২১ শে ফেব্রুয়ারি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য - ২১ শে ফেব্রুয়ারি কবিতা
একুশে ফেব্রুয়ারির ইতিহাসঃ
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি?
প্রত্যেক জাতির জীবনে বিরল কিছু স্মরণীয় দিন রয়েছে। ইংলিশে যাকে বলে(RED LETTER
DAY)। একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির জাতির জীবনে একটি গৌরবময় দিন। বাঙালির জীবনের
সকল চেতনার উৎস হচ্ছে এই দিনটি। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদায়
প্রতিষ্ঠিত করার একটি ঐতিহাসিক দিনের একুশে ফেব্রুয়ারি।
পাকিস্তান সৃষ্টির পর আলিমগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় তৎকালের উপচার্য ড. জিয়াউদ্দিন উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব দেন। পূর্ববঙ্গ থেকে ড. মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ এর বিরোধিতা করেন। বাংলা কে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি করেন। এভাবে ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েচিলো।
এদেশে বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষা বাংলা হওয়া সত্ত্বেও, বাকি স্যার সৃষ্টি হওয়ার শুরু থেকে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার চক্রান্ত চলতে থাকে। ১৯৪৮ সালের মোঃ আলী জিন্না বলেন, "উর্দুই এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা"। মোঃ আলী জিন্নাহর এই ভাষণের পর থেকেই ভাষা আন্দোলনের জোর আরো বাড়তে থাকে।
প্রথমে ছাত্ররা এ আন্দোলনের শুরু করল পরবর্তীতে পুরো বাঙালি জাতি এই আন্দোলনের
যোগদান করেন। এর ফলে বাঙ্গালীদের মনোবল আরও বাড়তে থাকে। তৎকালীন পূর্ব
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন, উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে
থাকলে। পুরো বাঙালি জাতি আরো ক্ষুপ্ত হয়ে পড়ে।
এভাবেই ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি দিনটি চলে আসে। তারাও প্রস্তুতি নিচ্ছিল আন্দোলনের জন্য। পাকিস্তান সেনারা বুঝতে পারে এবারের আন্দোলনটি আরো ভয়াবহ হতে চলেছে। তাই তারা এ আন্দোলনটি থামানোর জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু বাঙালিরা ১৪৪ ধারা জারি ভেঙে রাজপথে মিত্রের জন্য নেমে পড়ে।
এই রাজপথের মিছিলে ছাত্র শিক্ষকসহ আরো অন্যান্য বাঙালিরাও সঙ্গ দেয়। এ আন্দোলনকারী স্লোগান ছিল, "রাষ্ট্রভাষা বাংলা চায়"। আন্দোলনরত ছাত্রদের উপরে পুলিশেরা হামলা করে। আন্দোলনটি থামাতে পুলিশরা গুণী বর্ষণ শুরু করে।
ভাষার জন্য অনেক ছাত্ররা প্রাণ দেয়। একুশে ফেব্রুয়ারি এই হত্যাকাণ্ডের খবর সারা দেশে ছড়িয়ে যায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা পরের দিন ২৩ শে ফেব্রুয়ারি রাতে শহীদ মিনার তৈরীর কাজ শুরু করে। এই কাজে মাত্র দুই জন মিস্ত্রি ছিল আর বাকি সব ছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা। এটি মূলত প্রথম শহীদ মিনার।
পরবর্তীতে এই শহীদ মিনারটি ভেঙে দেওয়া হয়। কিন্তু তাও ১৯৫৩ সাল থেকে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি তারিখে মহান ভাষা আন্দোলন শহীদের স্মরণ করে শ্রদ্ধা জানানো হতো। এরপর ১৯৫৭ সালের পাকিস্তানের সেনারা রাষ্ট্রভাষাকে বাংলা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
একুশে ফেব্রুয়ারির কবিতাঃ
জন্মেছে এই বঙ্গে।
২১ শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্বীকৃতিঃ
কৃষক বাহান্ন সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষার জন্য প্রাণ দেন বাংলার সোনার ছেলেরা। সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জাব্বার সহ আরো অনেকে তাদের জীবন আত্মদান করেন। তাদের এই আত্মদানের জন্য আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারি। তখন থেকেই প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি মর্যাদার সহ পালিত হয়ে আসছে।
এমনকি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এবং ত্রিপুরা রাজ্যে বাংলা ভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে এই দিনটি।তবে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘের স্বীকৃতির পর পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও এই দিবসটি পালন করা হয়। কারণ বাংলাদেশি ছিল প্রথম, যারা তাদের ভাষার জন্য নিজেদের জীবন আত্মদান করেছেন।
