সেন্ট মার্টিন দ্বীপ সম্পর্কে - সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশ
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ইতিহাস ঃ
সেন্ট মার্টিন দ্বীপটিতে কবে সর্বপ্রথম মানুষ বসবাস করত তা ঠিক জানা যায় না। তবে প্রায় ২৫০ বছর আগে আরবেরা বাণিজ্য করতে এসে এই দ্বীপের দেখা পায়। তারা এই দ্বীপটি বিশ্রামের জন্য ব্যবহার করত। তারা প্রথম এই দ্বীপটির নাম দিয়েছিল জাজিরা। জাজিরা একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ দ্বীপ। এর পর মানুষের মুখোমুখে এ নামটি বদলে গিয়ে নাম হয়ে যায় জিনজিরা।
১৮৯০ সালে বাঙালি ও রাখাইন প্রথম এই দীপটি আসে। তাদের পেশা ছিল মূলত মৎস্যজীবী। তারা ধীরে ধীরে এই দ্বীপটিতে বসবাস শুরু করেন। ক্লান্তি ও খুদা মেটানোর জন্য তারা এই দ্বীপটিতে নারকেল গাছ লাগানো শুরু করেন। কারণ এই দীপ্তির চারপাশে ছিল শুধু লবণাক্ত পানি।
তাই পানি ও ক্লান্তি মেটানোর জন্য তারা প্রচুর পরিমাণে নারিকেল গাছ লাগানো শুরু করেন । এরপর দ্বীপটির নারিকেল গাছে ভরে যায়। নারিকেল গাছ থাকার জন্য অনেকে এই দ্বীপকে নারিকেল জিঞ্জিরা বলে থাকেন। এরপর ১৯০০ সালে যখন ব্রিটিশেরা ভারতে ছিল তখন তারা এই দ্বীপ থেকে ভারতের অংশ হিসেবে গণ্য করেন।
জিনজিরা নাম থেকে বদলে এই দ্বীপের নামকরণ করা হয় সেন্ট মার্টিন। এটি মূলত খ্রিস্টান সাধু মার্টিনের নাম। পরবর্তী মানুষের কাছে অনেক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং অবশেষে এই দ্বীপটির নাম সেন্ট মার্টিনই থেকে যায়।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের অবস্থান ঃ
সেন্ট মার্টিন দ্বীপটি মূলত বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর- পূর্বাংশে অবস্থিত একটি ছোট্ট প্রবাল দ্বীপ। এটি টেকনাফ হতে প্রায় ৯ কিলোমিটারে দক্ষিণে এবং মায়ানমারের উপকূল হতে মোটামুটি ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় মিলিত হয়েছে।
ভৌগোলিকভাবে এই দ্বীপটির রয়েছে তিনটি অংশ। গবেষণা অনুযায়ী প্রায় ৫ হাজার বছর আগে এই দিকটি টেকনাফেরই একটি অংশ ছিল। কিন্তু এটি সমুদ্রের তলে ডুবে যায়। এরপর প্রায় বছর আগে এই দ্বীপটির দক্ষিণ অংশ জেগে ওঠে । এরপর ১০০ বছর পর দ্বীপটির উত্তর অংশও জেগে ওঠে।
এরপর ধীরে ধীরে বাকি অংশগুলো জেগে ওঠে। এই দ্বীপের আয়তন ১৩ বর্গ
কিলোমিটার। তবে দ্বীপের চারিদিকে ভাঙ্গনের ফলে এ আয়তন টা একটু কমে আসে। এই
দ্বীপে রয়েছে নয়টি গ্রাম। উৎপাদনে সক্ষম। এই দ্বীপটি থেকে সূর্যোদয়
ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। যা মানুষের মন মুগ্ধ করে তোলে। এই দৃশ্যটি সত্যিই সবার
কাছে অসাধারণ।
সেন্ট মার্টিন দীপ্তি কেন বিখ্যাতঃ
প্রিয় পাঠক এই পর্বের আমরা আপনাদের জানাবো সেন্ট মার্টিন দ্বীপ কেন বিখ্যাত। বঙ্গোপসাগরের ছোট একটি দ্বীপ হল সেন্ট মার্টিন দ্বীপ। যারা সমুদ্র প্রেমে আছেন তাদের কাছে এই সেন্টমার্টিন দ্বীপটি অনেক প্রিয় জায়গা। এই দ্বীপের এক জায়গায় বসে আপনি উপভোগ করতে পারবেন সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত।
বাংলাদেশে একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন । সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করার একমাত্র স্থান এইটি। এই দীপ্তি কে সমুদ্রের অপার সৌন্দর্য অনেক ভালোভাবে দেখা যায়। এই দ্বীপটি থেকে সামনের দিকে তাকালে মনে হয়, নীল আকাশ ও নীল সমুদ্র যেন এক জায়গাতে গিয়ে ঠেকেছে। এই দ্বীপ থেকে টেকনাফ ও মিয়ানমারের পাহারও দেখা যায়। প্রথম দিকে পর্যটক আস্ত মাত্র ২০০ থেকে ২৫০ জন। ২৫০ জনের বেশিরভাগই ছিল প্রভাবশালী।
