যোগ ব্যায়াম করার নিয়ম - যোগ ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা
এছাড়া যোগ ব্যায়াম করার নিয়ম যোগব্যায়াম এর আসনগুলো কিভাবে করতে হয় এবং যোগ ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনার অনেক উপকারে আসবে।
যোগ ব্যায়াম
আমরা সারাদিন আমাদের শরীরকে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রাখী। আমরা যেমন একই কাজ
বারবার করতে গিয়ে বিরক্ত ফিল করি তেমনি আমাদের শরীর ও মন একই কাজ একই নিয়মে কাজ
করতে করতে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। আর এই অবসাদ দূর করার জন্য শরীর মন এবং
আত্মার এই সমস্যা গুলো বোঝার জন্য যে ব্যায়াম করা হয় তাকে যোগ ব্যায়াম বা
ইয়োগা বলা হয়। যোগ ব্যায়াম আমাদের শরীর এবং মনের অবসাদ দূর করে এবং শরীর
ও মনকে সতেজ এবং রোগমুক্ত রাখতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
করে। দুশ্চিন্তা এবং দুর্ভাবনা দূর করার জন্য যোগ ব্যায়াম সবচেয়ে বড় ঔষধ।
যোগ ব্যায়াম করার নিয়ম এবং যোগ ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা জানতে সম্পন্ন
আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
যোগ ব্যায়াম আসন
যোগ ব্যায়াম করার সময় আপনার শরীরকে বিভিন্ন ভঙ্গিমায় শরীরকে স্থির রাখতে হয় আর এই স্থির রাখার সময় যদি আপনার কোন প্রকার কষ্ট অনুভব না হয় তাহলে তাকে যোগব্যায়ামের আসন বলে। এককথায় যোগ ব্যায়াম করার সময় আপনার যে সকল ভঙ্গিমায় আপনি যোগ ব্যায়াম করছেন সেই সকল ভঙ্গিমা যদি আপনার কষ্টের কারণ না হয় তাহলে সেটাকে যোগ ব্যায়ামের আসন হিসাবে নিয়মিত প্র্যাকটিস করতে পারেন। যোগ ব্যায়ামের কিছু জনপ্রিয় আসন নিচে দেওয়া হলঃ
- শলভাসন
- প্রসারিতপাদোত্তানাসন
- পদ্মাসন
- ময়ূরাসন
- কূর্মাসন
- লোলাসন
- হনুমানাসন
- হলাসন
- দ্বিপদবিপরীতদণ্ডসন
- ধনুরাসন
- চতুরঙ্গদণ্ডাসন
- আকর্ণধনুরাসন
- ভেকাসন
যোগ ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা
আপনারা যদি যোগ ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানতে চান তাহলে এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।আমরা সারাদিন নিজেকে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রাখী। চাকরি ,পড়াশোনা,পরিবার সহ বিভিন্ন কাজ করার সময় আমাদের শরীর মন অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। যেমনভাবে আমরা প্রতিদিন যদি পোলাও বিরানি মাংস খাই সেটা যেমন একটা সময় আমাদের আর খেতে ইচ্ছা করবে না ঠিক তেমনি ভাবে আমাদের শরীর একই কাজ নিয়মিত করার সময় কাজ করার ক্ষমতা লোপ পেতে থাকে। এছাড়া বিভিন্ন সময় আমরা বিভিন্ন আঘাত কিংবা মন থেকে বিরহ কষ্টে আমাদের মন ভেঙে যায়। এই সকল সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য যোগ ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা ব্যাপক।
আরো পড়ুনঃ ইয়োগা ছাড়া হাত বা ফর্সা করার উপায় সম্পর্কে জেনে নিন
আমরা যদি নিয়মিত যোগ ব্যায়াম অনুশীলণ করি তাহলে আমাদের মন, শরীর এবং আত্মা যে সকল সমস্যা রয়েছে তা দূর করতে অনেকটা সাহায্য করবে। আমাদের মন সবসময় উৎফুল্ল থাকবে। আমরা যে কোন কাজ সফলতার সাথে করতে পারব। বিভিন্ন চিন্তা দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির জন্য যোগ ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ। এক কথায় শরীর মন ও আত্মা মানব অস্তিত্বের এই ত্রিস্তর যোগ ব্যায়ামের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত জরুরী।
