আসসালামু আলাইকুম, কোন মৌসুমে কোন ফসল ভালো জন্মে সে সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত জানবো। আপনারা যারা নতুন ফসল চাষ করা শুরু করতে চাচ্ছেন তাদের জন্য এই পোস্টটি অনেক উপকারে আসবে। কোন মৌসুমে কোন ফসল ভালো জন্মে ও আগস্ট মাসের সবজি চাষ সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত জানুন।
বাংলাদেশ হল ছয় ঋতুর দেশ। বাংলাদেশে ছয় ঋতুর বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করা হয়ে
থাকে। কোন মৌসুমে কোন ফসল ভালো জন্মে সেই সম্পর্কে জানব।
ফসল উৎপাদনের জন্য মৌসুমকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। এগুলো হল
আবহাওয়া, ভৌগোলিক অবস্থান ও জলবায়ু। এগুলো ছাড়াও দৈনন্দিন কিছু কৃষি কাজ করার
প্রয়োজন হয়। কৃষকরা নিজের চিন্তা অনুযায়ী ও চাহিদা হিসেব করে প্রতিদিন তাদের
কাজগুলোকে সুন্দরভাবে বাস্তব রূপ দেন। ছয় ঋতুর কোন মাসে কি চাষ করা যায় সেগুলো
সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করব।
বৈশাখ মাস অর্থাৎ মধ্য এপ্রিল থেকে মধ্য মে মাস
বৈশাখ মাসে আপনি অনেক ধরনের সবজি চাষ করতে পারবেন সেগুলো হল পিঁয়াজ
পাতা, কলমি শাক, ডাটা, লাল শাক, সবুজ শাক, হলুদ, মরিচ ও ঢেঁড়স এগুলো বীজ
বপনের জন্য সঠিক সময়। এগুলো ছাড়া আরো অনেক ধরনের গ্রীষ্মকালীন চারা রোপন করতে
পারেন। চাল কুমড়া, শসা, ঝিঙ্গা, ধুন্দল এরকম ধরনের আরো অনেক কিছু আপনি উৎপাদন
করতে পারবেন। চাষীরা সাধারণত তিন ভাবে চাষ করে এগুলোকে তারা খরিফ
হিসেবে ধরে। অর্থাৎ খরিফ ১ এই সময় বীজ বপন করতে হয়।
আরো পড়ুনঃ গ্রামে ব্যবসার আইডিয়া
খরিফ ২ অর্থাৎ সবজির জন্য বেড ও চারা তৈরি করা। খরিফ ৩ অর্থাৎ এ সময় চাষ
করার জন্য ফলের স্থান নির্বাচিত করা এবং বিভিন্ন ধরনের উন্নত জাতের কলম বা চারা
সংগ্রহ করে রাখা যাতে পুরনো গাছগুলো আবার প্রয়োগ করা যায়।
জ্যৈষ্ঠ মাস অর্থাৎ মধ্য মে থেকে মধ্য জুন
আপনি যেগুলো বিষ দিয়ে চারা রোপন করেছেন সেগুলো ছাড় এবং সেচ দেওয়ার পরে
পরিচর্যা শুরু করতে হবে। টমেটোর চারার দ্রবণের জন্য গ্রীষ্মকালীন সময় উত্তম। এ
সময় সজিনা ও টমেটো পরিচর্যা করবেন। ধুন্দল, পটল ঝিঙ্গা এবং চিচিঙ্গা এগুলো
সংগ্রহ করে রাখবেন ও পোকামাকড় এর জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
আপনি যখন ফসলের
চারা গুলো পরিপূর্ণভাবে রোপন করবেন তখন রোপনের জন্য গর্ত করে নিতে হবে ও যেগুলো
গাছ বয়স্ক হয়ে গিয়েছে সেগুলোতে সার দিতে হবে ও যেগুলো গাছে ফল ধরেছে
সেগুলো সংগ্রহ করে বাজারজাত করার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।
আষাঢ় মাস অর্থাৎ মধ্যজুন থেকে মধ্য জুলাই
এ সময় হল গ্রীষ্মকালীন সময়। গ্রীষ্মকালীন সময়ে আপনি টমেটো, কাঁচামরিচ, বেগুন,
এরকম জাতীয় সবজির জন্য পোকামাকড় থেকে দূরে রাখতে হবে। যখন আপনি কোন সবজি আগে