১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ইউনেস্কোর ৩০ তম অধিবেশনে,
ইউনেস্কোর্সের সে সভায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার
আবেদন করা হয়। পৃথিবীর অন্যান্য দেশবাসীদের কাছেও একুশে ফেব্রুয়ারি
একটি উল্লেখযোগ্য দিন হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এর ঠিক পরের বছর থেকেই, ২০০০ সালের
একুশে ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮৮ টি দেশে, মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা শুরু হয়।
একুশে ফেব্রুয়ারির মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতির জন্য প্রথম উদ্যোগ নিয়েছিলেন কানাডার বহুভাষী ও বহু জাতিক মাতৃভাষা প্রেমিকগোষ্ঠীর বাঙালিরা। এই গোষ্ঠী প্রতিদিন ১৯৫৮ সালের ২৯ শে মার্চ জাতিসংঘে একটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নামে একটি দিবস ঘোষণা প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।
সেখানে তারা বলেন বাঙালিরা তাদের মাতৃভাষা রক্ষার জন্য, নিঃস্বার্থভাবে তাদের জীবন দান করেছে। কিন্তু এরপরে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন এই ইউনেস্কো। কিন্তু কানাড়া প্রবাসের বাঙালি আব্দুস সালাম ও রফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে ইউনেস্কোর সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
৯ সেপ্টেম্বর ১৯৯৯ সালের বাংলাদেশ জাতীয় কমিশনের পক্ষে সচিব অধ্যাপক কফিল উদ্দিন আহমেদের স্বাক্ষরিত সে প্রস্তাবটি প্যারিসে পৌঁছায়। কেন একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হবে তাই তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রী এ এইচ কে এ সাদেক যুক্তি ও আবেগের সঙ্গে এই বিষয়টি বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেন।
তখন ইউরোপীয়রা ব্যাপারটা বুঝতে পারে। এই সবকিছু হওয়ার ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর
অবশ্যই সে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া
হয়।
২১ শে ফেব্রুয়ারি সংক্ষিপ্ত বক্তব্যঃ
মাগো, ওরা বলে সবার কথা কেড়ে নেবে, তোমার কোলে শুয়ে গল্প শুনতে দেবে না। বল মা,
তাই কি হয়? ফেব্রুয়ারি ২১ তারিখ দুপুর বেলার অক্ত বৃষ্টি নামে, বৃষ্টি কোথায়
বরকতের রক্ত। এ সমস্ত লাইনগুলো আজও বাঙ্গালীর হৃদয়ে মনে প্রাণে আবেগ ময়
শিহরণ তৈরি করে।
আমার বক্তব্যের শুরুতে সম্মানিত সভাপতি, সম্মানিত প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি আমার
শ্রদ্ধেয় শিক্ষকবৃন্দ ও মঞ্চের সম্মুখে উপবিষ্ট সুধীজন সবাইকে জানাচ্ছি আদরিক
শুভেচ্ছা।
আজ এমন একটি দিন যে, দিনটা না আসলে আমরা কখনো আমাদের নিজের মায়ের ভাষায় কথা বলতে পারতাম না। পেতাম না লাল সবুজ পতাকা, সাধের সর্বভম বাংলাদেশ। মহান ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট একদিনে তৈরি হয়নি, বাঙালি জাতির আত্মদান ও অধিকার আদায়ের সচেতনতার বহিঃপ্রকাশ এই অমর একুশ।
যার ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাঙালির দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন সংলগ্ন আমতলায় ছাত্রসভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তারা ১৪৪ ধারা জারি ভাঙ্গে প্রস্তুতি নিচ্ছল। তাদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১০ জন মিছিল করে ১৪৪ ধারা ভাঙবে। ছাত্রসমাজ প্রতিবাদ মিছিল করে ১৪৪ ধারা ভাঙ্লো। কিন্তু পুলিশ বাহিনীরা এ আন্দোলনটি আটকাতে তাদের ওপর গুলি বর্ষণ শুরু করে।
এই গুলিতে সালাম, বরকত, রফিক, জাব্বারসহ নাম না জানা আরও অনেকে শহীদ হয়েছিল। ১৯৫২ সালে ২১শে ফেব্রুয়ারিতে যদি তারা মায়ের ভাষার দাবিতে প্রাণ না দিতো তাহলে কখনোই আমরা রাষ্ট্র ভাষা বাংলা পেতাম না। তাদের এই আত্মদান পুরো বাঙালিবাসীকে অনুপ্রাণিত করে।
তাই এর হাত ধরে আমরা অর্জন করেছি আমাদের স্বাধীনতা। এটি শুধু বাংলাদেশের
মাতৃভাষা দিবস নয় বরং গোটা বিশ্বের মাতৃভাষা দিবস। একুশে ফেব্রুয়ারি
আমাদের শিখিয়েছে আত্মত্যাগের মন্ত্র, বাঙালি কে করেছে মহিয়ান। মহান
ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়ে এসেছে বহু অকাঙ্খিত স্বাধীনতার চেতনা। বাংলাদেশ
আরও এগিয়ে যাবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url