আমাশয় রোগের ঔষধ কোনটি - আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা

আমাশয় একটি পানিবাহিত রোগ, যার ফলে আমাদের স্বাস্থ্য হানি ঘটে এবং আমরা এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে চাই। তাই আজকে আমরা আপনাদেরকে আমাশয় রোগের ঔষধ কোনটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। চলুন তাহলে জেনে আসা যাক আমাশয় রোগের ঔষধ কোনটি এবং এ সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত।

সাধারণত আমাশয় হলো এমন একটি রোগ যেখানে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব। এটি বাংলাদেশের মানুষের জন্য একটি কমন রোগ। আপনারা যদি আমাশয় রোগের ঔষধ কোনটি এবং এ সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের তথ্য সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ুন। আশা করছি আপনাদের উপকারে আসবে।

ভূমিকা:আমাশয় রোগের ঔষধ কোনটি

শারীরিক যে কোন অসুস্থতা আমাদের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলে। এবং এই অসুস্থতা থেকে মুক্তির জন্য আমরা অনেক কিছুই করে থাকি। কোন মানুষের আমাশয় রোগ হলে তার শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এই রোগ ছোট বড় সবারই দেখা দিতে পারে। তাই আজকে আমরা আলোচনা করব আমাশয় রোগের ঔষধ কোনটি এবং এ সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের তথ্য সম্পর্কে।

আমাশয় রোগের ঔষধ কোনটি

আমাশয় হল এমন একটি সংক্রমণ যা অন্ত্রে প্রদাহ সৃষ্টি করে। এটি এমন একটি রোগ যে রোগের চিকিৎসা না করা হলে রোগীর জীবন হুমকির মধ্যে পড়তে পারে। আমাশয় একটি ছোঁয়াচে রোগ বিধায় এটি অন্যদের মধ্যেও ছড়াতে পারে। তাই এই রোগের বিস্তারোধ করতে টয়লেট ব্যবহার করার পর ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করতে হবে। তাই আমাশয় রোগের ঔষধ কোনটি এ সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরি। নিচে আমরা এ সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের তথ্য আলোচনা করবো।

আমাশয় রোগের এলোপ্যাথিক ঔষধের নাম

আমাশয় রোগের এলোপ্যাথিক ওষুধের নাম নিচে তুলে ধরা হলো:
ওষুধের নাম     কোম্পানি     দাম
Alexid              Aristopharm     15
Bacilex             pharmades       18
Emcil                  Square           15
Laxipen 200    Techno Drug     12
Pinam               Kemiko            12
Pivcilin Rangs  Pharma            12
Pivicil              General             12
Relexid            Renata               12
যে কোন ওষুধ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া উচিত নয়। এতে হিতের বিপরীত হতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী তিন বেলা তিনটা করে তিন দিন খেতে হবে এবং সেই সাথে তরল খাবার এবং পানীয় গ্রহণ করতে হবে।

আমাশয় রোগের চিকিৎসা

আমাশয় একটি পানিবাহিত রোগ যা রোগীর শরীরে ডিহাইড্রেশন সহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই আমাশয় থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে এ রোগের চিকিৎসা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরী। নিচে আমাশয় রোগের চিকিৎসা তুলে ধরা হলো:

খাবার স্যালাইন:আমাশয় রোগের চিকিৎসায় সর্বপ্রথম করণীয় হলো প্রচুর পরিমাণে খাবার স্যালাইন গ্রহণ করা।

বিশ্রাম নেওয়া: রোগির শারীরিক সুস্থতার জন্য রোগীকে প্রচুর বিশ্রাম নিতে হবে।


তরল ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ: ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধের জন্য প্রচুর পরিমাণে তরল ও পুষ্টিকর খাবার, যেমন: চিনির শরবত, ডাবের পানি, গ্লুকোজ, ঠাণ্ডা পানি, ফলের রস ইত্যাদি খাওয়া।

আদা চা: আদা আমাদের সকল চিকিৎসার জন্য একটি কার্যকর ঘরোয়া প্রতিকার, যা হজমের সাহায্য করে, খাবারের স্থবিরতা হ্রাস করে এবং পেটকে শক্তিশালী করে। এর জন্য প্রথমে একটি এক ইঞ্চি লম্বা আদার টুকরো নিয়ে কিমা করে নিতে হবে এবং এক কাপ পানির সাথে ফুটিয়ে ১০ মিনিটের জন্য ঠান্ডা করে নিতে হবে। এই আদা চা দিনে দুই থেকে তিনবার পান করতে হবে।

