ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ ও চিকিৎসা - ব্রেস্ট ক্যান্সার চিকিৎসা খরচ

সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে ব্রেস্ট ক্যান্সার, একটি মরণ ব্যাধি রোগ হয়ে উঠতে পারে। অনেকেই ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে চান।আজকে আমরা এই আর্টিকেলে আপনাদেরকে ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ ও চিকিৎসা এবং এ সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের তথ্য সম্পর্কে জানাবো। তাহলে চলুন জেনে আসা যাক ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে।

ক্যান্সারের অনেকগুলো ধরনের মধ্যে ব্রেস্ট ক্যান্সার অন্যতম।ব্রেস্ট ক্যান্সারের মহিলাদের বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকি থাকে।মহিলাদের ব্রেস্ট ক্যান্সারে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। সঠিক সময়ে ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসা অত্যন্ত জরুরী। তাই ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ ও চিকিৎসা এবং এ সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের তথ্য সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ুন।

ভূমিকা: ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ ও চিকিৎসা

বিশেষজ্ঞদের মতে বর্তমানে বাংলাদেশে ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই আজকে যদি আপনি আমাদের এই পর্বটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন তাহলে আপনি ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে পারবেন।


তাই ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ ও চিকিৎসা, ব্রেস্ট ক্যান্সার কিভাবে ভাল হয়, ব্রেস্ট ক্যান্সার হলে করণীয়, ব্রেস্ট ক্যান্সারের কারণ ইত্যাদি সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরী।

ব্রেস্ট টিউমারের লক্ষণ

ব্রেস্ট ক্যান্সারের প্রাথমিক স্তর হচ্ছে বেস্ট টিউমার।আমাদের শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মতো কোষেরও একটা স্বাভাবিক বৃদ্ধি প্রক্রিয়া রয়েছে। কিন্তু অনেক সময় ব্রেস্টের কিছু কোষ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।

 এই অস্বাভাবিক বা অনন্ত্রিত কোষ একপর্যায়ে মাংসের পিণ্ড বা চাকায় পরিণত হয়। এই চাকা বা পিন্ডয় হলো ব্রেস্ট টিউমার। বর্তমানে বাংলাদেশের নারীরা যেসব ক্যান্সারে আক্রান্ত হন তার মধ্যে ব্রেস্ট ক্যান্সার শীর্ষে রয়েছে।


যেকোনো রোগ সনাক্ত করার জন্য তার লক্ষণ সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরী। বিভিন্ন লক্ষণ এবং পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে ব্রেস্ট টিউমার চিহ্নিত করা হয়। নিচে ব্রেস্ট টিউমারের লক্ষণ তুলে ধরা হলো:
  • ব্রেস্ট টিউমারের সবচেয়ে বড় লক্ষণ হল ব্রেস্টে শক্ত পিন্ডের মতো অনুভব করা। এই অবস্থায় রোগী নিজেই ব্রেস্টে এক ধরনের অস্বাভাবিক শক্ত অবস্থা অনুভব করতে পারেন।
  • ব্রেস্টের বোটায় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। যেমনঃ বোটা অনেক কালো ও শক্ত হয়ে যাওয়া বা বুকের ভেতরে ঢুকে যাওয়া। 
  • ব্রেস্টের নির্দিষ্ট কোন অংশের চামড়ায় চুলকানি হওয়া বা ব্রেস্টের নির্দিষ্ট স্থানের চামড়ার রং পাল্টে যাওয়া।
  • ব্রেস্টের বোটা দিয়ে অস্বাভাবিক রস বের হয়
  • ব্রেস্ট ব্যথা হয়, ব্রেস্ট এর বোটাই ঘা হয়, অত্যাধিক চুলকানি হয়। ইত্যাদি।
এছাড়াও ভিন্ন ভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

ব্রেস্ট ক্যান্সার কি ভাল হয়

চিকিৎসকদের মতে, ব্রেস্টের কিছু কোষ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলে, সেই অনিয়মিত বা অতিরিক্ত কোষগুলো বিভাজনের মাধ্যমে চাকতি বা পিন্ডে পরিণত হয়। এই অবস্থাকে টিউমার বলা হয়। এটি রক্তনালী বা অন্যান্য মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়া এই অবস্থাকে ক্যান্সার বলা হয়।

ক্যান্সারের অনেকগুলো ধরন রয়েছে। এই ধরনের পর্যায় টিউমারের আকার ও রোগের স্বাভাবিক অবস্থার ওপর ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসা নির্ভর করে।

অনেকেই মনে করেন ব্রেস্ট ক্যান্সার মানেই নারীর শরীরের একটি বিশেষ অঙ্গ বাদ পড়ে যাওয়া। কিন্তু বর্তমানে ক্যান্সারের সম্প্রীতিক চিকিৎসা রোগীদেরকে নতুন পথ দেখিয়েছেন। 

যেখানে চিকিৎসার মাধ্যমে নারীর ব্রেস্ট বাদ না দিয়েও ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসা করা সম্ভব এবং একজন নারীকে সম্পূর্ণভাবে সারিয়ে তোলা সম্ভব। তবে ব্রেস্ট ক্যান্সার ভালো হয় কি হয় না এটি নির্ভর করে ক্যান্সারের পর্যায় এর উপর।

ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসা

ব্রেস্ট ক্যান্সারের ধরন ও পর্যায়ের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন ধরনের সার্জারি বা অস্ত্রপাচার করা হয়। যেমন:
লাম্পেকটমি: লাম্পেকটমি এর মাধ্যমে ক্যান্সার এবং এর আশেপাশের সামান্য টিস্যু অপসারণ করা হয়।
মাস্টেকটমি: এই চিকিৎসার মাধ্যমে পুরো ব্রেস্ট অপসারণ করা হয় এবং ডবল মাস্টেকটমি এর মানে হল দুটোই ব্রেস্ট  অপসারণ করা।
সেন্টিনেল নোড বায়োপসি: এর মাধ্যমে স্তনের টিউমার থেকে কয়েকটি লিম্ফ নোড কেটে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। এ পরীক্ষার মাধ্যমে রিপোর্ট যদি নেগেটিভ আসে তাহলে কোন অস্ত্র পাচারের প্রয়োজন হয় না।
অ্যাক্সিলারি লিম্ফ নোড অপারেশন:সেন্টিনেল নোড বায়োপসি এর রিপোর্ট যদি পজেটিভ আসে তবে সেক্ষেত্রে এই অপারেশন করা হয়।
বিকিরণ থেরাপি: এই থেরাপির মাধ্যমে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বিকিরণ রশ্নি, ক্যান্সার কোষ গুলোকে লক্ষ্য করে নিষ্ক্রিয় করার মাধ্যমে ধ্বংস করা হয়।
ব্রাকি থেরাপি: এ থেরাপি শরীরের ভেতর থেকে ক্যান্সার অপসারণের জন্য ব্যবহার করা হয়। যেখানে শরীরের ভেতর টিউমারের কাছে অল্প সময়ের জন্য তেজস্ক্রিয় বীজ বসানো হয় এবং ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা হয়।
কেমোথেরাপি: এ পদ্ধতিতে ক্যান্সারের কোষ  ধ্বংস করার জন্য কিছু ঔষধ ব্যবহার করা হয়। ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ গুলো সংকুচিত করার জন্য অস্ত্র পাচারের আগে কেমোথেরাপি করা হয়।

ব্রেস্ট ক্যান্সার হলে করণীয়

ব্রেস্ট ক্যান্সার হলে করণীয় নিচে তুলে ধরা হলো:
  • যেকোনো ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য প্রথমে ধূমপান এবং মদ্যপান এড়িয়ে চলতে হবে
  • মহিলাদের নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করতে হবে
  • রোগীদের নিয়মিত স্তন পরীক্ষা এবং মেমোগ্রাম স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং করতে হবে যা পরবর্তীতে চিকিৎসায় সাহায্য করে।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পোস্টমেনোপজাল হরমোন থেরাপি গ্রহণ করা যেতে পারে
  • বিভিন্ন ধরনের অস্বাস্থ্যকর খাবার, যেমন: ফরমালিন ও রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে পাকানো ফল রং এবং ইউরিয়া মেশানো খাবার ,জাঙ্ক ফুড ইত্যাদি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে এবং স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।
  • সঠিক ওজন বজায় রাখতে হবে।
  • ডাক্তারদের সাজেশন মেনে ডাক্তারি সেবা গ্রহণ করতে হবে।

ব্রেস্ট ক্যান্সারের কারণ

অনেকেই ব্রেস্ট ক্যান্সারের কারণ সম্পর্কে জানতে চান।বিভিন্ন কারণে ব্রেস্ট ক্যান্সার হতে পারে। নিচে বেস্ট ক্যান্সারের কারণ তুলে ধরা হলো:
  • ব্রেস্ট ক্যান্সারের একটি অন্যতম কারণ হলো আমাদের জীবনধারণ এবং খাদ্যাভাসে ব্যাপক পরিবর্তন।
  • ১২ বছরের নিচে ঋতুস্রাব হাওয়া এবং দেরিতে ঋতু বন্ধ বা মেনোপজ হওয়া
  • দেরিতে সন্তান গ্রহণ করা
  • সন্তানকে বুকের দুধ না খাওয়ানো
  • সঠিক সাইজের ব্রা ব্যবহার না করা
  • সব সময় ব্রা বা ব্রেসিয়ার পরে থাকা
  • খাদ্য তালিকায় শাকসবজি বা ফলমূলের চাইতে চর্বি ও প্রাণিজ আমিষ বেশি থাকা
  • প্রসেসড ফুড বেশি খাওয়া
  • দীর্ঘদিন ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়া বা হরমোনের ইনজেকশন দেওয়া
  • শারীরিক পরিশ্রম কম করা
  • অতিরিক্ত ওজন স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়
  • অনেক বয়স পর্যন্ত বিয়ে না করা
  • দীর্ঘদিন যাবত অতিরিক্ত কেমিক্যাল যুক্ত কসমেটিক্স, ডিওড্রেন্ট, ফ্রেশনার ব্যবহার করা
  • এক্সপায়ার ডেট পার হয়ে যাওয়া বিভিন্ন ধরনের ডিওড্রেন্ট ব্যবহার করা
বয়স বাড়ার সাথে সাথে বিশেষ করে ৫০ বছর বয়সের পর থেকে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায় যা পরিবর্তন যোগ্য নয়। তাই আমাদের সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরী।

ব্রেস্ট ক্যান্সার চিকিৎসা খরচ

কলকাতায়  বেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসা খরচ ১,৭০০০০-৭০০০০০ টাকার মধ্যে। যেখানে, সর্বোত্তম ফলাফল পাওয়ার জন্য ব্রেস্ট ক্যান্সারের সংমিশ্রণ থেরাপি ব্যবহার করে চিকিৎসা করা হয়।

শেষ কথা:ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ ও চিকিৎসা

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা বেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ ও চিকিৎসা এবং এ সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ ও চিকিৎসা আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসবে।
পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url