দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন হলে কি করনীয়
আসসালামু আলাইকুম, আমরা প্রতিদিন অনেক মানুষ আছি যারা দাঁতের সমস্যায় ভুগতে থাকি। এর জন্য আজকে আমরা এই পোস্টের মাধ্যমে দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন হলে কি করনীয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। কেননা দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন হলে কি করণীয় তা সকলের জেনে রাখা উচিত।
ভূমিকাঃ দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন হলে কি করনীয়
আমাদের দেশে অনেক মানুষ আছে যারা প্রতিনিয়ত তাদের দাঁতের সমস্যায় পড়ে থাকে। এই দাঁতের সমস্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এ ধরনের সমস্যায় সাধারণত তাদের অযত্নের কারণে হয়। আবার কারো দাঁত ক্ষয় হয়ে যায় বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্ন জিনিস খেলে। আমাদের দেশে অল্প বয়সে অনেক ছেলে-মেয়ের দাঁতের সমস্যা হয়ে যায়। এর ফলে এই বয়সে বিভিন্ন ধরনের ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরামর্শ নিতে হয়। কিন্তু আমরা সকলে যদি দাঁতের প্রতি একটু যত্নবান হয় তাহলে এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবো।
আরো পড়ুনঃ দাঁত সাদা করার উপায়
আবার অনেকের আছে যাদের দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন হলে কি করনীয়তা সম্পর্কে কিছু জানে না। তবে চিন্তার কোন কারণ নেই, কেননা আমরা এই পোষ্টের মাধ্যমে দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন হলে কি করনীয় সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন হলে করণীয় সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের সাথে থাকুন।
দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন হলে করণীয়
আপনি যদি দাঁতের মাড়িতেই ইনফেকশন হয়েছে সেটি আগে থেকেই বুঝতে পারেন তাহলে আপনাকে আগে থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করে রাখতে হবে। যাতে করে সেই ইনফেকশন চারিদিকে ছড়িয়ে না যায়। এর জন্য এ আর্টিকেল এর মাধ্যমে দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন হলে করণীয় সম্পর্কে সকল কিছু বিস্তারিত জানাবো। নিম্নে তা দেওয়া হলঃ
ইনফেকশন হলে লবণ পানির ব্যবহার
গরম পানির ভেতরে এক চামচ লবণ মিশিয়ে
মুখের ভেতরে নিয়ে মেশানো গরম পানি এবং লবণ দাঁতের সঙ্গে কুলকুচি করুন। এর
ফলে মাড়ির ইনফেকশন দূর হবে এবং মাড়িতে থাকা ব্যথা কমে আসবে।
ইনফেকশন হলে ধূমপান থেকে দূরে থাকুন
ধূমপানের কারণে আমাদের দাঁত আরো
বেশি খারাপ হয়ে যায়। এর ফলে দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন এবং তার সাথে ব্যথার প্রভাব
দেখা দেয়। ধূমপানের কারণে দাঁতের ইনফেকশন আরো জটিলতা দেখা দিতে পারে। এর জন্য
ধূমপান থেকে দূরে থাকুন।
ইনফেকশন হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন
আপনার দাঁতে যদি ইনফেকশন দেখা
দেয় তাহলে অবশ্যই আপনাকে দাঁতের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এর জন্য আপনি
প্রতিদিন নিয়মিত ব্রাশ করুন। সকালে উঠে একবার ব্রাশ করুন এবং রাতে শোবার আগে এবং
খাওয়ারের পর ব্রাশ করুন। এতে দাঁতের ইনফেকশন কমে যাবে। এছাড়াও আপনি দাঁতের জন্য
অ্যান্টিসেপটিক মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন।
ইনফেকশন হলে ওষুধ ব্যবহার করুন
আপনার দাঁতে যদি ইনফেকশনের দেখা দেয়
তাহলে যে কোন একটি ভাল ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করুন। এর
ফলে দাঁতের ইনফেকশন অনেকটাই কমে আসবে।
ডেন্টিস্টের পরামর্শ গ্রহণ করুন
উপরোক্ত কাজগুলো করার পরেও যদি
আপনার দাঁতের ইনফেকশন অর্থাৎ দাঁতের মাড়ির ইনফেকশন ভালো না হয় তাহলে নিকটস্থ
যেকোনো একটি ভালো ডেন্টিস্টের কাছে গিয়ে পরামর্শ নিন। দাঁতের মাড়িতে হয়