ঘুমের জন্য যোগ ব্যায়াম
প্রতিদিন ঘুমানোর জন্য যদি আপনি যুদ্ধ চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে যান তাহলে এখন থেকে
আর ঘুমানোর জন্য যুদ্ধ করার প্রয়োজন নেই। আপনি যদি রেগুলার ঘুমানোর আগে এই ৩টি
যোগ ব্যায়াম করেন তাহলে আপনার পরিপূর্ণ তৃপ্তি সহকারে ঘুমানোর জন্য যথেষ্ট
সাহায্য করবে।
আরো পড়ুনঃশরীর মন ভালো রাখার জন্য হোমিওপ্যাথি ওষুধ সম্পর্কে জানুন
১। বৃক্ষাসনঃ এক পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকুন এবং অপর পা ভাঁজ করে পিঠের দিকে রাখুন। মাথার উপরের দিকে হাত তুলে সামনের দিকে ফোকাস রাখুন। এবার আস্তে আস্তে এক পা থেকে অন্য প্রান্তে ওজন স্থানান্তর করুন। মস্তিষ্ক এবং মন পুনঃস্থাপিত হয় এই আসনের সাহায্যে এবং শক্তিশালী হয় এবং নিতম্বের হাড় মজবুত হয়।
২। বালাসনঃ আপনার ঘুমের জন্য পারফেক্ট বালাসন যোগ ব্যায়াম আসন। এই ব্যায়ামটি করার জন্য প্রথমে আপনাকে গোড়ালির ওপর বসতে হবে এবং হাঁটুর দুই মাথা একসাথে দূরে রাখুন। এই পজিশন থেকে আপনার শ্বাস ছেড়ে সামনের দিকে ঝুকে পড়ুন। ঠিক ততটা ঝুকে পড়ুন যাতে আপনার কপাল মেঝে স্পর্শ করে। এবং আপনার হাত দূরে থাকবেন পেছনের দিকে এই ভাবেই কিছুক্ষণ অবস্থান করুন। আপনার মুখ দিয়ে জঙ্ঘার মাঝে চাপ দিন। যোগ ব্যায়াম আপনার মানসিক চাপ ও উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করবে। আপনার শারীরিক ক্লান্তি দূর করতে সহায়ক এবং পিঠের ব্যথা দূর করতে এটি খুবই কার্যকরী।
৩। উষ্ট্রাসনঃ ম্যাটস এর ওপর বসে আপনার দুই পায়ের পাতা দুই হাটুর উপরে তুলে দিন। এবং হাট পা ম্যাটস বরাবর সমান করে রাখার চেষ্টা করুন। আপনার পিঠ পেছনের দিকে এবং নিতম্ব সামনের দিকে ঝোকান। এবার আপনার সাধ্য অনুযায়ী মাথা ও স্পাইন পিছনের দিকে ঝুঁকে রাখুন। শরীর এবং আপনার বিভিন্ন পিসি যেমন পিঠের পেশিগুলোকে শান্ত রাখতে চেষ্টা করুন। এইভাবে কিছুক্ষণ যোগ ব্যায়াম চালিয়ে যান এবং একটু করে বিরতি দিন।
যোগ ব্যায়াম ছবি
যোগ ব্যায়াম এর উপকারিতা
আমাদের এই ব্যস্ত জীবনে সবকিছুর সময় হলেও নিজের শরীর-মনের যত্নের তেমন একটা সময়
আমরা বের করতে পারিনা। তাই তাদের জন্য সবচেয়ে সহজ ইয়োগা ব্যায়াম আপনি
সকালে ঘুম থেকে উঠে ১০/১৫ মিনিট এর মধ্যে করে ফেলতে পারেন। এই যোগ
ব্যায়াম ইয়োগার রয়েছে অনেক উপকারিতা তার মধ্যে আমি কিছুটা তুলে ধরতে চেষ্টা
করলাম।
আরো পড়ুনঃচোখের রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জেনে নিন
- যোগ ব্যায়াম আপনার শরীর এবং মনকে শান্ত রাখতে সহযোগিতা করে।
- যোগব্যায়াম আপনার হজম শক্তি কে বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
- যোগ ব্যায়াম শরীরের রক্ত চলাচল প্রবাহ বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
- শরীরের বিভিন্ন অংশের ব্যথা যেমন পিঠের ব্যথা ভাল করতে যোগব্যায়ামের তুলনা হয়না।
- যোগ ব্যায়ামের মাধ্যমে বিভিন্ন গিরায় গিরায় ব্যথা ব্যথা ইত্যাদি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- যোগ ব্যায়াম মহিলাদের দেহ নমনীয় করতে সহায়তা করে যা মাতৃত্বকালীন সময়ে শিশুর জন্ম স্বাভাবিকভাবে নরমাল ডেলিভারি সম্ভব হয়।
- শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করতে যোগ ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা ব্যাপক।
