হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষণ - হার্ট অ্যাটাক হলে করণীয়
আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক আমরা অনেকে আছি যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে। অনেকেরই হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাক হয়ে যায়। এর জন্য আজকে আমরা এই পোষ্টের মাধ্যমে হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষণ এবং হার্ট অ্যাটাক হলে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানব। আপনাদের সকলেরই হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষণ জেনে রাখা উচিত।
ভূমিকাঃ হার্ট অ্যাটাক করণীয়
প্রিয় পাঠক আমাদের দেশে অনেক মানুষ আছে যারা হার্টের সমস্যা নিয়ে বেঁচে আছেন। আমরা সকলেই জানি হার্ট অ্যাটাক একটি মানুষের মৃত্যুর অন্যতম কারণ। আমরা দৈনন্দিন জীবনে আশেপাশের মানুষ মারা গেলে বেশিরভাগ হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছে সেটি শুনে থাকি। যার সংখ্যা দিনে দিনে বেড়ে চলেছে। যার মূল কারণগুলো হলো অস্বাস্থ্যকর খাবারগুলো। আমরা দৈনন্দিন জীবনে অনেক ধরনের ভেজাল খাবার খেয়ে থাকি। যার অর্ধেকটাই হার্টের সমস্যায় অন্তর্ভুক্ত।
আরো পড়ুনঃ দাঁত ভালো রাখার উপায় কি - দাঁতের যত্ন না নিলে কি হয়
আমরা সকল কিছু জেনেও এই ভেজাল খাবার গুলো খেয়ে থাকি। আবার হার্ট অ্যাটাকের কারণ হিসেবে পেশির পরিমাণ দ্বারা বিচার করা হয় যা স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। এর জন্য আজকে আমরা এই পোষ্টের মাধ্যমে হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষণ গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। যা আপনাদের জেনে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরী।
হার্ট অ্যাটাক কত প্রকার?
প্রিয় পাঠক হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষণ গুলো জানার আগে আমাদের আগে জেনে নিতে হবে হার্ট অ্যাটাক কত প্রকার ও কি কি। তবে চিন্তার কোন কারণ নেই কেননা আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে হার্ট অ্যাটাক কত প্রকার ও কি কি সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। নিম্নে হার্ট অ্যাটাক কত প্রকার দেওয়া হলোঃ
- হার্ট অ্যাটাক তিন প্রকার যথা-
- ST সেগমেন্ট এলিভিশন মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন ( STEMI )
- কারোনারি স্প্যাজম বা অস্থির এনজাইনা।
উপরোক্ত এই তিন ধরনের হার্ট অ্যাটাক এর জন্য জরুরিভাবে রিভার্সকুলাইরাইজেশন প্রয়োজন পড়ে যা ধমনীতে রক্ত প্রবাহ সচল রাখতে সাহায্য করে। রিভার্সকুলাইরাইজেশনটি হল থ্রম্বোলাইটিক্স ক্লট বাস্টার ওষুধের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। এটি সেরা পথে দেওয়া হয় ও যান্ত্রিকভাবে এনজিওপ্লাস্টির মাধ্যমে চিকিৎসা বা বন্ধ ধমনী খুলতে ক্যাথেটার নামে পরিচিত পাতলা নমনীয় টিউব ব্যবহার করে। সুতরাং পরিশেষে বলা যায় উপরোক্ত তিন ধরনের হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে।
হার্ট অ্যাটাক এর মূল পাঁচটি লক্ষণ
প্রিয় পাঠক আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ গুলো বিস্তারিত জানাবো। আপনারা যারা হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ গুলো জানেন না তারা অবশ্যই এই আর্টিকেলটি পুরোটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন। কেননা আমাদের সকলেরই হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো জেনে রাখা উচিত। নিম্নে পাঁচটি হার্ট অ্যাটাকের মূল লক্ষণ গুলো দেওয়া হলোঃ
বুক ব্যথা
যার বুকে সমস্যা রয়েছে তার বুকের মাঝখানে প্রচন্ড পরিমাণ
ব্যথা অনুভব হয়। এই ব্যথা আস্তে আস্তে চোয়ালে অথবা বাম পাশে এবং হাতে ছড়িয়ে
পড়তে থাকে। এই ধরনের ব্যথা দেখা দিলে অবশ্যই নিকটস্থ ডাক্তারের কাছে গিয়ে
পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। কেননা এ ধরনের ব্যাথা থেকে হার্ট অ্যাটাকের সৃষ্টি হতে
পারে।
শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া
আপনার শরীরে যদি শ্বাসকষ্ট না থাকে তাহলে
হঠাৎ করে যদি শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায় এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হয় তবে এই ধরনের লক্ষণ
একটি খারাপ লক্ষণের ইঙ্গিত দেয়। মূলত যার হৃদ রোগ রয়েছে তার হঠাৎ করে এই ধরনের
সমস্যা দেখা দেয়। আবার অল্প কিছুতেই দম ফুরে যায় এবং নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় এ
ধরনের সমস্যা হার্ট অ্যাটাকের সমস্যার মধ্যে অর্থাৎ লক্ষণের মধ্যে ধরা হয়।
অতিরিক্ত কাশি হওয়া
আপনাদের কারো যদি অন্যদিনের চেয়ে অতিরিক্ত
কাশি হয় এবং সেই কাশি দীর্ঘদিন থাকে ও কাশির সাথে সাদা অথবা কিছুটা ঘোলাটে কফ
বের হয় তাহলে বুঝবেন আপনার হার্ট ঠিকমতো কাজ করছে না। এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে
বুঝে নিবেন ভবিষ্যতে আপনার হার্ট অ্যাটাকের সমস্যা অর্থাৎ লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
যদি কফ এর সাথে রক্ত বের হয় তাহলে নিশ্চিত বুঝে নিবেন এটি হার্ট অ্যাটাক এর
লক্ষণ।
হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
আপনি যদি অন্যদিনের তুলনায় কাজ করতে
করতে হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে যান তাহলে বুঝে নিবেন নিশ্চয়ই হার্টের সমস্যা রয়েছে।
কেননা হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া হাটের সমস্যায় বোঝায়। এটিও একটি হার্ট
অ্যাটাকের লক্ষণ।
অনিয়মিত পালস রেট
আপনি যদি কোন জায়গা থেকে হেঁটে আসেন বা দৌড়ে
আসেন তাহলে অবশ্যই আপনার পালস রেট ওঠানামা করবে। তবে এমনিতেই যদি পাস ডেট অন্য
দিনের তুলনায় ওঠানামা করে তাহলে বুঝবেন হার্টের সমস্যা রয়েছে। এটিও একটি হার্ট
অ্যাটাকের লক্ষণ হিসেবে ধরা যায়।
সুতরাং পরিশেষে বলা যায় আপনারা হয়তো হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষণ গুলো ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। আপনারা সকলেই নিয়মিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলুন। তাহলে হার্ট এবং শরীর দুটোই ভালো থাকবে।
হার্ট অ্যাটাক করণীয়
প্রিয় পাঠক আমরা উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ গুলো বিস্তারিত জানিয়েছি। এবার আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে হার্ট অ্যাটাক হলে করণীয় কি সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাৎক্ষণাৎ হার্ট অ্যাটাক হলে কি করবেন তা নিচে দেওয়া হলঃ
কারো যদি হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাক হয় তাহলে ভয় পাবেন না। হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাক হলে জোরে জোরে কাশি দেবেন যেন কাশির সাথে বুকের ভেতরে থাকা সমস্ত কফ বেরিয়ে আসে। আপনি যতবার কাশি দেবেন ততবার আগে দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে নিবেন। ঠিক একই ভাবে দীর্ঘ শ্বাস নেওয়ার দুই মিনিট পর পর কাশতে থাকুন। মূলত এটি করলে হৃৎপিণ্ডতে কিছুটা হলেও স্বাভাবিকভাবে রক্ত চলাচল করতে পারবে।
আরো পড়ুনঃ দাঁত সাদা করার উপায় - দাঁত সাদা করার ঔষধ
যতক্ষণ না আপনারা হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন রোগীকে ততক্ষণ এই করনীয় টি রোগীকে সাপোর্ট দিয়ে থাকবে। কেননা দীর্ঘশ্বাস নেওয়ার ফলে আমাদের শরীরে অক্সিজেন সচল অবস্থায় থাকে। এবং ঘন ঘন কাশি দেওয়ার ফলে বুকের ভেতরে অর্থাৎ হৃদপিন্ডের ভেতরে একটি চাপে সৃষ্টি হয় যার ফলে রক্ত সচল রাখতে সাহায্য করে।
সুতরাং পরিশেষে বলা যায় যদি হঠাৎ কারো হার্ট অ্যাটাক হয় তাহলে উপরোক্ত করণীয় টি অবশ্যই রোগীকে দিয়ে করাবেন। তাহলে হাসপাতালে নেওয়ার আগে রোগী একটু হলেও স্বাভাবিক অবস্থায় থাকবে এবং বেশি ক্ষতিও হবে না। আপনারা অবশ্যই হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষণ গুলো জেনে রাখবেন। তাহলে বিপদ থেকে সহজে বাঁচতে পারবেন।
হার্ট অ্যাটাক হয় যে কারণে