লাগাবেন অর্থাৎ টমেটো ঢেরস ও ইত্যাদি ধরনের সবজিগুলো ফল সংগ্রহ করে নিতে হবে।
আপনি যখন খরিফ ২ এ যেগুলো সবজি চাষ করেছেন এগুলো সেচ প্রয়োগ করতে হবে ও সার দিতে
হবে ও পরিচর্যা করতে হবে।
আপনি যখন বুঝতে পারবেন যে কোন মৌসুমে কোন ফসল ভালো
জন্মে তখন আপনার কাছে আরও সহজ হয়ে যাবে। আগস্ট মাসের সবজি চাষ সম্পর্কেও নিম্নে
জানতে পারবেন।
শ্রাবণ মাস অর্থাৎ মধ্য জুলাই থেকে মধ্য আগস্ট মাস
আপনি যদি আগামী কোন ফসল চাষ করতে চান অর্থাৎ ফুলকপি, বাঁধাকপি এরকম ধরনের সবজি
বীজ বপন শুরু করতে পারেন। যখন আপনি খরিফ ২ ফ এর সবজিগুলো সংগ্রহ করবেন এবং পোকা
দমন করবেন বিভিন্ন ধরনের বীজ বপন করতে পারবেন। আপনি যেগুলো ছাড়া রোপণ করবেন
সেগুলো আপনাকে প্রতিনিয়ত পরিচর্যা করতে হবে এবং বিভিন্ন ধরনের বেড়া দিয়ে
ঝুলন্ত যেগুলো ফসল রয়েছে সেগুলো সাজিয়ে রাখতে হবে।
আরো পড়ুনঃ কমলা চাষ বাংলাদেশ - কমলা মিষ্টি করার উপায়
কোন মৌসুমে কোন ফসল ভালো জন্মে এবং আগস্ট মাসের সবজি চাষ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন
চলুন আরো জেনে নেই কোন মাসে কি ফসল জন্মাতে পারবেন।
ভাদ্র মাস অর্থাৎ মধ্যা আগস্ট থেকে মধ্য সেপ্টেম্বর মাস
আপনি যেগুলো আগামী সবজি চাষ করেছেন সেগুলো ছাড় প্রয়োগ করতে হবে এবং সে ফসলের
যেগুলো বয়স্ক গাছ রয়েছে সেগুলোর বীজ সংগ্রহ করে রাখতে হবে যেন আপনি আবার
আগামীতে সেগুলো ফসল চাষ করতে পারেন যেমন ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুন এরকম
ধরনের ফসল।
আশ্বিন মাস অর্থাৎ মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য অক্টোবর মাস
যেগুলো সবজির চারা আপনি রেখেছেন সেগুলোর যারা তৈরি করার পরে রোপণ করতে হবে এবং
বিভিন্ন ধরনের সেচ দেওয়ার পরে পোকামাকড় দমনের জন্য ঔষধ ব্যবহার করতে হবে। যেমন
বরবটি. ওলকপি সিম, লাউ ইত্যাদি ধরনের সবজি এগুলোর সার প্রয়োগ করবেন এবং আগাছা
গুলো পরিষ্কার করে নিবেন।
কার্তিক মাস অর্থাৎ মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য নভেম্বর মাস
এই মাসে আপনি আলু চাষ করতে পারেন। আলুর আইল বেঁধে রাখা ও যেগুলো সবজি রয়েছে
ওগুলো পরিচর্যা করবেন। যেগুলো ব্রিজ রয়েছে ওইগুলো জমিতে যারা হিসাবে ব্যবস্থা
নিতে হবে ও আগামী যেগুলো সবজি রয়েছে সেগুলোর আগাছা গুলো কেটে ফেলতে হবে ও
সার করে মাটি ভালো রাখতে হবে।
অগ্রহায়ণ মাস অর্থাৎ মধ্য নভেম্বর থেকে মধ্য ডিসেম্বর মাস
এ সময় পেঁয়াজ, মরিচ এর জন্য চারা ও মিষ্টি আলুর লতা লাগাতে পারেন। এরপর এগুলোর
যত্ন নিতে হবে। জমিতে যদি আগাছা হয়ে থাকে তাহলে আগাছা গুলো পরিষ্কার করে নিয়ে
শেচ দেওয়ার পরে সার প্রয়োগ করতে হবে। আপনি এর আগের মাসে যেগুলো সবজি বা ফসল চাষ
করেছেন সেগুলো ঠিকমতো পরিষ্কার করতে হবে।
