কমলা চাষ বাংলাদেশ - কমলা মিষ্টি করার উপায়
আসসালামু আলাইকুম, বাংলাদেশের অনেক কৃষক আছেন যারা বাংলাদেশের মাটিতে ভালো মানের কমলা চাষ করতে চান। কিন্তু চাষ করা সঠিক পদ্ধতি জানেন না। তাই আজকে আমরা এই পোস্টের মাধ্যমে কমলা চাষ বাংলাদেশ এবং কমলা মিষ্টি করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। কমলা চাষ বাংলাদেশ আপনাদের প্রত্যেকটা কৃষকের জেনে রাখা উচিত।
ভূমিকাঃ কমলা মিষ্টি করার উপায়
আমাদের দেশে অনেক কৃষকরা আছে যারা বর্তমান সময়ে কমলা চাষের উপর বেশি মনোযোগী হয়ে উঠেছে। কেননা বর্তমান সময়ে কমলা চাষে কৃষকরা বেশি পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে পারছে। তবে কমলা সব জায়গায় উৎপাদন করা যায় না। কেননা কমলা উৎপাদনের জন্য সঠিক মাটির প্রয়োজন হয় যা বাংলাদেশের বেশ কয়েক জায়গায় রয়েছে। যে কোন মাটিতে এই কমলা চাষ করা যায় না। যদি আমাদের বাংলাদেশের মাটিতে বেশি পরিমাণ কমলা চাষ করা যেত তাহলে বাহিরের দেশ থেকে কমলা আমদানি করতে হতো না।
বাংলাদেশের এখন বেশ কিছু জায়গায় কমলা চাষ খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাসা বাড়িতেও কমলা চাষ করা হচ্ছে বিকল্প পদ্ধতিতে। আপনিও চাইলে পারবেন বাসাতে বা বাইরে কমলা চাষ করতে। শুধুমাত্র কমলা চাষের জন্য উপযোগী মাটি প্রয়োজন। এর জন্য আজকে আমরা এই পোস্টের মাধ্যমে কমলা চাষ বাংলাদেশ সম্পর্কে সকল কিছু তথ্য বিস্তারিত নিম্নে জানাবো।
বাংলাদেশের কমলা চাষ পদ্ধতি
প্রিয় পাঠক আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে কমলা চাষ বাংলাদেশ সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। আমাদের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে কমলা চাষ পদ্ধতি এবং কমলা কোন জাতের ভাল হয় সেই সম্পর্কেও বিস্তারিত জানতে পারবেন। নিম্নে সকল কিছু বিস্তারিত দেওয়া হলঃ
কমলা চাষের জন্য উপযুক্ত অঞ্চল
আমাদের দেশে বেশ কয়েকটা অঞ্চল আছে যে
জায়গায় কমলা চাষ করা যায় যেমন-চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট ও পঞ্চগড়
এই জায়গাগুলোতে কমলা চাষ করায় উপযুক্ত অঞ্চলগুলোর মধ্যে পড়ে। এছাড়াও আমাদের
দেশের এখন কৃষি উন্নয়নের ফলে বাড়ির আশেপাশেই বিভিন্ন কৃষি পদ্ধতিতে কমলা লেবু
চাষ করা হচ্ছে। যার ফলে কৃষকরা কমলালেবু চাষ করে সফলতা অর্জন করতে পারছে।
বংশবিস্তার পদ্ধতি
বীজ থেকে জায়গোটিক চারা দুর্বল এক্ষেত্রে মাতৃ
গাছের গুনাগুন বজায় থাকে না এমন গাছে ফল ধরতে প্রায় চার থেকে পাঁচ বছর সময়
লাগে। চারা গুলো সুস্থ সবল এবং মাতৃ গাছের গুনাগুন সম্পূর্ণ বজায় রাখে এবং
ভাইরাস মুক্ত রাখে। তাই এই চারাগুলো থেকে চার থেকে পাঁচ বছর সময় লাগে ফল ধরতে।
চারা রোপনের উপযুক্ত সময়
আমাদের বাংলাদেশের আবহাওয়ায় যেকোনো সময়ে
অর্থাৎ যে কোন বছরে কমলা গাছের চারা লাগাতে পারবেন। কমলা চারা লাগানোর জন্য
বর্ষার শুরুতে অর্থাৎ মেয়ে মাস থেকে জুন মাসে চারা রোপন করতে হয়। অর্থাৎ সেচের
