সরিষা শাকের উপকারিতা
শাক আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। কারণ এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। আবার ক্যান্সার ও ডায়াবেটিসের আশঙ্কাও কমায়। শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে। আবার এদের মধ্যে এমন কিছু শাকআছে যা আমাদের শরীরে ওষুধের মত কাজ করে।
তেমনি এক ধরনের শাক হলো সরিষা শাক। এতে থাকা প্রচুর পুষ্টি উপাদান আমাদের
বিভিন্ন রোগের হাত থেকে বাঁচতে সাহায্য করে। এটি শুধু আমাদের শরীরের রোগের
সমস্যায় দূর করে না। রোগের সমস্যা দূর করার পাশাপাশি ত্বক ও চুলের যত্নেও সরিষা
শাকের ভূমিকা অন্যতম।
ভূমিকা
সরিষা শাক ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে চুল পড়া কমাতে
এটি সাহায্য করে। সরিষার শাকের উপকারিতা পেতে হলে সরিষা শাক সম্পর্কে আগে থেকেই
জানতে হবে। যেন প্রয়োজন অনুসারে সেগুলোকে উপকারে ব্যবহার করা
যায়। আজকে আমরা জানবো সরিষা শাকের পুষ্টিগুণ, সরিষার শাক চাষ করার সময় এসব
বিষয়। জানতে হলে পুরো আর্টিকেলটি একটুও মিস করবেন না, সম্পূর্ণটা মনোযোগ সহকারে
পড়বেন তাহলে সরিষা শাক সম্পর্কে বিস্তারিত বিষয় জানতে পারবেন।
সরিষা শাকের পুষ্টিগুণঃ
সরিষা শাক তো প্রায় আমরা সবাই চিনি। এই শাকগুলো আমাদের জন্য অনেক উপকারী। কারণ
এতে বিভিন্ন পুষ্টি উপদান রয়েছে যা আমাদের শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এই শাক
আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি ত্বক ও চুলের জন্যও অনেক
উপকারী।
সরিষা সাথে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে। যা আমাদের
বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে। শুধু ভিটামিন উপাদান রয়েছে
তা কিন্তু নয়। এতে আরো বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান রয়েছে
যেমনঃঅ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফলেট, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আইরন ইত্যাদি।
এইসব পুষ্টি উপাদানের জন্য সরিষা শাক আমাদের জন্য অনেক উপকারী।আমরা অবশ্যই
জানি সুস্থ শরীরের জন্য প্রয়োজন পুষ্টির। এই সব পুষ্টি উপাদানের জন্য আমার
বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ থেকে দূরে থাকতে পারে।
সরিষা চাষ করার সময়ঃ
অনেকে হয়তো আছে যারা বাজার থেকে শাকসবজি কিনে কিন্তু খুব একটা পছন্দ করেন না।
কারণ বাজারের শাকসবজিতে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল থাকতে পারে। আবার অনেক পরে মানে
সার বা কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। যা আমাদের শরীরের জন্য একদমি উপকারী নয়। তাই
তারা চাইলে ঘরে বাড়ির ছাদে সরিষার শাক চাষ করতে পারেন।
সরিষা শাক মূলত শীতকালে চাষ করা হয়। এই শাক দেশের প্রধান শাক। অন্যান্য শাকগুলো
বছর বিভিন্ন সময়ে পাওয়া গেল সরিষা শাক শুধুমাত্র এই শীতকালে পাওয়া যায়।তাই বলে
যে পুরো শীতকাল ধরে এই সরিষা শাক পাওয়া যায় তা কিন্তু নয় । শীতকালের নির্দিষ্ট
কিছু সময়ের জন্য এই সরিষা শাক পাওয়া যায়।
কৃষকেরা মূলত অক্টোবরের শেষের দিকে কিংবা নভেম্বরের মাঝামাঝি সরিষার বীজ বুনে