আসলে হার্ট অ্যাটাক বলতে যেটি বোঝায় একে মেডিকোসিস মায়োকার্টিয়াল ইনফার্কশন বলা হয়। আমাদের সকলের বুকের ভেতরে দুইটি হার্টের রক্তনালী থাকে একটি হল-রাইট করোনারী আর্টারি, আর আরেকটি হল লেফট অর্থাৎ বাম করোনারি আর্টারি। সাধারণত এই রক্তনালীতে যদি কোন ধরনের চর্বি জমে থাকে তাহলে একে আমরা ব্লক বলে থাকি।
উক্ত ব্লকের ভেতরে যদি রক্ত জমে থাকে অর্থাৎ জমাট বেঁধে থাকে তাহলে সেই নালীটি পুরোপুরি ব্লক হয়ে যায়। নালিটি যদি পুরোপুরি ব্লক হয়ে যায় তাহলে আমাদের বুকে ব্যথা বা হঠাৎ করে মৃত্যু হওয়া এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ আমরা একেই বলি হার্ট অ্যাটাক।
হার্ট অ্যাটাক হওয়ার মূল কারণ যারা অতিরিক্ত ধূমপান করে, উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি হয়, যাদের ভেতরে ডায়াবেটিস রয়েছে বা শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি রয়েছে আবার যাদের পরিবারে হার্টের সমস্যা রয়েছে মূলত তাদের ক্ষেত্রে এই হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বেশি থাকে। এছাড়াও অস্বাস্থ্যকর খাদ্য অভ্যাসের কারণে হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে। মূলত উপরোক্ত কারণগুলোর কারণে রক্তনালীর ব্লক জনিত হার্টের সমস্যা বেশি হয়।
হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করার উপায়
প্রিয় পাঠক আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। আপনাদের সকলেরই উচিত হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করার উপায় সম্পর্কে জেনে রাখা। কেননা এটি আপনাদের যেকোন বিপদে সাহায্য করতে পারে। নিম্নে হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করার উপায় দেওয়া হলোঃ
হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের দৈনন্দিন জীবনের জীবনধারায় স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন আনতে হবে। তা না হলে আমরা হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করতে পারব না। ইতিমধ্যে আপনারা যারা হার্ট অ্যাটাকের কবলে পড়েছেন তারা স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন এনে এই সমস্যা থেকে বের হতে পারবেন। এতে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। নিম্নে প্রধান তিনটি হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করার উপায় দেওয়া হলো।
- ধূমপান থেকে বিরত থাকা এবং অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় থেকে দূরে থাকা
- শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখা
- স্বাস্থ্যকর এবং অসম ডায়েট কন্ট্রোল করা।
প্রিয় পাঠক উপরোক্ত এই তিনটি অভ্যাস যদি আপনি মেনে চলতে পারেন তাহলে অবশ্যই আপনার হার্ট সতেজ এবং ভালো থাকবে। এবং হার্ট অ্যাটাক এর কবল থেকে রক্ষা পাবেন। সুতরাং আপনারা সকলেই স্বাস্থ্যকর জীবন গড়ে তুলুন এবং নিয়ম মেনে খাওয়া দাওয়া করুন। অস্বাস্থ্যকর খাবার থেকে দূরে থাকুন এবং অন্যকে সাহায্য করুন। তাহলে শরীর মন এবং হার্ট সকল কিছু ভালো থাকবে।
হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক চিকিৎসা
হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য হার্ট অ্যাটাক রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। এরপর রোগীকে বিশ্রাম করার সুযোগ করে দিতে হবে। যাতে কোন ধরনের সমস্যা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যদি সম্ভব হয় রোগীকে অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট খাইয়ে দিতে হবে এতে করে রক্ত জমাট থেকে ঘন হতে শুরু করবে। এরপরে হৃদপিণ্ড রক্ত সচল হতে সাহায্য করবে।
আরো পড়ুনঃ থ্যালাসেমিয়া রোগের কারণ ও লক্ষণ
এতে রোগী আগের চেয়ে অনেক আরাম এবং সুস্থ অনুভব করবে। এরপর ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীকে ওষুধ সেবন করাতে হবে। এবং বিভিন্ন ধরনের ভেজাল খাওয়ার থেকে রোগীকে দূরে রাখতে হবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url