সুবিধা থাকলে যে কোন সময় চারা রোপন করতে পারেন।
মাদা তৈরি এবং রোপন পদ্ধতি
কমলালেবুর চারা রোপনের জন্য সমতল জমিতে
বর্গাকার, আয়তাকার এবং পাহাড়ি জমিতে কতটুকু পদ্ধতিতে মালা তৈরি করতে হবে।
সাধারণত মাদার গর্তের আকার 160 সেন্টিমিটার এবং একটি চারার লাগানোর পর আরেকটি
চারা লাগানোর জন্য ৪ মিটার দূরত্বের ওপেন করতে হবে।
এরপর যেসব স্যারগুলো দেওয়া হবে সেগুলো হল- ১০ কেজি গোবর, ইউরিয়া ২০০ গ্রাম, ২০০ গ্রাম টিএসপি, এমওপি ২০০ গ্রাম ও চুন দিতে হবে ৫০০ গ্রাম। তবে মনে রাখতে হবে কমলা গাছের চারা রোপনের ১৫ থেকে ২০ দিন আগে উপরোক্ত সারগুলো জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।
সুতরাং পরিশেষে বলা যায় কমলা চাষ বাংলাদেশ কিভাবে রোপন করতে হয় আশা করি সকল কিছু বুঝতে পেরেছেন। এছাড়াও কৃষি উন্নয়নের বিকল্প পদ্ধতিতে কমলা ছাড়া রোপন করতে পারবেন।
টবে কমলা চাষ পদ্ধতি
প্রিয় পাঠক আপনারা বাইরে জমিতে ছাড়াও বাসা বাড়িতে ছাদের উপরে টবে কমলা চাষ করতে পারবেন। তবে কমলা চাষ পদ্ধতি একটু বিকল্প যা আপনাদের প্রথমে জেনে রাখতে হবে। তাই আজকে আমরা এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে কমলা চাষ বাংলাদেশ টবে কেমন করে কমলা চাষ করবেন সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো, নিম্নেনেতা দেওয়া হলঃ
আপনারা যদি ছাদে কিংবা টবে চায়না কমলা উৎপাদন করতে চান তাহলে আপনাদেরকে টবে কমলা গাছ লাগানোর সকল নিয়মকানুন এবং পরিচর্যা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। আপনি যদি টবে চায়না কমলা গাছ রোপন করতে চান তাহলে দুই ফিট সাইজের টব ব্যবহার করতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে আপনি যেই টব নিবেন সেই টবে যেন মাটির ধারণ ক্ষমতা 50 থেকে 60 কেজি হয়। টবের মাটি তৈরি করার জন্য আপনাকে নিম্নে লিখিত সারগুলো প্রয়োগ করতে হবে যেমন-
- 10 থেকে 15 কেজি গোবর অথবা কম্পোস্ট
- ১৫০ থেকে ১৫৫ গ্রাম ইউরিয়া সার
- ১০০ থেকে ১২০ গ্রাম পিএসপি সার
- ১০০ থেকে ১২০ গ্রাম এমওপি সার
- ১০ থেকে ১২ গ্রাম জিংক সালফেট
- পাঁচ গ্রামসলুবোর বোরন
প্রিয় পাঠক উপরোক্ত সারগুলো মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। এরপর ১০ দিন পর মাটিগুলো একে অপরের সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। মাটিতে সার প্রয়োগের ১০ থেকে ১৫ দিন পর চারা রোপন করতে হবে।
এছাড়াও আপনি যদি কমলার গাছকে ভালো রাখতে চান এবং সঠিক বৃদ্ধি করাতে চান তাহলে বছরে প্রতি মাসে অন্তত একবার NPK/মিশ্রণ সার ও ৬00 গ্রাম গোবর এবং দুই লিটার পানির সাথে গুলিয়ে গাছে চারিদিকে গোড়া থেকে ৬ ইঞ্চি থেকে ৭ ইঞ্চি দূরে মাটি খুঁড়ে মাটির সাথে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। এভাবে আপনি বাড়ির ছাদে টবে কমলা গাছ লাগিয়ে অনেক লাভবান হতে পারবেন।
কমলা গাছের পরিচর্যা