ইনফেকশন ডেন্টিস্টের পরামর্শ নিলে সেটি পরিষ্কার করে দিবে। এরপর ডেন্টিস্টের
দেওয়া পরামর্শ অনুযায়ী চলুন।
দাঁতের মাড়িতে পুজ হলে করণীয়
প্রিয় পাঠক দাঁতের মাড়িতে পুঁজ হওয়ার মূল কারণ হলো দাঁতের মাড়ির বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়া, দাঁতের ফোড়া বের হওয়া, দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন ও অপরিচ্ছন্নতার কারণেও হয়। মূলত দাঁতের মাড়িতে পুঁজ হলে দাঁতের মাড়ি ফুলে যায় এবং লাল হয়ে যায় । আবার অনেক সময় ব্যথা অনুভব হয়। যদি আপনারা এই ধরনের সমস্যায় ভুগেন তাহলে সর্বপ্রথম আপনাদের নিজেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে তুলতে হবে অর্থাৎ দাঁতের যত্ন নিতে হবে।
মারিতে যদি পুজ হয় তাহলে এটি প্রতিরোধ করতে আপনাকে নিয়মিত ব্রাশ করতে হবে, ফ্লাস করতে হবে এবং এন্টিসেপটিক মত ওয়াশ ব্যবহার করতে হবে। এতে করে মাড়িতে পুজ হলে পুজের সংক্রমণ থেকে আমাদের বিভিন্নভাবে রক্ষা করে থাকে। এরপরেও যদি মাড়িতে পুজ হওয়া ভালো না হয় তাহলে নিকটস্থ ডেন্টিস্টের কাছে গিয়ে পরামর্শ গ্রহণ করে ওষধ সেবন করতে হবে।
এছাড়াও আপনি বাড়িতে আয়ুর্বেদিক নানা উপায়ে মাড়িতে পুজ হলে ভালো করতে পারবেন। এছাড়াও বাড়িতে আপনি হালকা গরম করছেন পানির ভেতরে এক চামচ লবণ নিয়ে প্রতিদিন কুলখুঁচি করলে পুজ ভালো করতে পারবেন। আমরা এই পোষ্টের উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন হলে কি করনীয় সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছি আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন।
দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে করণীয়
প্রিয় পাঠক আমরা উপুক্ত আলোচনার মাধ্যমে দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন হলে কি করনীয় এবং দাঁতের মাড়িতে পুজ হলে কি করনীয় সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি আপনাদের যদি কোন দাঁতের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে উপরোক্ত আর্টিকেলগুলো আপনার কাজে লাগবে। এবার চলুন আমরা নিম্নে জেনে নিই দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে করণীয় কি। তা নিম্নে দেওয়া হলঃ
মাড়ির ফোলা কমাতে টিব্যাগ
টি ব্যাগে রয়েছে ট্যানিনয়ে যার
ফলে আমাদের দাঁতের মাড়ি র ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এর ভেতরে থাকা
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের মুখের ভেতরের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
আপনারা বাসায় ফুটন্ত গরম পানিতে একটি টিব্যাগ চার থেকে পাঁচ মিনিট ডুবিয়ে
রাখুন। এরপর টি ব্যাগটি তুলে দাঁতের মাড়ি যেখানে ফুলে গেছে সেখানে ১০ থেকে ১৫
মিনিট ধরে রাখুন। এরপর হালকা গরম কুসুম পানির মধ্যে লবণ নিয়ে কুলখুঁচি করে ফেলে
দিন। এতে দাঁতের মাড়ির ফোলা কমিয়ে আনবে।
মাড়ির ফোলা কমাতে হলুদ
হলুদের মধ্যে রয়েছে কারকিউমান যেটি
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং এন্টি ইনফ্লামাটরি উপাদান দিয়ে সমৃদ্ধ। সাধারণত এই
উপাদান গুলো দাঁতের মাড়ির ফোলা কমাতে এবং ব্যথা কমাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও হলুদ দাঁতের ভেতরে থাকা ব্যাকটেরিয়া দূরীকরণে
সাহায্য করে। আপনারা বাসায় একটি কাফের মধ্যে আধা চামচ হলুদ গুঁড়া নিয়ে নিবেন।
আরো পড়ুনঃ দাঁত শিরশির থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায়
এরপর পানি দিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করবেন। পেস্টটি কিছুক্ষণ রেখে দিতে হবে। এরপর দাঁতের মাড়ি যেখানে ফুলে গেছে সেখানে আলতোভাবে পেস্ট লাগিয়ে দিতে হবে। এরপর কিছুক্ষণ রেখে গরম পানি দিয়ে ধুয়ে মুখ পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। এতে দেখবেন দাঁতের মাড়ির ফোলা আগের চেয়ে কমে গেছে।