থাকেন। এরপর ধীরে ধীরে এটি বড় হতে প্রায় এক মাস সময় লেগে যায়।এক মাস সময় পরে
মূলত এই শাকগুলো খাওয়ার যোগ্য হয়ে ওঠে। এরপর ধীরে ধীরে সেখানে ফুল ফুটতে
শুরু করে। গাছটি বড় হয়ে গেলে গাছের ডাল থেকে পাতাগুলো ঝরে পড়ে যায়। এরপর
সেখানে সরিষার বীজ হতে থাকে। তাই শুধুমাত্র শীতকালের এ নির্দিষ্ট সময়ে এই স্বাদ
পাওয়া যায়।
আপনারা যদি বাড়ির ছাদে চাষ করতে চান তাহলে নভেম্বরের শুরুর দিকে বাড়ির টবে বীজ
বুনতে পারেন। এটি চাষ করার জন্য মাটিতে গোবর সার ব্যবহার করতে হবে। আর তবে অবশ্যই
ছিদ্র থাকতে হবে। ছিদ্র থাকার পাশাপাশি ছিদ্রগুলোতে এমন কিছু দিতে হবে যেন
মাটিগুলো বের হতে না পারে।
এরপর সরিষাব বীজ ছিটিয়ে দিতে হবে। বীজগুলো ছিটিয়ে দেওয়ার পর আবারও একটু মাটি
দিতে হবে। জানো বীজগুলো দেখা না যায়। আর পানি দিলেও যেন এগুলো বের না হয়ে আসে।
এরপর সেখানে পানি দিতে হবে। নিয়মিত পানি দেওয়ার ফলে সাত দিনের মধ্যে গাছের চারা
বের হয়ে আসবে। এরপর ৩০ দিনে এগুলো খাওয়ার উপযোগী হয়ে উঠবে।
সরিষা শাকের উপকারিতাঃ
সরিষা শাকের পুষ্টিগুণের জন্য এই শাক প্রায় সবাই পছন্দ করে থাকে। এই শাক আমাদের
শরীরের বিভিন্ন রোগের সংক্রমণের সমস্যা থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে। এটি আমাদের
রোগের সমস্যা দূর করার পাশাপাশি ত্বক ও চুলের জন্য অনেক উপকারী। এমন কি যাদের চুল
পড়ার সমস্যা রয়েছে। এই শাক খাওয়ার ফলে চুল পড়া সমস্যা ও দূর হয়ে যায়।
বিভিন্ন শাকসবজির বিভিন্ন গুণ রয়েছে । অনেকে হয়তো এসব শাকসবজির পুষ্টিগুণ
সম্পর্কে না জেনেই খেয়ে থাকেন। হয়তো অনেকে জানিনা যে এই শাকসবজি খাওয়ার ফলে
আমাদের শরীরে কি কি উপকার হতে পারে। তাই সরিষা শাকের উপকারিতা জানা
প্রয়োজন।
সরিষার শাকের উপকারিতা নিচে দেওয়া হলঃ
১।রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
সরিষা শাকে রয়েছে ভিটামিন সি ও তিন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ভিটামিন সি
তেও রয়েছে এক বিশেষ প্রকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
২।ক্যান্সার এর হাত থেকে বাঁচতে সাহায্য করে
সরিষার সাথে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান ক্যান্সার কোষ উৎপাদনে বাধা দেয়। পরে
ক্যান্সার সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এর পাশাপাশি এটা ডায়াবেটিস
রোগীদের জন্য অনেক ভালো।
৩।চুল পড়া কমায়
সরিষার সাথে রয়েছে ভিটামিন ই। অনেকে চলে যাওয়ার জন্য ভিটামিন ই ক্যাপসুল
ব্যবহার করে থাকেন। তারা মূলত চুল পড়া কমানোর জন্য ভিটামিন ই চুলে ব্যবহার করে
থাকেন। আর এই ভিটামিন এ সরিষা থাকে প্রাকৃতিকভাবে থাকে। তাই সরিষা শাক চুল পড়া
কমাতেও সাহায্য করে।
৪।দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে
সরিষা শাকে রয়েছে ভিটামিন এ।আপনারা হয়তো সবাই জানবেন যে ভিটামিন এ আমাদের চোখের
দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে কত সাহায্য করে। এটি দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখার পাশাপাশি।
যাদের আগে থেকে দৃষ্টি শক্তি একটু কম। তাদের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতেও সাহায্য