প্রিয় পাঠক শুধুমাত্র কমলা গাছ লাগালেই চলবে না আপনাকে সঠিক সময়ে সঠিক নিয়মে কমলা গাছের পরিচর্যা করতে হবে। তা না হলে কমলা গাছ থেকে কোন ধরনের ফল পাবেন না। নিম্নে কমলা চাষ বাংলাদেশ কমলা গাছের পরিচর্যা সম্পর্কে দেওয়া হলঃ
কমলা গাছের রোগ ও প্রতিকার
কমলা গাছের পাতায় যদি কোন ধরনের পোকা
বাসা বেধে থাকে তাহলে গাছের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এই ধরনের পোকা দমন করতে হলে
আপনাকে ১০ মিলি মেটাসিস্টক্স ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে অথবা ডায়াজিনন ৬০ ইসি ১০ লিটার পানিতে
৪ চামচ মিশিয়ে গাছের সমস্ত পাতায় স্প্রে করতে হবে। তাহলে কয়েকদিনের মধ্যেই
এই ধরনের পোকা থেকে গাছকে রক্ষা করতে পারবেন।
গাছের বাকল ছিদ্রকারী পোকা
এই বাকল ছিদ্রকারী পোকা গুলো গাছের গোড়া
থেকে শুরু করে আগা পর্যন্ত সকল বাকল গুলো ছিদ্র করে ফেলে এবং এই বাকলের ভেতরে
থাকা রসগুলো পুরোপুরি পোকা গুলো চুষে নেই। এ ধরনের পোকা গুলোকে দমন করতে হলে
আপনাকে সর্বপ্রথম 10 ইসি কীটনাশক ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি বা ২ চামচ মিশিয়ে পুরো
কাছে স্প্রে করতে হবে। স্প্রে করার ফলে বাকুল ছিদ্রকারী পোকা গুলো মরে যায়।
পরবর্তীতে গাছ পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে।
Grining রোগ থেকে মুক্তি
আপনি যদি রোপনকৃত কমলা গাছে এই ধরনের রোগ
দেখেন তাহলে গাছের পাতাগুলো হলুদ আকার ধারণ করবে এবং গাছের পাতার শিরা গুলো আস্তে
আস্তে দুর্বল হয়ে যাবে। এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ম্যালাথিওন
০.০৪% বা সুমিথিওন ৫০ ইসি ১০ লিটার পানিতে ৫ চামচ মিশিয়ে পুরো গাছে স্প্রে করে
দিতে হবে। এর ফলে কমলা গাছগুলো আগের মত সবুজ এবং সতেজ হয়ে যাবে।
কোন মাটিতে কমলা ভালো হয়
প্রিয় পাঠক আমরা উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে কমলা চাষ বাংলাদেশ কিভাবে কমলা চাষ করতে হয় এবং এর চাষ পদ্ধতি ও মাটি তৈরি সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছি। আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে কোন মাটিতে কমলা ভালো হয় সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো, নিম্নেতা দেওয়া হলোঃ
প্রিয় পাঠক কমলা চাষের জন্য উপযুক্ত মাটি হল বৃষ্টিপাত হয় এমন আদ্রও উঁচু পাহাড়ি অঞ্চলের কমলা চাষ ভালো হয়। উঁচু, উর্বর, গভীর সুনিস্কাসিত এবং মৃদু অম্লভাবাপন্ন বেলে দোআঁশ মাটিতে কমলার চাষ সবচেয়ে বেশি ভালো হয়। সুতরাং আপনারা যদি কমলার গাছ চাষ করতে চান তাহলে বেলে দোআঁশ মাটিতে চাষ করুন।
মিষ্টি কমলার জাত
প্রিয় পাঠক আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে কোন কোন কমলার জাত ভালো এবং মিষ্টি সেই জাতগুলোর নাম নিম্নে বলে দেব। আপনারা নিম্নলিখিত জাতগুলো রোপণের ফলে ভালো কমলালেবু চাষ করতে পারবেন।
- নাভি কমলা।
- রক্ত কমলা।
- ভ্যালেন্সিয়া অরেঞ্জ।
- জাফা কমলা।
- ট্যাঞ্জারিন কমলা।
- কেরা কেয়ার নাভি কমলা।
- বার্গামট কমলা ইত্যাদি।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url