মাড়ির ফোলা কমাতে জোয়ান
যোয়ান এ থাকা থাইমল যেটি
অ্যানেস্থেটিক বা অনুভূতি নাশক আনতে পারে, এন্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং
এন্টিফাঙ্গাল হয়ে কাজ করে। এর ভেতরে রয়েছে অ্যান্টিনফ্লামাটরি উপাদান
সমূহ। এটি ব্যবহারে ফলেও মাড়ির ফোলা কমাতে সাহায্য করে।
মাড়ির ফোলা কমাতে তেল
মাড়ির ফোলা অথবা ব্যথা কমাতে তেল অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের মুখের ভেতরে যদি কোন ধরনের ব্যাকটেরিয়া
থেকে থাকে তাহলে তেল ব্যবহার করলে ব্যাকটেরিয়া কমে যায়। এটি একটি পরীক্ষিত এবং
বিশ্বস্ত পদ্ধতি। তেল মুখের ভেতরের প্লাক দূর করতে এবং নারী সুস্থ রাখতে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রতিদিন এক চামচ করে তিলের তেল নিয়ে মুখের
ভেতরে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে দিতে হবে। এরপর গরম পানি দিয়ে সমস্ত মুখ
ফুলকুচি করে ফেলে দিতে হবে। এতে দাঁতের মাড়ির ফোলা দ্রুত কামাই।
মাড়ির ফোলা কমাতে ট্রি তেল
ট্রি তেলে রয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক
ও অ্যান্টি ইনফ্লামাটরি উপাদান যেটি আমাদের মাড়ি ফোলা কমাতে
গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। গরম পানির ভেতরে কয়েক ফোটা ট্রি তেল নিয়ে তা মুখের ভেতরে
মাউথওয়াশ হিসেবে ব্যবহার করুন। তবে নিজেকে সতর্ক রাখতে হবে এ তেল যেন পেটের
ভেতরে না যায়। কেননা এ তেল যদি পেটের ভেতরে যায় তাহলে পেটের ভেতরে নানা ধরনের
সমস্যা হবে। এর জন্য সতর্কতার সাথে ব্যবহার করুন।
দাঁতের মাড়ি ব্যথার ঔষুধ
প্রিয় পাঠক আমরা উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন হলে কি করণীয়, দাঁতের মাড়িতে পুজ হলে করণীয় এবং দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে কি করনীয় তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছি। আপনারা হয়তো দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন হলে কি করনীয় তা সঠিকভাবে বুঝতে পেরেছেন। এবার আমরা এ আর্টিকেলের মাধ্যমে দাঁতের মাড়ি ব্যথার ওষুধ সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। নিম্নে তা দেওয়া হলঃ
প্রিয় পাঠক আমরা প্রতিদিনই অনেকেই দাঁতের মাড়ি ব্যথা নিয়ে ভুগতে থাকে। এর জন্য কোন ধরনের ভালো ওষুধ খুঁজে পাই না। তবে দাঁতের কোন ওষুধ খেলে তা অবশ্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন। নিম্নে কিছু দাঁত ব্যথার ওষুধ দেওয়া হল-
- Fenamic 500- ১৮ বছর বয়স হলে একটা করে দিনে দুই থেকে তিনবার তিনদিন খাবার পর।
- Fanamic 250-পাঁচ থেকে দশ বছর বা ১৫ বছর বয়স হলে দুই থেকে তিনবার, তিন থেকে পাঁচ দিন।
- Napa one- ১৮ বছরের উপর হলে একটি করে আর ১৮ বছরের নিচে হলে অর্ধেক করে দুই থেকে তিনবার তিন দিন।
যদি উপরের ঔষধ গুলো খেয়ে দাঁত ব্যথা না কমে তাহলে নিম্নে দেওয়া ওষুধ গুলো সেবন করতে পারেন।
- Tab- Tory 60- দিনে দুইবার খাবার পর একটি করে।
- Tab- Exilok 20- দিনে দুইবার খাওয়ার আগে একটি করে।
- Cap- Moxacil 500- দিনে দুইবার খাবার পরে একটা করে।
- Tab- Amodis 400- দিনে দুইবার খাওয়ার পরে একটা করে।
দাঁতের ইনফেকশনের অ্যান্টিবায়োটিক
প্রিয় পাঠক আমরা আর্টিকেলের মাধ্যমে দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশনের এন্টিবায়োটিক কয়েকটি ওষুধের নাম জানাবো। তবে আপনারা অবশ্যই এই ওষুধগুলো সেবন করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করবেন। নিম্নে অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধের নাম দেওয়া হলঃ
আরো পড়ুনঃ দাঁতের স্কেলিং খরচ কত
- Nolitsin 400mg
- Sifloks 250mg
- Trivid 200mg
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url