্তা ভাবনা করার জন্য মানুষের অশান্তি বোধ হয়। কোন কিছু ভালো লাগে না।

মন শান্ত করার পাঁচটি উপায়ঃ

মানুষের মন সব সময় শান্ত থাকে না। মনের মানুষের মনে অশান্তি সৃষ্টি হয়ে থাকে। অশান্তি সৃষ্টি মানব জীবনে একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। কারণ এটি জীবনের সাথেও জড়িয়ে আছে। কিন্তু মানসিক অশান্তির কারণে শরীরে যে কোন ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। অনেকে আছে যারা খুব সহজেই মানসিক অশান্তি গুলোকে কাটিয়ে তুলতে পারে। আবার অনেকেই অশান্তি গুলোকে কাটিয়ে তুলতে পারেনা। এর ফলে শরীরের যে কোন ধরনের ক্ষতিও হয়ে যেতে পারে। তাই আজকে জানবো কিভাবে অশান্ত মনকে শান্ত করা যায়।

মন শান্ত রাখার উপায়ঃ

১। ঘুমানোর চেষ্টা করা

ঘুম এমন একটি জিনিস যা খুব সহজে আমাদের মনকে শান্ত করতে পারেন। তাই যখনই মানসিক অশান্তির সৃষ্টি হবে তখন ঘুমানোর চেষ্টা করা ভালো। ঘুমানোর ফলে আমাদের ব্রেন শান্ত থাকে। বিভিন্ন ধরনের দুশ্চিন্তা থেকে দূরে রাখে। মাথায় এসব দুশ্চিন্তার কারণে মূলত মন অশান্ত হয়ে থাকে। তাই সেই সময়ে ঘুমানোর চেষ্টা করা ভালো। এতে আপনার মন ও মাথা দুটোকে খুব সহজে শান্ত করতে পারে।

২। কারো কাছে আপনার অশান্তির কথা বলা

যখন মানসিক অশান্তির সৃষ্টি হয় তখন মন ভালো থাকে না। আর যদি আপনি, আপনার অশান্তির কারণগুলো কারো সাথে ভাবনা করতে পারেন তাহলে মনকে শান্ত করা অনেক কষ্টকর হয়ে যায়। তাই মানসিক অশান্তি বোধ করলে সে অশান্তির কারণ কারো কাছে বলা। এমন ধরনের কারণ হতে পারে যেগুলো আপনি কারো কাছে বলতে পারছেন না তাহলে, খাতায় সেগুলো লিখতে থাকুন এবং ছিঁড়ে ফেলুন। তাহলে আপনার মনের কথাও জানানো হচ্ছে আবার আপনার মন শান্ত হয়ে যাচ্ছে। এটি মন শান্ত করার একটি কার্যকরী উপায়।

৩। ভালো চিন্তা ভাবনা করা

যখন আমাদের মন অশান্তিতে ভোগে, তখন আমাদের মাথায় বিভিন্ন ধরনের খারাপ চিন্তা ভাবনা ঘুরতে থাকে। ফলে আমাদের অশান্ত মন আরো অশান্ত হয়ে যায়। তাই সে সময়ে পজেটিভ কিছু চিন্তা ভাবনা করা ভালো। কারণ এটি খুব সহজে আপনার মনকে শান্ত রাখতে পারবে।

৪। গান গাওয়া

মন শান্ত করার একটি অন্যতম উপায় হলো গান গাওয়া। কারণ গান এমন একটি জিনিস যা বিভিন্ন ধরনের চিন্তাভাবনা ভুলিয়ে দিতে অনেক সাহায্য করে। তাই আপনি যখন অশান্তিতে ঢুকবেন কিংবা আপনার মন ভালো থাকবে না তখন আপনি গান গাইতে পারেন কিংবা গান শুনতে পারে এটা আপনার জন্য অনেক উপকারি। বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষ তার মন খারাপ থাকলে গান শুনে কিংবা গান গায়। তাই আপনি এই দিক দিয়ে আপনার মন শান্ত করতে পারেন।

