আসসালামু আলাইকুম । প্রিয় পাঠক আশা করি আপনারা সবাই ভাল আছেন ।এই পর্বে আজকে
আমরা লেবুর উপকারিতা ও পাতি লেবুর রস খেলে কি হয় এ সম্পর্কে আলোচনা করব ।লেবুর
উপকারিতা সম্পর্কে জানতে এই পর্বটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন । চলুন আমরা জেনে নিই
লেবুর উপকারিতা ও পাতি লেবুর রস খেলে কি হয় এই বিষয়ে ।
লেবু পানি খাওয়াকে একটি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস করে গণ্য করা হয়।এটি একটি সাইট্রাস
জাতীয় ফল। ভিটামিন সি বেশি থাকে সাইট্রাস ফলের মধ্যে। ভিটামিন সি শরীরের জন্য
অত্যন্ত উপকারী ।এ পর্বে আমরা নিচে লেবুর উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেব ।
লেবুর রস খাওয়ার উপকারিতা
লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। ভিটামিন সি কমাতে সাহায্য করে স্টকসের
ঝুঁকি, রক্তচাপ ও সংবহনতন্ত্রের রোগ।প্রতিটি লেবুর রসে প্রায় ১৮.৬ মিলিগ্রাম
ভিটামিন সি থাকে।একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক ভিটামিন সি এর পরিমাণ ৬৫ থেকে
৯০ গ্রাম।
প্রতিদিন সকালে লেবু পানি পান কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়তা করে। ঘুম থেকে ওঠার
পর প্রশ্ন লেখো পানি পান করা পাচনতন্ত্রকে ভালো রাখতে সহায়তা করে ।লেবুর রস
খাবার হজম করতে সহায়তা করে এবং শরীরের টক্সিন জমা হওয়া থেকে বিরত রাখে।
বিভিন্ন রোগে লেবুর ব্যবহার
১.বমিঃ লেবুর ওপর চিনি ছিটিয়ে চুষে খেলে পাকস্থলীর ভেতরের অল্প বিকারজনিত
কারণে হওয়া বমি প্রশমিত হয় ।
২.কলেরাঃ লেবু আর পেঁয়াজের রস ঠান্ডা পানিতে মিশিয়ে খেলে কলেরা রোগ ভালো
হয়।
৩.সর্দিকাশিঃ লেবুর রস গরম পানি দিয়ে রাতে শোয়ার আগে নিয়মিত সেবন
করলে সর্দি কাশি ভালো হয় । কিছুদিন নিয়মিত সেবন করলে পুরনো সর্দি কাশি ও ভালো
হয়ে যায়।
৪. অস্বস্তিঃ ঠান্ডা পানিতে লেবুর রস দিয়ে খেলে গরমের জন্য হওয়া অস্বস্তি দূরীভূত। হয় শরীর
মন তাজা লাগে।
৫. কাশিঃ
৪ মিলিমিটার পরিমাণ লেবুর রসের ১০ গ্রাম পরিমাণ মধু মিশিয়ে খেলে কাশি যেমনই হোক
ভালো হয়। দিনে তিনবার সেবনীয় । এভাবে লেবুর রস ও মধু একত্রে সেবন করিলে শ্বাস
রোগ ও হাঁপানিতেও উপকার পাওয়া যায়।
৬.চোখে ব্যথাঃ লেবু টুকরো করে তার ওপরে আফিম বা ফিটকারি ছিটিয়ে পুলটিস তৈরি করে চোখের ওপর
রাখলে চোখের লালচে ভাব চলে যাবে। চোখে ব্যথা হলেও তা নিরাময় হয়।
আরো পড়ুনঃ কমলা চাষ বাংলাদেশ - কমলা মিষ্টি করার উপায়
৭.পেটের ব্যথাঃদু চামচ লেবুর রসের মধ্যে এক চামচ আদার রস ও সামান্য চিনি মিশিয়ে সেবন করলে যে
কোন ধরনের পেটের ব্যথার উপকার পাওয়া যায়।
৮.
