সন্তানের প্রতি পিতা মাতার কর্তব্য সম্পর্কে হাদিস
আসসালামু আলাইকুম, আজকে আমরা এই পোস্টে আলোচনা করব সন্তানের প্রতি পিতা মাতার কর্তব্য সম্পর্কে হাদিস। আমাদের পৃথিবীতে অনেক বাবা-মা রয়েছেন যারা সন্তানকে অবহেলা করে থাকেন সন্তানের যে অধিকার রয়েছে সেই সম্পর্কে জানেন না। তাই আমরা আজকে প্রস্তাবনা করতে চলেছি সন্তানের প্রতি পিতা মাতার কর্তব্য সম্পর্কে হাদিস।
আল্লাহ তাআলা সন্তান সম্পর্কে কি বলেছেন
একজন ব্যক্তির সন্তান হলো এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সম্পদ হিসেবে ধরা যায়। কোরআনে বলা রয়েছে সন্তান সম্পর্কে যে, সন্তান এবং সন্তানাদি উভয় জীবনের অপরূপ সৌন্দর্য। সূরা কাহফ, আয়াত ৪৩। আবার অন্য একটি আয়াতে বলা রয়েছে সন্তান মানে হলো দান। শব্দেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
আরো পড়ুনঃ কোরবানির পশুর বয়স
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আমার ইচ্ছা অনুযায়ী আমি যাকে ইচ্ছা খুশিতে সন্তান দান করে থাকি এবং খুশির মাধ্যমে পুত্র সন্তান অর্থাৎ ছেলে সন্তান দান করে থাকেন। যাকে ইচ্ছা তিনি পুত্র সন্তান ও কন্যা সন্তান উভয় দুইটি ও দান করে। আবার অনেকের বন্ধ করে দেন। তিনি হলেন সর্বজনীন এবং ক্ষমতাশালী।
ইসলামের বিধানে মায়ের দায়িত্ব কি
একজন মা পারেন একটি সন্তানকে ছোট্ট থেকে বড় করে তোলার। একজন সন্তানকে একজন মা ই পারেন তার ভবিষ্যৎ সুন্দর করে তোলার ভূমিকা রাখেন। মা একটি সন্তানকে সঠিক শিক্ষা দিয়ে তাকে মানুষের মতো মানুষ গড়ে তুলতে পারেন। একজন মা শুধু মা বললে ভুল হবে তিনি হলেন আমাদের জননী এবং আমাদের ভবিষ্যতের চরিত্রবান একটি সন্তান তৈরি করার কারিগর। সন্তান গর্ব অবস্থায় থাকা সেই সময় যদি মায়ের কষ্ট হয় তিনি সন্তানকে কষ্টে রাখেন না তিনি যত চেষ্টা করেন যে তার সন্তান সুস্থ থাকে।
একজন সন্তান জন্মদানের পর একজন মায়ের দায়িত্ব থেকে যে তাকে জীবনের শুরু থেকে তার জীবনের সম্পূর্ণ কিছু গড়ে তোলার। সেই যেন বড় হয়ে মানুষের মতো মানুষ হয়ে মানুষ আর একজন না দায়িত্ব পালন করার ক্ষমতা রাখতে পারে। একজন সন্তান যতই বাহিরে পড়াশোনা করুক না কেন একজন মা তাকে হাতে করে সর্বপ্রথম তৈরি করে।
শিশু বড় হওয়ার পরে তার বাবা মায়ের আত্মীয়-স্বজনের সাথে পরিচয় করান এবং কথা বলা শেখানোর জন্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যতক্ষণ জাগ্রত থাকেন ততক্ষণ কথা বলানোর চেষ্টা করতে থাকেন যা অন্য কোন পুরুষের দ্বারা সম্ভব না।
ইসলামের বিধানে একজন মায়ের দায়িত্ব হল তাকে ছোট থেকে বড় করা পর্যন্ত এবং ইসলামের পথে শিক্ষাদান। যেমন একটি যৌথ পরিবারে যদি একজন জন্মদান করেন তাও তার মাকেই তার দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়।
সন্তানের হক সম্পর্কে হাদিস