পৌষ মাস অর্থাৎ মধ্য ডিসেম্বর থেকে মধ্য জানুয়ারি মাস
আগামী যেগুলো সবজি রয়েছে সেগুলোর যদি কোন ধরনের রোগ বালাই হয়ে থাকে ও পোকামাকড়
হয়ে থাকে সেগুলো দমন করতে হবে এবং সবজিগুলো সংগ্রহ করে নিতে হবে। আরো অনেক ধরনের
অন্যান্য পরিচর্যা করতে হবে যেন আপনি বাণিজ্যিকভাবে মৌসুমের ফুলের চাষ করার ইচ্ছা
থাকে তাহলে আপনাকে খুব বেশি যত্ন নিতে হবে কোন ধরনের অবহেলা করা যাবে না।
মাঘ মাস অর্থাৎ মধ্য জানুয়ারি থেকে মধ্য ফেব্রুয়ারি মাস
আপনি যদি আলুর চাষ করে থাকেন ও আরো বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন করে থাকেন অর্থাৎ
পিঁয়াজ ও রসুন এরকম ধরনের চাষ করেন তাহলে আপনার সর্বপ্রথম গাছের গোড়ায় মাটি
তুলে দিতে হবে এবং ভালোভাবে শেষ দিতে হবে যাতে আপনার ফসলে কোন ধরনের ক্ষতি না
হয়। বুঝতে পেরেছেন ।
আরো পড়ুনঃ কৃষি সমবায়ের প্রকার গুলো কি
এর চারা গুলো সেগুলোকে আপনার রোগমুক্ত ও খুব যত্ন নিতে হবে। বীজের উপর সব সময়
খেয়াল রাখতে হবে যেন কোন ধরনের পোকামাকড় আক্রমণ না করতে পারে। আপনি উপরোক্তগুলো
পড়ে অবশ্যই বুঝতে পারছেন যে কোন মৌসুমে কোন ফসল ভালো জন্মে।
ফাল্গুন মাস অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি থেকে মধ্য মার্চ
আপনি পুনরায় যেভাবে সর্বপ্রথম চারা থেকে বীজ ও সবজি উৎপাদন করেছেন সেভাবে আপনার
বীজ বপন করতে হবে যাতে আপনার জমির তৈরি করা ফসল আবার পুনরায় রোপন করতে পারেন।
বীজ থেকে চারা রোপণের সময় আপনার অতিরিক্ত খেয়াল রাখতে হবে এবং আপনি যখন আলু চাষ
করবেন আলোর সর্বনিম্ন দশ দিন থেকে শুরু করার পর সর্বোচ্চ ১০০ দিনের মধ্যে মাটির
ভিতর থেকে আলো তুলে নিতে হবে।
চৈত্র মাস অর্থাৎ মধ্য মার্চ থেকে মধ্যে এপ্রিল মাস
আবার আপনি এভাবেই গ্রীষ্মকালে যেরকম ধরনের সবজি ও বীজ রোপন করে ফসল করেছেন সেভাবে
আপনাকে প্রতিনিয়ত রোপন করতে হবে। আপনি যেগুলো সবজির জন্য চারা তৈরি করেছেন
সেগুলো মূল জমি অর্থাৎ নিজের জমিতে রোপন করবেন যাতে আপনি বুঝতে পারেন যে আপনার
বীজগুলো ঠিকমতো আছে কিনা।
বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় গুলো থেকে মুক্তি রাখবেন ও
আবার পুনরায় বিষ সংগ্রহ করে রাখবেন যাতে আগামীতে আবার চাষ করতে পারেন। এভাবে
আপনি কোন মৌসুমে কোন ফসল ভালো জন্মে বুঝতে পারবেন।
শেষ কথাঃ কোন মৌসুমে কোন ফসল ভালো জন্মে
আপনি যদি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই বুঝতে পারছেন যে কোন মৌসুমে
কোন ফসল ভালো জন্মে এবং আগস্ট মাসের সবজি চাষ সম্পর্কে। ফসল তৈরি করার জন্য
অবশ্যই আপনার পোস্টটি উপকারে আসবে। উপরোক্ত পোস্টটিতে বারো মাসের ফসল চাষ করা
সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে আলোচনা করা হয়েছে। ধন্যবাদ।
কোন মৌসুমে কোন ফসল ভালো জন্মে?---- এই টপিকে আরা জানতে https://vegetable-recipes.net ভিজিট করুন