পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা রচনা class 8
সূচনা
মানুষের জিজ্ঞাসা অনন্ত এবং কৌতূহলোও অসীম।তার এই অনন্ত জিজ্ঞাসা অনন্ত জ্ঞান ধরে রাখে বই। আর এই বই সংগৃহীত থাকে পাঠাগারে। পাঠাগার হলো সাহিত্য ইতিহাস ধর্ম দর্শন বিজ্ঞান ইত্যাদির এক বিশাল সংগ্রহশালা। পাঠাগারের বইয়ের ভান্ডারে সঞ্চিত হয়ে আছে মানব সভ্যতার শত শত বছরের ইতিহাসের হৃদয় স্পন্দন।
পাঠাগার কি
পাঠাগার বলতে আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে এমন একটি বাড়ি বা ঘর যেখানে অনেক বই
সংগ্রহ ও সংরক্ষিত থাকে। পাঠাগারের শাব্দিক প্রতিশব্দ হচ্ছে পুস্তকাগর
গ্রন্থাগার বা লাইব্রেরী। শঙ্খের মধ্যে যেমন সমুদ্রের শব্দ শোনা যায়,
পাঠাগারের তেমনি মানব সভ্যতার ইতিহাসের উত্থান পতনের ধ্বনি শোনা যায়। পাঠক এখানে
স্পর্শ পায় সভ্যতার এক শাশ্বত ধারার, অনুভব করে মহাসমুদ্র শত শত
বছরের কল্লোল ধ্বনি, শুনতে পায় জগতের এক মহা ঐকতানের সুর। তাই
পাঠাগার লাইব্রেরি হচ্ছে মানুষের অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যতের সেতুবন্ধন।
পাঠাগারের ইতিহাস
পাঠাগারের ইতিহাস বেশ পুরনো। মুদ্রণ যন্ত্র আবিষ্কারের অনেক আগে থেকে পাঠাগারের প্রচলন ছিল। তখন মানুষ তার জ্ঞান সঞ্চিত করে রাখতে পাথর পোড়ামাটি পাহাড়ের গায় ও পশুর চামড়ায়। আর এগুলো সংরক্ষণ করা হতো লেখকদের নিজের বাড়িতে মন্দির উপাসনালয়ে এবং রাজকীয় ভাবনে। খ্রিষ্টের জন্মের প্রায় ৫ হাজার বছর আগে মিশরের পাঠাগারের অস্তিত্ব ছিল।
প্রাচীন গ্রিসে পাঠাগার ছিল বলে প্রমাণ রয়েছে। প্রাচীন ভারতীয় বৌদ্ধবিহার সহ বিভিন্ন উপাসনালয় যেমন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিক্রমশালীয় ও সমৃদ্ধ পাঠাগার গড়ে ওঠে। ভারতের প্রাচীনকালে পন্ডিতদের ব্যক্তিগত পাঠাগার ছিল এছাড়া আসিবিয়া আলেকজান্দ্রিয়া বাগদাদ দামেস্ক চিন তিব্বত সহ বহু স্থানে পৃথিবীর বিখ্যাত পাঠাগারের সন্ধান পাওয়া যায়।
পাঠাগারের বিকাশ
আধুনিককালে বিজ্ঞানের সহায়তায় উন্নত পাঠাগার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ব বিখ্যাত পাঠাগারের মধ্যে লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়াম, মস্কর লেনিন লাইব্রেরি, ফ্রান্সের বিবোলিউথিক নাত সিউনাল লাইব্রেরী, ওয়াশিংটনের লাইব্রেরি অফ কংগ্রেস, কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরী উল্লেখযোগ্য। আমাদের দেশে ঢাকায় কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৩ সালে।
এই লাইব্রেরির সহযোগিতায় দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি বেসরকারি পর্যায়ের শতাধিক পাঠাগার পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া ঢাকায় বাংলা একাডেমী গ্রন্থাগার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগা্র, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, এশিয়াটিক সোসাইটি লাইব্রেরী, ব্রিটিশ কাউন্সিল লাইব্রেরী, রাজশাহীর বরেন্দ্র মিউজিয়াম খুলনার উমেশ চন্দ্র স্মৃতি গ্রন্থাগার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভ্রাম্যমান পাঠাগার স্থাপন করে মানুষের জ্ঞান পিপাসা চরিতার্থ করার প্রচেষ্টা আরো বেগবান হয়েছে।
পাঠাগারের শ্রেণীবিভাগ
বিশ্বে নানা রকম পাঠাগার রয়েছে। তার মধ্যে ব্যক্তিগত পাঠাগার, পারিবারিক পাঠাগার, সাধারণ পাঠাগার, জাতীয় পাঠাগার উল্লেখযোগ্য। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পাঠাগারের পরিসর সীমিত। সাধারণ পাঠাগার সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত তাই এর পরিসর অনেক ব্যাপক ও বিস্তৃত। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শিক্ষকদের প্রয়োজনে যে পাঠাগার গড়ে উঠে সেগুলো প্রাতিষ্ঠানিক পাঠাগার।বিশ্বের প্রতিটি দেশের রাষ্ট্রীয়ভাবে পাঠাগার স্থাপন করা হয়ে থাকে এগুলো জাতীয় পাঠাগার।
পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা
মানুষের শরীরের জন্য যেমন খাদ্যের দরকার তেমনি মনের জন্য খাদ্য প্রয়োজন। আর এই মনের খাদ্যের প্রয়োজন মেটাতে পারে পাঠাগার। পাঠাগার মানুষের ক্লান্ত বুভুক্ষ মনকে আনন্দ দেয়। তার জ্ঞান প্রসারে রুচিবোধ জাগ্রত করে। পাঠাগারের সংগ্রহীত থাকে নানা মত ও পথের বই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় লাইব্রেরীর মধ্যে সহস্র পথের চৌমাথার উপর দাঁড়িয়ে আছি কোন পথ অনন্ত শিখরে উঠিয়াছে কোন পথ মানব হৃদয়ের অতল স্পর্শ করিয়াছে।
যে যেদিকে ইচ্ছা ধাববান হও কোথাও বাধা পাইবানা। মানুষ আপনার পরিত্রান কে এতোটুকু জায়গার মধ্যে বাঁধিয়ে রাখিয়াসে। সমৃদ্ধ পাঠাগার সব ধরনের পাঠকের জ্ঞান তৃষ্ণা নিবারণ করে। মানুষের নৈতিক চরিত্র গঠনে অবদান রাখে। বই ছাড়া প্রকৃত মনুষ্যত্ব লাভ করা যায় না। তাই পাঠাগারের মাধ্যমে একটি জাতি উন্নত শিক্ষিত ও সংস্কৃত বান জাতি হিসেবে গড়িয়ে গড়ে ওঠে। জাতীয় জীবনে তাই পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অপরি্সিম। বই পড়ার যে আনন্দ মানুষের মনে তাকে জাগ্রত করে তুলতে আজ সব ধরনের পাঠাগারের ব্যাপক প্রসার প্রয়োজন।
উপসংহার
পাঠাগার মানব সভ্যতার অগ্রগতির ধারাবাহিক ইতিহাসের সংরক্ষণাগার। সুস্থ সংস্কৃতির
বিস্তার ঘটাতে পাঠাগারের একান্ত অপরিহার্য। প্রকৃত জ্ঞানার্জন ও প্রাণ শক্তি
বৃদ্ধির জন্য স্কুল কলেজের মত দেশের সবখানে পাঠাগারের প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত
জরুরি।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url