কান দিয়ে পানি পড়াঃ যাদের অনবরত কান গলে বা কান দিয়ে অনবরত পানি পড়ে
তারা লেবুর রসের সাথে সামান্য সজ্বিখার মিশিয়ে কানে দিলে কান গলা ভালো হয়ে
যায়। কান দিয়ে অনবরত পুঁজ পরাও সেরে যায় । এছাড়া আর একরকম ভাবেও কানের জন্য
লেবুর রস ব্যবহার করা যেতে পারে। লেবুর ৪০ মিলিলিটার রসে ১০ মিলিলিটার সরষের তেল
মিশিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নিন।
সরিষার তেলের বদলে তিলের তেলও দেওয়া যেতে পারে। ভালোভাবে ফুটে যাওয়ার পর কাপড়ে
ছেঁকে একটা শিশিতে ভরে রেখে দিন। এই তেল দু ফোঁটা করে প্রতিদিন কানে দিলে কান
দিয়ে পুঁজ পড়া, কানের মধ্যে চুলকানি হওয়া কানের ব্যথা দূর হয়। যারা কানে
সামান্য কম শোনের তারাও এতে উপকৃত হবেন ।
ত্বকে লেবুর উপকারিতা
লেবুর রস ত্বকের যত্নে বেশ উপকারী।ত্বকের যন্তে লেবুর একাধিক উপকারিতা রয়েছে।
লেবুর রসে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি থাকে যার ফলে ত্বকের দাগছোপ দূর করে ।
ত্বকের জৌলুস বাড়াতে সহায়তা করে লেবুর রস । লেবুর রসে থাকে প্রচুর পরিমাণে
এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা মুখ পরিষ্কার করতে খুব ভালো কাজে আসে ।
তবে ত্বকে সরাসরি লেবুর রস প্রয়োগ করাতে উচিত নয় ।সরাসরি লেবুর রস প্রয়োগ করলে
হিতে বিপরীত হতে পারে ।তাই নিয়ম মেনে সঠিক ভাবে লেবুর রস প্রয়োগ করলে ত্বক হয়ে
উঠবে সুন্দর। ত্বকে লেবুর রস ব্যবহারের পূর্বে ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন
।এবার সেখানে লেবুর প্যাক লাগান তারপর ১০-১৫ মিনিট রেখে ভালোভাবে ধুয়ে নিন ।
লেবুর রস তোকে ড্রাই করে দেয় ।তাই সর্বশেষে অবশ্যই মাইশ্চারাইজার মাখতে হবে।
ওজন কমাতে লেবুর উপকারিতা
লেবুর রসে পেকটিন থাকে যা ক্ষুদা নিয়ন্ত্রণের সহায়তা করে এবং জাঙ্ক ফুডের প্রতি
আগ্রহ কমাতে সহায়তা করে ।ওজন কমাতে চাইলে লেবুর রস খুবই উপকারী । লেবুর রস
পাকস্থলীতে পাক রস তৈরি কে ত্বরান্বিত করে। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমিয়ে পেট
পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে। লেবুর রস বিপাকক্রিয়ার হার বাড়ায় যে কারণে দিনের
শুরু করতে পারেন লেবু পানি দিয়ে ।
যা সহজে খাবার হজম করে দেবে। লেবু পানি ও মধু একত্রে খেলে ক্ষুধা কম লাগে ।
যার কারনে সারা দিনে কম খেতে হয় ।শরীরে ক্যালরি কম প্রবেশ করার ফলে ওজন
নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয় ।
লেবুর উপকারিতা চুলের জন্য
চুলের যত্নে লেবু অসাধারণ কাজ করে ।বেশ কিছু পুষ্টি উপাদান লেবুতে রয়েছে যেমন
সাইট্রিক এসিড ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন সি চুলের দ্রুত বৃদ্ধিতে
সহায়তা করে । লেবুর রস জলপাই তেল নারিকেল তেল একত্রে মিশিয়ে নিয়মিত চুলে লাগান