করে।
৫।ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে
ভিটামিন এ চোখের দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখার পাশাপাশি
ত্বকের যত্ন বিশেষ ভূমিকা রাখে। এটি ত্বক মতো সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
ত্বকের শুষ্কতা দূর করতেও সাহায্য করে। ত্বকের শুষ্কতা দূর করার পাশাপাশি ত্বকের
উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
৬।গর্ভবতীদের জন্য এটা উপকারী
সরিষা শাক গর্ভবতীদের জন্য অনেক উপকারি।কারণ এটা থাকা পুষ্টি উপাদানগুলো
বাজার শারীরিক বিকাশে সাহায্য করে। বাঁচার সুস্থ জন্ম দিতেও সাহায্য করে। তাই
গর্ভবতী অবস্থায় সরিষা শাক খাওয়া অনেক উপকারী।
৭।ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে
আপনারা হয়তো সবাই জানবেন যে, সরিষা শাক সাধারনত তেতো হয়ে থাকে। সরিষার
শাকের এই তেতো উপাদানটি শরীরে চর্বি কমাতে সাহায্য করে। এ অতিরিক্ত চর্বি গুলো
কমে যাওয়ার ফলে ওজনও খুব সহজে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। সরিষার শাকে থাকা ফাইবারও
ওজন কমাতে সাহায্য করে ।
সরিষার শাক খাওয়ার বিভিন্ন উপায়ঃ
সরিষা শাক সাধারণত তেতো হয়ে থাকে।তাই অনেকেই এতে তো ভাবের জন্য এই শাক খেতে
পছন্দ করেন না। পায়ে যারা সাত খানা তাদের জন্য শাক ভাজি কর একটি অন্য পদ্ধতি আছে
যার মাধ্যমে তেতো ভাবটা দূর হয়ে যায়।
প্রথমে শাক পানি দিয়ে ধুয়ে নেওয়ার পর এটা সিদ্ধ করে নিতে হবে। এরপর
শাক সিদ্ধ হয়ে গেলে এ থেকে যে পানি বের হবে তা চিপে ফেলে দিতে হবে।
এরপর যেভাবে শাক ভাজি করে সেভাবে ভেজে নিলে এতে তো ভাবটা চলে যাবে। এর পানিটা
চিপে নেওয়ার ফলে এর ভেতরে যে তেতো ভাব আছে সেটি আর থাকে না।
তাই যারা তেতো শাক খেতে পছন্দ করে না তারা এভাবে শান্তি খেতে পারে। আজ রাতে তোর
শাক পছন্দ করেন তারা সাধারণত যেভাবে শাক রান্না করে থাকেন সেভাবেই করলেই
হবে।
বেশিরভাগ বাচ্চারাই শাক খেতে পছন্দ করে না।তাই তাদের জন্য তরকারির সাথে
রাধলে ভালো হয়। আবার বাচ্চাদের পুষ্টি উপাদান বেশি প্রয়োজন বড়দের তুলনায়।
এই শাড়িতে তরকারির সাথে রান্নার ফলে এর ভেতরে যে পুষ্টিগুণগুলো রয়েছে সেগুলো আর
ধুয়ে যায় না ।
কারণ শাক রান্না সময় শাক থেকে যে পানিগুলো বের হয় সেগুলোর সাথে শাকের
পুষ্টি উপাদান বের হয়ে যায়। ।তাই ছবি তরকারির সাথে শাককে রান্না করা হয় তাহলে
এর পুষ্টি উপাদান গুলো আর বের হয়ে যেতে পারে না। তাই তরকারির সাথে রান্না
করে বাচ্চাদের খাওয়ানো ভালো।
অনেক বয়স করে আছে যারা ঠিকমতো খেতে পারেনা। তাই তাদের জন্য বানানো হয়ে থাকে।
সরিষা শাকের পুষ্টিগণ বয়স্কদের জন্য অনেক উপকারী। তাই সুপের সাথেও এদিকে রান্না
করে খাওয়া যায়। সুপের পাশাপাশি সালাদ এর সাথেও এদিকে খাওয়া যায়।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক এভাবে আমরা আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করেছি সরিষা শাকের উপকারিতা কি
কি, সরিষা শাকের পুষ্টি গুণ। সরিষা শাকের চাষের নির্দিষ্ট সময় এসব বিষয়। আশা
করছি আজকের এই আর্টিকেলটি আপনাদের অনেক উপকারে লাগবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url