একজন সন্তানকে সর্বপ্রথম মুসলমান করে তৈরি করতে হবে। সন্তানের প্রতি পিতা মাতার কর্তব্য সম্পর্কে হাদিস। একজন সন্তান যদি তার বাবা-মার দিকে নেক্কার ভাবে তাকায় তাহলে সেই হজের নেকি পাই। একজন ব্যক্তিকে ছোটবেলা থেকে মানুষ করে যদি শিক্ষা হিসাবে ইসলামের শিক্ষা দেওয়া হয় তাহলে তার বাবা-মা যদি মৃত্যুবরণ করেন তাহলে বাবা-মায়ের কবরে আজাব হলে সেই সময় কুরআন পড়ে এবং বিসমিল্লাহ বলে তাহলে তার বাবা-মায়ের কবরের আজাব বন্ধ হয়ে যায়।
একজন সন্তান যত নেক ব্যক্তি হবে তত বাবা-মায়ের লাভ হবে। সন্তানকে নেককার বান্দা বানাতে হলে সন্তানের হক আদায় করা প্রয়োজন। একজন সন্তানের যেগুলো হক রয়েছে তা নিম্নে দেওয়া হলঃ
- একজন নেককার সন্তান একজন নেক্কার মেয়েকে বিয়ে করবে।
- মায়ের গর্ভ থেকে যখন সন্তান জন্ম নিবে তখন ডান কানে আযান এবং বাম কানে ইকামত দিতে হবে।
- সন্তান জন্মের পর ৭ দিনের সময় মুসলমানের মুসলিম অনুযায়ী নাম রাখা।
- সাতদিনের দিন সন্তানের আকিকা দিতে হবে।
- সন্তানকে ইসলামের দ্বীনি শিক্ষা দিতে হবে।
- উপযুক্ত সময় দ্বীনদার মেয়ে দেখে দ্বীনদার ভাবে ছেলের বিয়ে দিতে হবে।
আরো পড়ুনঃ রিজিক বৃদ্ধির দোয়া ও আমল
ইসলামের শরীয়ত অনুযায়ী একজন সন্তান যদি তার হক না আদায় করে তাহলে
এর বিরুদ্ধে আল্লাহ তায়ালার কাছে ফরিয়াদ করে যে,
হে আল্লাহ
তায়ালা,
পিতা-মাতা আমাকে কোন দ্বীনি শিক্ষা দেন নাই। আমার পিতামাতাকে আপনি
সামনে নিয়ে আসেন আমি পিতা মাতার বুকের উপর পা রেখে জাহান্নামে যাব। আমার
পিতা-মাতাকে আপনি জাহান্নামে ফেলে দেন।
পিতা-মাতার কথা কোন সূরায় বলা হয়েছে
আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমাদের সৃষ্টিকর্তা বা পালনকর্তা আদেশ করেন যে, তোমরা আল্লাহ তায়ালাকে ছাড়া অন্য কোন ইবাদত করবা না ও মাতা পিতার সাথে সবসময় সুন্দর রূপে ব্যবহার করবেন। আর যদি কেউ অথবা উভয়ের মধ্যে বাক-বিতন্ন হয় তাহলে কখনো তাদেরকে বলবেন না।
বাবা-মায়ের সাথে কোন সময় উচ্চস্বরে কথা বলবেন না। একজন মাতা যদি তাকে ছোটবেলা থেকে দ্বীনী ইসলাম সম্পর্কে শিক্ষা দিয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই সে ভবিষ্যতে তার পিতামাতার সাথে কখনো খারাপ রূপ বা জোর গলায় কোন কথা বলবে না।
পিতা মাতার প্রতি সবসময় নিঃশব্দ ভাবে এমন ভাবে বলবেন যে সে কথা বলছে এরকম শব্দ কমে কথা বলবেন সম্মানজনক শব্দ ছাড়া কোন ধরনের খারাপ শব্দ ব্যবহার করবেন না। সূরা আল ইসরাইল, আয়াত নং ২৩ এ পিতা-মাতা কথা সুরায় বলা হয়েছে।
আমাদের প্রত্যেক সন্তানেরই প্রয়োজন বাবা-মার সাথে সুন্দর রূপে ব্যবহার করা উচ্চস্বরে কথা না বলা। কারণ মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত উপরোক্ত সন্তানের প্রতি পিতা মাতার কর্তব্য সম্পর্কে হাদিস সম্পর্কেও বলা হয়েছে।
কোরআন শিশু সম্পর্কে কি বলে
