সফর মাসের আমল ও ফজিলত - রবিউল আউয়াল মাসের ফজিলত
আসসালামু আলাইকুম, সফর মাসের আমল ও ফজিলত এবং রবিউল আউয়াল মাসের ফজিলত সম্পর্কে এ পোস্টে আলোচনা করব। আমরা অনেকেই সফর মাসের আমল ও ফজিলত সম্পর্কে জানিনা। কোন মাসে কি আমল করতে হয় সে সম্পর্কে ও অনেক কম ধারণা রয়েছে। তাই চলুন আজকে আমরা সেই সম্পর্কে জেনে নেই।
সফর মাস কি
সফর হলো একটি আরবি শব্দ। সফরের অর্থ হল শূন্য অথবা খালি। সফর মাসে সবাই যুদ্ধে যেত কারণ মহররম মাসের জন্য যুদ্ধ বন্ধ থাকতো এ সময় আরবরা সফর মাসকে বেছে নিয়েছিল যুদ্ধের জন্য। যুদ্ধে যাওয়ার সময় তারা ঘর খালি করে যেত। অর্থাৎ সফর আরবি শব্দ হলেও এর অর্থ বুঝায় জনমানুষ শূন্য তাই এর নাম হয়েছে সফর মাস। আরবি প্রতিটা মাসি কোন ধরনের মঙ্গল অথবা অমঙ্গলের কোন সম্পর্ক থাকে না।
আরো পড়ুনঃ ওযু ভঙ্গের কারণ ৭টি কি কি
জাহেলী যুগে যুগে বা আমলে এই সফর মাসকে নিয়ে অনেক ধরনের কুসংস্কার ছিল। তারা এই সফর মাসকে অমঙ্গল মনে করত কিন্তু আল্লাহতালা আমাদের প্রতিটা দিনই অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলত দিয়ে তৈরি করেছেন। কোনদিন বা মাস কোন কিছুই অশুভ বলে কিছু নেই। মঙ্গল অথবা অমঙ্গল এ দুইটাই নির্ভর করে মানুষের বিশ্বাস ও তার নিজের কর্মের দ্বারা।
আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমাদের কর্মের উপর তোমার দোষ এবং দুর্ভাগ্য তোমাদের সাথে আছে। ইয়াসিন আয়াত,১৯। অন্যদিকে বলা রয়েছে প্রত্যেক জন ব্যক্তির কল্যাণ এবং অকল্যাণ আমি তার নিজ কাঁধে বুঝিয়ে দিয়েছি। সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত ১৩।
আল্লাহ তা’আলা সফর মাসে কি বলেছেন
আল্লাহ তায়ালা বলেন, মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত অবশ্যই কিন্তু যারা ঈমান আনে এবং সৎ পথে কাজ করে এবং সৎ উপদেশ ও ধৈর্য দিয়ে থাকে তাদের জন্য কোন ক্ষতিগ্রস্ত নয়। সূরা আসর, আয়াত ১-৩।
মানুষ যদি একজন আরেকজনের ক্ষতি করে এবং অকল্যাণকর কাজ করে থাকে তাহলে সে ব্যক্তি কোনদিনই ক্ষতিগ্রস্ত থেকে মুক্তি পাবে না। একজন সৎ ব্যাক্তি চার ধরনের উপদেশ দিয়ে থাকে। ঈমান আনা, সৎকর্ম, সৎ উপদেশ এবং সব সময় সত্যের উপর চলা। এইসব ব্যক্তি কোন সময় ক্ষতির দিকে যাবে না স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা তাদের সাথে থাকেন। সে ব্যক্তি মৃত্যুর পর চিরস্থায়ী জান্নাতে সুখ লাভ করবে এবং জান্নাতে আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছাই সেই স্থানেই থাকবে।
সফর মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
ইসলামিক ভাবে সফর মাস কে চন্দ্র বর্ষের দ্বিতীয় মাস হিসেবে ধরা হয়। এ মাস খেয়ে জোড়া মাস বলার কারণ হলো এ মাসের মহরম মাস রয়েছে। সফর মাস এবং মহরম মাস জাহিলি যুগের এই দুই মাসের নাম হয়েছিল আজ সকল আউয়াল এবং আজ সকল সানি। মহরম মাসে যুদ্ধ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল এবং তখন আরবের লোকেরা নিজেদের স্বার্থ অনুযায়ী তারা সুবিধা মত অনৈতিক এ মাসের জন্য আগে অথবা পরে নিয়ে যেত।
এই দুই মাস এর নাম পরিবর্তন এর পর একটি মাসের নাম মহরম ও আরেকটি মাসের নাম সফর দেওয়া হয়েছে। একই ঋতুতে দুই মাস। এ মাসের গুরুত্ব অনেক বেশি। সফর মাস এর অর্থ হল শূন্য এই সফর মাস থেকে উৎপন্ন হয় অর্থ বিবর্ণ হলুদ অথবা রক্তশূন্য এরকম ধরনের ইত্যাদি। আরবরা অনেক হিসাব করত এবং চন্দ্র মাসকে গণনা করতো ঋতু ঠিক করার জন্য সব মাস যোগ করে সৌদি আরবে সমন্বয় করা হতো। ফল ফসল এবং ঋতুর জন্য আমাদের জীবনের পর্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে।
আরো পড়ুনঃ রিজিক বৃদ্ধির দোয়া ও আমল