৫। পরিবারকে সময় দেওয়া

পরিবারকে সময় দেওয়া মন শান্ত করার অন্যতম একটি মাধ্যম। স্বাভাবিকভাবে মানুষ যখন তার পরিবারের সাথে থাকে তখন সেদিন মুক্ত থাকে। তাই আপনি যখন মানসিক অশান্তিতে ভুগবেন তখন পরিবারকে সময় দেওয়ার মাধ্যমে আপনার অশান্তি দূর হয়ে যেতে পারে। যেমনঃ পরিবারের সবাই মিলে আড্ডা দেওয়া, কোন ধরনের গেম খেলা, একসাথে টিভি শো দেখা, একসাথে সবাই মিলে বসে কোন খাবার খাওয়া। এইসব করার মাধ্যমে আপনি আপনার মনকে খুব সহজে শান্ত করতে পারবেন। 

রাগ নিয়ন্ত্রণ করা ঃ

মনে অশান্তির সাথে রাগের একটি অন্যতম সম্পর্ক রয়েছে। কারণ বিভিন্ন ধরনের রাগের কারণে মনে অশান্তি সৃষ্টি হয়। তাই মনের অশান্তি দূর করতে হলে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। শুধু যে মনের অশান্তি দূর করার জন্য রাগ নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন তা নয়। অতিরিক্ত রাগ শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক। তাই রাতে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। 

মানুষ বিভিন্ন কারণে রেগে যেতে পারে। আবার অনেকে কোন কারণ ছাড়াও রেগে যায়। রাগ হওয়া একটি স্বাভাবিক বিষয়। কারণ প্রত্যেকটি মানুষের রেগে যান। এমন কোন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না যে জীবনে একবারের জন্য হলেও কখনো রেগে যায়নি। একেক রকম  মানুষের রাগের ধরণ ভিন্ন ধরনের। কেউ রেগে গেলে জোরে চিৎকার করে, জিনিসপত্র ভাঙচুর করে, নিজেকে আঘাত করে, অন্যের উপর রাগ দেখায়।এভাবে মানুষ একেক ভাবে তাদের রা প্রকাশ করে থাকে। 

রাগ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য রাগ প্রকাশ করাটা অনেক জরুরী । কিন্তু সব সময় সব ধরনের রাগ প্রকাশ করার উপায় টা কিন্তু সঠিক নয়। আবার রাগ চেপে রাখাও স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়।রাগ প্রকাশেরও একটি নিয়ম রয়েছে। যেভাবে রাগ প্রকাশ করলে আপনার স্বাস্থ্যের ক্ষতি হবে না। আবার আপনার রাগটাও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। 

রাগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায়ঃ

১।রাগের কারণ খুঁজে বের করা 

অনেকে আছে যারা এমনিতেই রেগে যায়। যেখানে  রাগের কোন কারণে নেই। আবার অন্যের কাজের কারণে ও রাগ হতে পারে। তাই সেটাকে খুঁজে বের করুন। এখানে কি আপনার রাগ করাটা ঠিক হয়েছে নাকি ভুল। কিংবা অপর মানুষের কি ভুল ছিল যে আপনি রেগে গেছেন। যদি এখানে আপনার ভুল থেকে থাকে তাহলে আপন মানুষটিকে সরি বলা উচিত। আর যদি অপরের কারণে আপনার রাগ হয়ে থাকে। তাহলে তাকে আপনার আগের কারণটা বুঝিয়ে বলা উচিত। এতে করে আপনি আপনারা খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। 

২।রাগের সময় চুপ করে থাকা 

চুপ করে থাকার রাগ নিয়ন্ত্রণ করে এটি অন্যতম উপায়।চুপ করে থাকার ফলে আপনি আপনার রাগকে  নিজের আয়ত্তে আনতে পারবেন। তাই রাগের সময় চুপ করে থাকা ভালো। 

কথায় আছে রাগ করলেন তো হেরে গেলেন। রাগের সময় মানুষের মাথা ঠিক থাকে না। রাগের সময় সে যেকোনো ধরনের খারাপ কাজ করতে পারে। যার কারণে  পরে সে ব্যক্তিকে আফসোস করতে হয়। তাই যখন রাগ করবেন তখন চুপ থাকা ভালো। ফলে রাগের বসে কোন ভুল কাজ যেন না হয়ে যায়। 

এবার আপনার রাগ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কোন কাগজে সে রাগের বিষয় কিংবা আপনি তাকে কি জবাব তে চান সে বিষয়টি লিখুন। তাহলে আপনি খুব সহজে আপনার রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। 