আল্লাহতালা আমাদের মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন নিয়ামত ও দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালার দেওয়া সে শ্রেষ্ঠতম নিয়ামত হল সন্তান দান। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতালা বলেন তোমাদের মধ্যে জোড়া ভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং পুত্র ও কন্যা সন্তানের দান করেছেন।
যাদের জমজ ভাবে আল্লাহ তায়ালা সন্তান দান করেন তাদের জীবনের উপর অনেক সুস্থতা লাভ করে থাকে। সূরা নাহল আয়াত ৭২। ইসলামের অনুযায়ী বলা যায় একজন শিশুসন্তান কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত কেননা সে শিশু থেকে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করা যাবে।
আপনি যদি তাকে ইসলামের দিকে শিক্ষা দিয়ে থাকেন তাহলে সে ইসলামের দিকে যাবে। কোরআনে উল্লেখ করা আছে যে শিশু শব্দের সমার্থক এই চারটা শব্দ সর্বমোট ৭৫ বার উল্লেখ করা আছে।
শিশু শব্দের অনেক সমার্থক শব্দ আছে। শিশু শব্দের কিছু সমর্থক শব্দ হলো সন্তান, বৎস্য, কিশোর, এরকম অনেক জায়গায় অনেক ভাবে অনেকবার ব্যবহার করা আছে। তাই কোরআনে বলা হয়েছে শিশু সন্তানকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার জন্য।
সন্তানের হক নষ্ট করার শাস্তি
আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীম স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন, পুরুষ এবং নারীর মধ্যেও উত্তরাধিকার সম্পূর্ণভাবে বন্টন করে দিয়েছেন এবং আমরা মনে করছি যে নারীদেরকে ঠকানো হচ্ছে। ছেলে পাচ্ছে একের অধিকাংশ এবং মেয়ে পাচ্ছে শুধুমাত্র এক অংশ কিন্তু এ কোথায় বলা যায় যে, মেয়েরা তো বাবার বাসা থেকেও পাচ্ছে আবার স্বামীর বাসা থেকেও পাচ্ছে। কিন্তু এদিকে একজন ছেলে তার বাবার এবং মা এর ভরণ পোষণ থেকে শুরু করে সবকিছুই দিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু এ কথা বলা যায় যে পুরুষের থেকে নারীদেরকে আল্লাহতালা জিতে দিয়েছেন কেননা নারী সব দিক দিয়ে পাচ্ছে কাউকে দেওয়া লাগছে না কিন্তু ছেলেদেরকে তাদের বাবা মার বউ সবার ভরণপোষণ এর জোগাড় করতে হচ্ছে। এজন্য সন্তান হক নষ্ট করলে আল্লাহতালার কাছে হিসাব দিতে হবে। আল্লাহতালার কাছে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। তোমার প্রজন্ম কিভাবে কাটিয়েছে এবং তুমি তোমার সারা জীবন কিভাবে কাটিয়েছো।
আরো পড়ুনঃ দ্রুত দোয়া কবুল হওয়ার উপায়
তোমার সম্পদ তুমি কোন কোন খাতায় আয় করেছ আর কোন কোন খাত এ ব্যয় করেছো সে সম্পর্কে আল্লাহতালার কাছে হিসাব দিতে হবে। একজন বাবা বা মা যদি সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে একজনকে কম একজনকে বেশি দেয় তাহলে আল্লাহর দরবারে তাকে হিসাব দিতে হবে। এরপর অনেক কঠিন শাস্তি সম্মুখীন হতে হবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url