কিন্তু বর্তমানে মধ্যবিত্তরাও এখন এর দীপ্টি দর্শন করতে আসেন। প্রথমদিকে এই দ্বীপে রিসোর্টের বা হোটেলের সংখ্যা ছিল মাত্র ১৩ টি। বর্তমানে এই দ্বীপ টিতে অনেক জনপ্রিয় হওয়ার কারণে এখানে প্রায় ১২৫ টার মতো হোটেল রয়েছে। ডিসেম্বর মাসে এই সময়ে সমুদ্র একটু শান্ত থাকে। এ কারণে এই সময়ে ঘুরতে অনেক ভালো লাগে। এই দ্বীপের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রবাল। আবার এই দ্বীপটিতে বিভিন্ন ধরনের কচ্ছপও দেখা যায়। এখানে প্রায় ৬৬ প্রকারের প্রবাল দেখতে পাওয়া যায়।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের অধিবাসীঃ
কিছু বাঙালি ও রাখাইন যাতে মাছ ধরার জন্য সমুদ্রে যাওয়ার সময় এই দিক থেকে দেখতে পায়। তখন তারা এই দ্বীপে বসবাস করতে শুরু করে। প্রায় ১২০ বছর আগে থেকে। বর্তমানে এখানে ৭ হাজারেরও বেশি মানুষ বসবাস করে। এভাবে এখানে অনেক বাড়িঘর ও হোটেল গড়ে ওঠে। এখানকার বাসিন্দাদের প্রধান পেশায় হল মাছ ধরা। এর পাশাপাশি এখানে নানা ধরনের দোকানপাট গড়ে উঠেছে।
এখানকার বাসিন্দারা পর্যটকদের আপ্যায়নের জন্য মূলত এইসব করে থাকেন। তারা বিভিন্ন ধরনের প্রবালও বিক্রি করে থাকেন। এই মৎস্যজীবীরা যখন প্রথম এই দ্বীপে এসেছিল তখন তারা অনেক নারকেল গাছ রোপন করেছিলেন। এ নারিকেল গাছ তাদের ঝড়-বৃষ্টি থেকে রক্ষা করে। তারা এ নারকেল গাছ থেকে নারিকেল পর্যটকদের কাছে বিক্রি করে থাকেন। এভাবেই চলতে থাকে তাদের জীবনযাত্রা।
ভ্রমণ খরচ ঃ
এই দ্বীপে যাওয়ার জন্য পর্যটকরা জাহাজ ব্যবহার করে থাকেন। এই জাহাজে করে দ্বীপে যেতে সময় লাগে পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা। মাঝেমাঝে জোয়ার ভাটার জন্য সাত ঘন্টা লেগে যেতে পারে। সেন্ট মান্টিনে যেতে হলে যদি জাহাজ ব্যবহার করা হয় তাহলে জাহাজের মানের উপর খরচ নির্ভর করবে। তবে ধারণা করে বলা যায়, জাহাজ ভ্রমণে যদি সেন্টমার্টিন দ্বীপে যেতে হয় তাহলে পাঁচ থেকে দশ হাজারের মতো টাকা খরচ হবে জনপ্রতি।
এরপর টিকিট কেটে জাহাজে উঠতে হবে। ছুটির দিন ছাড়া আগে থেকে হোটেল বুকিং করা কোন
প্রয়োজন নেই। কারণ এই দিনগুলোতে পর্যটকদের সংখ্যা বেশি হয়। তবে যদি ভালো
হোটেল নিতে চান তাহলে আগে থেকে বুকিং করা ভালো। সেন্ট মার্টিন দ্বীপে হোটেল ভাড়া
১৮০০ থেকে শুরু। আর যদি ভালো মানের কোন হোটেল নিতে চান তাহলে ৬০০০ থেকে ১৪
হাজার টাকা খরচ হবে।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের উদ্ভিদ বৈচিত্রঃ
শুরু থেকে মানুষ যখন এই দ্বীপে বসবাস করে, তখন ছিল শুধু কেয়া, শেওড়া
ইত্যাদি গাছ। মানব বসতি শুরু হওয়ার পর পরে তারা এ দ্বীপে নারকেল গাছ লাগানো শুরু
করে। বর্তমানে নারকেল গাছে ভরে গেছে। এছাড়াও রয়েছে আরও বিভিন্ন ধরনের গাছ।
এগুলো ব্যবহার করে মানুষ এই দ্বীপে বসবাস করছে। কিন্তু বর্তমানে পর্যটকদের সংখ্যা
বেশি হওয়ার কারণে দ্বীপটি প্রচুর পরিমাণে দূষিত হচ্ছে। ফলে এই দ্বীপটিতে
বসবাসকারীর মানুষের জীবনযাত্রা হুমকির মুখে পড়ছে। তাই এ দ্বীপে বসবাসকারী
মানুষদের কথা বিবেচনা করে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ জরুরী।
এই দ্বীপটি দূষণমুক্ত রাখার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থেকে বেঁচে
থাকা সম্ভব।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক আমরা আজকের এই আর্টিকেলের শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। আশা করছি আজকের এই
আর্টিকেলটি আপনাদের অনেক উপকারে লাগবে। আজকের এই আরটিকালের মাধ্যমে আপনি
সেন্টমার্টিন দ্বীপের সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবেন। যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে
অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন ধন্যবাদ সবাইকে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url