৪।গণনা করা 

এটি রাগ নিয়ন্ত্রণ করার একটি অন্যতম মাধ্যম।  গণনা করার কারণে আপনার মন অন্য দিকে চলে যায়। রাগের কথা চিন্তা না করার ফলে রাগটাও খুব সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তাই রাগের সময় গণনা করা রাগ নিয়ন্ত্রণ করার। 

৫।কান্না করা 

অনেকে আছে যারা রেগে গেলে কিংবা মন খারাপ হলে কান্নাকাটি করে। কারণ তারা সে রাগের জবাব তাদের দিতে পারে না। সে কারণে তারা কান্না করে থাকেন। রাগ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে কান্না করা ভালো। কারণ কান্না করার ফলে আপনার রাগ অনেকটাই কমে যাবে। 

আবার যারা মনের অশান্তির কারণ কাউকে বলতে পারেন না তাদের জন্য কান্না করা ভালো। এর ফলের আগের পাশাপাশি মনের অশান্তি তাও দূর হয়ে যায়। 

৬।জোরে জোরে শ্বাস নেওয়া 

রাগ হওয়া মানে মাথা গরম হওয়া। তাই রাগের সময় মাথাটা ঠান্ডা রাখা অনেক জরুরী। রাগের বয়সে যেন কোন ভুল পদক্ষেপ না নিয়ে নেয়।  রাগের সময় মাথা ঠান্ডা রাখা একটি কঠিন কাজ। 

তাই রাগের সময় মাথা ঠান্ডা রাখতে হলে জোরে জোরে শ্বাস নিতে হবে। এর ফলে আপনার মাথা আপনি খুব সহজেই ঠান্ডা করতে পারবেন। নাক দিয়ে শ্বাস নিয়ে মুখ দিয়ে ছেড়ে দিন।এই শ্বাস নেয়ার প্রক্রিয়া মাথা ঠান্ডা রাখতে অন্যতম ভূমিকা রাখে। আবার জোরে জোরে শ্বাস নেয়ার ফলে মন শান্ত থাকে। 

মনের অশান্তি দূর করার ইসলামিক উপায়ঃ

ইসলামিক উপায়ে মন খুব সহজেই শান্ত করা যায়। ইসলাম শব্দের অর্থ শান্তি। ইসলামের প্রত্যেকটা কাজের মাধ্যমে মনকে শান্ত করা যায়। মনে এক অন্য ধরনের শান্তি থাকে ইসলামিক কাজ করার ফলে। অনেক সময় ও শোনা যায় যে মানুষের যদি মন খারাপ থাকে তাহলে নামাজ পড়লে। সেই মন খারাপ দূর হয়ে যায়। আবার অনেকে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অজুও করে থাকেন। 

নামাজ পড়া 

নামাজ পড়ার কারণে মনের যেকোনো ধরনের অশান্তি খুব সহজে দূর হয়ে যায়। মনের অশান্তি দূর হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের দুশ্চিন্তা, মন খারাপ, রাগ সব দূর হয়ে যায়। আবার এমন কিছু মানুষ রয়েছে, যারা তাদের মনের কথা কারো কাছে বলতে পারেন না। তারা বেশিরভাগ মানুষই নামাজে কান্নাকাটি করে আল্লাহর কাছে সে কথাগুলো বলে থাকেন। আল্লাহর কাছাকাছি যাওয়ার সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো নামাজ পড়া। নামাজ পড়ার আল্লাহর অনেক কাছে চলে যায়।তাই আল্লাহর কাছে মনের কথাগুলো বলে, মন শান্ত করে। 

ওযু করা 

মনকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ওযু করা কার্যকরী উপায়।আবার রাগ করলে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ওযু করা যেতে পারে। তাহলে রাখ খুব সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। 

কোরআন তেলাওয়াত করা 

মনে শান্তি আনার একটি অন্যতম মাধ্যম কোরআন তেলাওয়াত। কোরআন তেলাওয়াত শোনা কিংবা কোরআন তেলোয়াত করলে অনায়াসে অশান্ত মন শান্ত হয়ে যায়। তাই মনের অশান্তি দূর করতে গেলে কোরআন তেলওয়াত করতে পারে। 

শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক আশা করছি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি মনকে কি করে শান্ত করা যায় এই বিষয়টি জানতে পেরেছেন। আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার কোন উপকারে লাগে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকবেন।

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url