আরব দেশে সফর মানুষকে খরা হিসেবে ধরা হতো কারণ এ মাসে করা হতো এবং অনেক খাদ্য ও আকাল দেখা দিত সফর মাসে। মাঠ ঘাট থেকে শুরু করে সমস্ত কিছু শুকিয়ে চৌচির হয়ে যেত মানুষ ক্ষুধার্তে এবং তাদের শরীরে রক্তশূন্য ও অনেক ফ্যাকাশে হয়ে যেত তাই তারা এ মাসে দুঃখ কষ্ট মনে করত জাহেলী যুগের মানুষ তাই তারা চাঁদ দেখা থেকেও বিরত থাকতো এবং তারা এ মাস শেষ হওয়ার জন্য অনেক অপেক্ষা করতে থাকতো। ইসলামিক ভাবে বলা যায় কোন মাসকে মঙ্গল বা অমঙ্গল অথবা কল্যাণ অকল্যাণ এগুলো কোন ধরনের সম্পর্ক থাকে না।
বিশ্বাস ও নিজে কর্মের উপরে সবকিছু নির্ভর করে থাকে। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর এ মাসের নেতিবাচকভাবে অনেক কিছু সুন্দরভাবে পরিবর্তন করে সবকিছু বিশেষভাবে যুক্ত করে নামকরণ করেছিলেন আস সাফারুল মোজাফার এর অর্থ হল সফর মাস হল সাফল্য মাস।
সফর মাসের আমল ও ফজিলত
আমরা যারা ইসলাম বিশ্বাস করি তাদের সবারই বিশ্বাস করা আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখা এবং নেক ভাবে আমল করা। চন্দ্র মাসে কিছু আমল থাকে সেগুলো সফর মাসেও করা যাবে। ১৩, ১৪, ও ১৫ তারিখে যত্নশীল ভাবে রোজা রাখা। আরবি প্রতিটি মাসেই তিনটা করে রোজা পালন করার কথা বলা হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর থেকে বর্ণিত রয়েছে, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন প্রতিটি মাসে তিনটা করে সিয়াম পালন করা উচিত, আরবি প্রতিটি মাসে তিনটা করেছি আমি পালন করলে সারা বছরের সমান সোয়াব লাভ করা যায়। বুখারী ১১৫৯।
এছাড়াও রয়েছে আপনি যদি প্রতি সপ্তাহের সোমবার এবং বৃহস্পতিবার রোজা রাখার অভ্যাস করেন তাহলে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন এই দুইদিন বিশেষভাবে রোজা রাখতেন। এই বিষয়ে নবীজি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন বৃহস্পতিবার এবং সোমবার আল্লাহ তায়ালা বান্দ আমল উপস্থাপন করে আমি চাই আমার আমল পেশ করার সময় আমি রোজা অবস্থায় থাকতে পারি।
রবিউল আওয়াল মাসের আমল সমূহ
রবিউল আল মাসের জন্য কোন ধরনের বর্ণনা পাওয়া যায় না তবে এ মাসে নবীজির সিরাত নিয়ে আলোচনা করা হলো একটি বড় ধরনের ইবাদত। আমাদের নবীজি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি সপ্তাহে সোমবার এবং বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন আপনি যদি প্রতি সপ্তাহে এভাবে রোজা রাখেন তাহলে আপনার উপর আল্লাহতালা যে আমল উপস্থাপন করেন আপনিও যেন সেই রোজা অবস্থায় আপনার আমল উপস্থাপন করতে পারেন।
আপনি তিনটি করে করে রোজা রাখেন তাহলে আপনার সারা বছরের সবের সমান সওয়াব পাবেন। আমাদেরকে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্মের ঘটনা থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো তার জীবন দর্শন অনুসরণ করা।
রবিউল আউয়াল মাসের ফজিলত
রবিউল আউয়াল মাস ইসলামে তৃতীয় মাস এই মাসে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে মদিনার উদ্দেশ্যে হিজরত করেন। একলা রবিউল আউয়াল এর রাত্রিকে লাইলাতুল মাবুদ নামে পরিচিত। সবাই রাত জাগে এবং আল্লাহর কাছে দোয়া চাই। মানুষ জীবনে অনেক ধরনের ভুল করে থাকে এই রবিউল আউয়াল মাসে তারা আল্লাহতালার কাছে তোবা করে এবং পরবর্তীতে যেন সে কোন ধরনের খারাপ কাজ না করে সে থেকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া চাই।
আরো পড়ুনঃ দ্রুত দোয়া কবুল হওয়ার উপায়
৮ই রবিউল আউয়াল ইমাম হাসান রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু শাহাদাত বরণ করেছেন। নয় রবিউল আউয়াল মুমিন ব্যক্তিরা বিভিন্ন নামে ঈদ উদযাপন করেন এবং আল্লাহতালার কাছে অশেষ রহমতে শুকরিয়া আদায় করে এবং মুমিন ব্যক্তিরা মুমিনদের মতো পোশাক পরে এবং খাদ্য খায়। আল্লাহতালার কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য প্রতিটা প্রতিটা মাসে চাইতে পারবেন কিন্তু প্রত্যেকটা মাসের জন্য কিছু কিছু আমল ও ফজিলত রয়েছে। আপনি প্রতিদিন আল্লাহতালার কাছে নামাজ পড়ে ঈমানদার ব্যক্তি হওয়ার জন্য প্রার্থনা করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url