শরীরে স্যালাইন: রোগির ডিহাইড্রেশন দেখা দিলে শরীরে স্যালাইন লাগাতে হবে।

ঔষধ সেবন: চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ সেবন করতে হবে ।

আমাশয় রোগের কারণ

সাধারণত আমাশয় একটি সংক্রমণজনিত রোগ। এটি মূলত এন্টীমিবা বা হিস্টোলাইটিকা কিংবা শিগেলা নামক ব্যাকটেরিয়া মানব দেহের পরিপাকতন্ত্রের সংক্রমণ করলে এই রোগ হয়। বিভিন্ন কারণে আমাশয় শরীর হতে পারে,যেমন:
  • দূষিত খাবার গ্রহণ করা
  • দূষিত জল এবং অন্যান্য পানিও পান করা
  • সংক্রমিত ব্যক্তিদের দ্বারা সংক্রমিত হওয়া
  • দূষিত জলের সাঁতার কাটা
  • সংক্রমিত রোগের শারীরিক সংস্পর্শে আসা
  • দূষিত বাতাস এর মাধ্যমে
  • জীবাণবাহিত বিভিন্ন মশা মাছির মাধ্যমে ইত্যাদি

রক্ত আমাশয় হলে কি খাওয়া উচিত

রক্ত আমাশয় হলে একই সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খেতে হবে যেমন - ভাল ঠাণ্ডা পানি পান করতে হবে , চিনির সরবত পান করতে হবে , ডাবের পানি পান করতে হবে , ফলের রস ইত্যাদি এই সকল প্রকার তরল খাবার গুলো বেশি পরিমাণ খেতে হবে ৷ অতিরিক্ত পরিমাণ পাতলা পায়খানা হলে সাধারণত নিজের নিকটবর্তী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খেতে হবে ৷ সিগেলা প্রজাতির আমাশয় হলে ডাক্তারের পরামর্শমত এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হবে এতে রোগ পুরোপুরি ভালো হয়ে যায় ।

আমাশয় হলে কি দুধ খাওয়া যায়

আমাশয় হলে মূলত দুগ্ধ জাত খাবার গুলো খাওয়া উচিত নয় । এই সময়ে দুধ , পনির , মাখন ইত্যাদি খাওয়া উচিত নয় , তবে দই খাওয়া যেতে পারে , কারণ দই পরিপাকতন্ত্রের জন্য ভালো বলে বিবেচিত হয় ।

আমাশয় হলে কি ডিম খাওয়া যায়

হ্যাঁ , আমাশয় রোগের আক্রান্ত বেশির ভাগ সময় বেশির ভাগ ব্যক্তির ক্ষেত্রে ডিম সাধারণত তার অন্ত্রের গতি কমাতে সাহায্য করে থাকে এবং রোগী কে আমাশয় থেকে দ্রুত সম্ভব পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে থাকে । এ গুলো আপনি রান্না করে তারপর খেলে হজম করা সহজ হয়ে থাকে ৷ সুতরাং বলা যায় যে , একজন ব্যক্তির যখন ডায়রিয়া হয়ে থাকে তখন সিদ্ধ ডিম খেতে পারেন , যদি তার ডিমে অ্যালার্জি না থাকে ।

আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা

আমাশয় রোগ নিরাময়ে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরী। আপনারা অনেকেই আমাশয় রোগির খাবার তালিকা সম্পর্কে জানতে চান। নিচে আমার রোগীর খাবার তালিকা তুলে ধরা হলো:

তরল জাতীয় খাবার: এ অবস্থায় প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার যেমন: পাতলা খিচুড়ি,মাড়ি ভাত,সুপ,ডাবের পানি,স্যালাইন,গ্লুকজ,খেতে হবে।

শাক সবজি: এই অবস্থায় বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি যেমন:গাজর মাশরুম ইত্যাদি খাওয়া অত্যন্ত উপকারী।