।
এতে চুল লম্বা হওয়ার পাশাপাশি ঝলমলে ভাব বাড়বে। চুলের আগাফাটা রোধ করতে
জলপাই তেল ও লেবুর রস একত্র মিশিয়ে চুলের আগায় লাগান ।চুল পড়া কমাতে লেবুর রস
লবণ ও ভিনেগারের মিশ্রণ একত্রে লাগান চুল পড়া কমে যাবে তাড়াতাড়ি।প্রাকৃতিকভাবে
চুল ঝলমলে রাখতে লেবুর রস ও নারকেল পানির মিশ্রণ ব্যবহার করতে পারেন ।
আরো পড়ুনঃ কিডনি পরিষ্কার করে ৯ খাবার - কিডনি রোগের ঔষধের নাম
রোজ লেবু খেলে কি হয়
লেবুপানি দারুন একটি পানীয় । এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। ভিটামিন সি
রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। তাই সংক্রামক বা অন্যান্য রোগ প্রতিরোধ করতে রোজ
লেবুর রস পান করতে পারেন ।রোজ লেবু খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় । রোজ লেবু পানি
পান করলে শরীরে প্রচুর পানি প্রবেশ করে যার ফলে পানি শূন্যতা দূর হয়।
খালি পেটে লেবু খাওয়ার উপকারিতা
অনেকের সকালে চা কফি প্রাণ করার অভ্যাস রয়েছে । নিয়মিত এ অভ্যাস পানিশূন্যতা
তৈরি করে ।তাই দিন শুরু হতে পারে এক গ্লাস লেবু পানি দিয়ে । আপনি চাইলে এক চামচ
মধু যোগ করতে পারেন। জেনে নেওয়া যাক খালি পেটে লেবু পানি খাওয়ার উপকারিতা।সকালে
উঠে নিয়মিত ৪০০ মিলি লিটার পানি খেলে বিপাকক্রিয়ার হার বাড়াই। ফলে সারাদিনের
খাবার সহজে হজম হয় । এতে কষ্টকাঠিন্য দূর হয় ।সারাদিন সতেজ রাখে সকালে খালি
পেটে খাওয়া লেবু পানি ।
ভাতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা
লেবু মুখে রুচি বাড়াতে সহায়তা করে তেমনি ভিটামিন সি এর অভাব দূর করে । ভিটামিন
সি রোদে বা তাপে নষ্ট হয়ে যায় যার কারণে আমাদের নিয়মিত ভিটামিন সি জাতীয়
খাবারের প্রয়োজন হয় । ভাতের সাথে নিয়মিত লেবু খেলে ভিটামিন সি জাতীয় খাবারের
অভাব পূরণ হয় । নিয়মিত ভাতের সাথে লেবু খেলে রুচি ও বৃদ্ধি পায়। যার ফলে শরীর
থাকে সতেজ। ভাতের সাথে লেবু খাওয়ার অনেক উপকারিতা পাওয়া যায় ।
আরো পড়ুনঃ ফুসফুসের জন্য ক্ষতিকর খাবার
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক আশা করি আজকের পর্বটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে এবং এ সম্পর্কে যদি
কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন ।এ পর্যায়ে আমরা আলোচনা করেছি
লেবুর রস খাওয়ার উপকারিতা,বিভিন্ন রোগে লেবুর ব্যবহার ,ত্বকে লেবুর উপকারিতা,ওজন
কমাতে লেবুর উপকারিতা,লেবুর উপকারিতা চুলের জন্য ,রোজ লেবু খেলে কি হয়,খালি পেটে
লেবু খাওয়ার উপকারিতা ,ভাতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা ।আশা করি আপনাদের অনেক ভালো
লাগবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url