- যোগব্যায়াম মানসিক অবসাদ শরীরের ক্লান্তি দুর্বলতা মানসিক চিন্তা দুশ্চিন্তা দূর করতে সহায়তা করে।
- যোগ ব্যায়াম করার মাধ্যমে আপনার মনোযোগ এবং স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়।
- ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য যোগব্যায়াম খুবই উপকারী কারণ এটি সুগার লেভেল ঠিক রাখতে সহায়তা করে।
- মেয়েদের মাসিক চলাকালীন সময়েও যোগব্যায়াম তার ব্যথা কমাতে যোগ ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা অনেক।
যোগ ব্যায়াম করার নিয়ম - যোগ ব্যায়াম করার পদ্ধতি
যোগ ব্যায়াম করার জন্য কোন বয়স এর সীমানা নেই। যেকোনো বয়সের মানুষ যোগ
ব্যায়াম করতে পারে। যোগব্যায়াম আমাদের শরীরের ক্লান্তি অবসাদ দুশ্চিন্তা
সহ অনেক রোগ থেকে মুক্তি দিতে সহায়তা করে। তাই আমাদের সকলের যোগ ব্যায়াম
করা উচিত কিন্তু আমরা জানি না যোগব্যায়ামের সঠিক নিয়ম গুলো জানিনা। তাই
আমি চেষ্টা করব যোগ ব্যায়াম করার নিয়ম যোগ ব্যায়ামের পদ্ধতি গুলো কি কি সেগুলো
বিস্তারিত জানানোর।
- সকাল সন্ধ্যা রাতে কিংবা গোসলের আগে যোগ ব্যায়াম করা যায়। যোগ ব্যায়াম অবশ্যই আপনার পেট খালি থাকা অবস্থায় করার চেষ্টা করবেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে বিছানায় কিছুটা সময় বিভিন্ন আসন ও মুদ্রা করতে পারেন। ইয়োগা করা বা যোগ ব্যায়াম করার যে সকল মুদ্রা রয়েছে বা ভঙ্গিমা রয়েছে সেগুলো যতটা সময় আপনার শরীর কোন প্রকার কষ্ট ছাড়া সহ্য করতে পারে তার বেশি করা উচিত নয়। যোগ ব্যায়াম করার সময় লক্ষ্য রাখবেন আপনি যাতে একই সাথে একই সময়ে ৭ থেকে ৮ এর বেশি আসন করা ঠিক নয়। যোগব্যায়ামের প্রতিটি আসন করার পর নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিরতী দিয়ে পরের আসন শুরু করতে হবে।
- যোগ ব্যায়াম করার সময় আপনার শরীরের জন্য কষ্টদায়ক হয় এমন আসন পরিহার করা উচিত। যোগ ব্যায়াম করার সময় আপনার শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক অবস্থায় রাখতে হবে এবং নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে।
- যোগ ব্যায়াম করার সময় অবশ্যই যোগ ব্যায়াম করার জন্য যেসকল স্থান বাছাই করছেন সেখানে অবশ্যই ম্যাট অথবা পাতলা নরম কিছু বিছিয়ে রাখতে হবে।
- যোগ ব্যায়াম করার সময় অবশ্যই ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে যাতে করে মাংসপেশিতে রক্ত চলাচল ঠিক থাকে।
- যতটা সম্ভব শরীর মন এবং আত্মার মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করার চেষ্টা করুন এবং মনোযোগ ধরে রাখুন।
- এই সকল পদ্ধতি গুলো সবসময় অবলম্বন করলে যোগব্যায়ামের খুব ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
লেখকের মন্তব্যঃ
প্রিয় পাঠক আশা করি যোগ ব্যায়াম করার নিয়ম এবং যোগ ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা
সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। এই তথ্যগুলো জেনে যদি আপনি
উপকৃত হন তাহলে অবশ্যই আপনার প্রিয় জন এবং প্রিয় মানুষদের সাথে শেয়ার
করুন। এবং এই সম্পর্কিত নিয়মিত বিভিন্ন টিপস পেতে আমাদের ওয়েব সাইট
নিয়মিত ভিজিট করুন। ধন্যবাদ কথা হবে অন্য কোন নতুন টপিক নিয়ে। সেই পর্যন্ত
ভালো থাকুন আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url