কাঁচা কলা: এই অবস্থায় কাঁচা কলা ভর্তা বা কাঁচা কলার তরকারি অত্যন্ত উপকারী। কাঁচা কলা অন্ত্রকে প্রশমিত করে।

চিড়া: আমাশয় রোগ নিরাময় চিড়া অনেক ভূমিকা পালন করে। তাই চিড়া এবং চিড়া ভেজানো পানি পান করা যেতে পারে।

পানি পান করা: আমাশয় রোগের কিছুক্ষণ পর পর প্রচুর পরিমাণে পানি এবং স্যালাইন পান করতে হবে।
যে খাবারগুলো খাওয়া যাবে না:
  • অতিরিক্ত তেল মশলা জাতীয় খাবার
  • ভাজা খাবার ও চর্বি জাতীয় খাবার
  • চিনি যুক্ত খাবার
  • উচ্চ ফাইবার যুক্ত খাবার
  • দুগ্ধ যার বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • শক্ত খাবার খাওয়া যাবেনা
  • বাসি খাবার খাওয়া যাবেনা

আমাশয় রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

আমাশয় রোগের চিকিৎসা শুরু করার পূর্বে প্রথমত এর সাধারণ লক্ষণ গুলো সম্পর্কে জানতে হবে। লক্ষণ গুলোর মাধ্যমে আমাশয় রোগ নির্ণয় করার পর যে কোন চিকিৎসা শুরু করতে হবে। তাই আমাশয় রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরী। নিচে আমার রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার তুলে ধরা হলো।
আমাশয় রোগের লক্ষণ
  • আমাশয় রোগের প্রথম লক্ষণ হল পেট ফাঁপা এবং বারবার পাতলা পায়খানা হওয়া
  • মলের সাথে রক্ত যাওয়া
  • পেট ব্যথা করা
  • ক্ষুধা মন্দা হওয়া
  • অতিরিক্ত তৃষ্ণা লাগা
  • ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া
  • প্রসাবের পরিমাণ কমে যাওয়া
  • জ্বর এবং সর্দি হওয়া
  • শারীরিক শক্তি কমে যাওয়া
  • ওজন কমে যাওয়া
আমাশয় রোগের প্রতিকার
  • প্রচুর পরিমাণে পানি, ডাবের পানি এবং স্যালাইন পান করা
  • ঘন ঘন হাত ধোয়া
  • টয়লেট ব্যবহার করার পর ভালোভাবে টয়লেট এবং হাত পরিষ্কার করা
  • বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা
  • যেকোনো খাবার ভালোভাবে পরিষ্কার করে তারপর খাওয়া।
  • মাসে পচা খাবার গ্রহণ না করা
  • দুধজাত খাবার এড়িয়ে চলা ইত্যাদি

পুরাতন আমাশয় থেকে মুক্তির উপায়

বর্তমানে অনেকেই আইবিএস বা পুরাতন আমাশয় এর সমস্যায় ভুগছেন। সঠিক এবং সময়মতো চিকিৎসা নিলে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এ রোগের বিভিন্ন লক্ষণ থাকে,যেমন: পায়খানার সমস্যা দেখা দেওয়া, পেটের মধ্যে বিভিন্ন রকম ব্লটিং, পেট ফোলা বা পেটের মধ্যে শব্দ হওয়া ইত্যাদি। এ রোগ থেকে মুক্তির উপায় নিচে তুলে ধরা হলো:
  • প্রথমেই রোগীকে টেনশন বা দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত করতে হবে।
  • রোগীর জন্য সঠিক খাবার তালিকা তৈরি করতে হবে এবং সে অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করতে হবে
  • খাবার বন্ধ করতে হবে
  • পাতলা পায়খানা করতে পারে এমন খাবার গুলো বেশি পরিমাণে খাওয়াতে হবে।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করতে হবে

শেষ কথা: আমাশয় রোগের ঔষধ কোনটি

আজকের আর্টিকেলে আমরা আমাশয় রোগের ঔষধ কোনটি, আমাশয় রোগের চিকিৎসা, আমাশয় রোগের কারণ, আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা, আমাশয় রোগের এলোপ্যাথিক ঔষধের নাম, আমাশয় রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার, পুরাতন আমাশয় থেকে মুক্তির উপায় এবং সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আমাশয় রোগের ঔষধ কোনটি আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসবে।
পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url