কুসুম্বা মসজিদ দিঘি ও কুসুম্বা মসজিদের ইতিহাস
কুসুম্বা মসজিদ দিঘি
প্রায় সাড়ে চারশো বছরের ঐতিহ্য ও স্মৃতি ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছে কুসুম্বা মসজিদ।নওগাঁ জেলা সদর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে এই কুসুম্বা মসজিদটি, রাজশাহী- নওগাঁ রুটের গা ঘেঁষে যাওয়া দিঘির পাশে এই কুসুম্বা মসজিদটি অবস্থিত। কালাপাহাড় নামে স্থানীয়দের কাছে এটার আরেক নাম কুসুম্বা মসজিদ দীঘি। মসজিদটির পূর্ব পাশে যে দিঘিটি রয়েছে সেটি প্রায় ৭৭ বিঘা বিশিষ্ট বিশাল বড় একটি দিঘি গ্রামবাসী ও মুসল্লিদের গোসল, খাবার পানি ওযুর প্রয়োজন মেটানোর জন্য এই দিঘিটি নির্মাণ করা হয়েছিল বলে অনেকে ধারণা করে।
আরো পড়ুনঃ ইউক্রেনের মানচিত্র ও মুদ্রার নাম জেনে নিন
কুসুম্বা মসজিদ কোথায় অবস্থিত
প্রাচীন ও ঐতিহ্য এই কুসুম্বা মসজিদটি নওগা জেলা থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে কুসুম্বা গ্রামে এই মসজিদটি অবস্থিত। বাংলাদেশের ৫ টাকার নোটেও এই কুসুম্বা মসজিদের ছবি দেওয়া রয়েছে। কিংবা মসজিদের রয়েছে সেটি লম্বায় প্রায় ১২০০ ফিট এবং চওড়া ৯০০ ফিট। প্রতিদিন এই কুসুম্বা মসজিদটি ভ্রমণ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্রমণ পিপাসুরা ছুটে আসে এই কুসুম্বা মসজিদটি দেখতে।
কুসুম্বা মসজিদ কে নির্মাণ করেন
কুসুম্বা মসজিদের ইতিহাস সম্পর্কে জানলে দেখা যাবে হিজরি ৯৬৬ সাল (১৫৫৮- ১৫৬৯ )খ্রিস্টাব্দ। সুলাইমান নামে একজন ব্যক্তি, শাসক গিয়াস উদ্দিন বাহাদুর শাহর আমলে এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। কুসুম্বা মসজিদের দেওয়াল চারিদিকে ৬ ফিট পুরু সম্পূর্ণ মসজিদটি পাথরের নির্মিত। মসজিদের সম্মুখভাগে রয়েছে তিনটি দরজা, এই মসজিদটি উত্তর দক্ষিনে ৫৮ ফুট লম্বা ও ৪২ ফুট চওড়, মসজিদের চার কিনারায় রয়েছে চারটি মিনার তাদের উপর রয়েছে ছয়টি গম্বুজ। শোনা যায় ভূমিকম্পে তিনটি গম্বুজ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। পরে সেগুলো সরানো হয়েছে প্রত্নত্ন বিভাগের দ্বারা।
আরো পড়ুনঃ ন্যাটোর সদস্য দেশ কয়টি সম্পর্কে জেনে নিন
কুসুম্বা মসজিদ স্থাপত্য
মসজিদের গায়ে রয়েছে লতাপাতার নকশা, চারিদিকে প্রাচীর ঘেরা মসজিদটির প্রধান ফটকে প্রহরী চৌকি ছিল। সামান্য কর্নিশ এবং সংলগ্ন আট কোনা বুরু্জ। মসজিদের মূল গাঁথুনে ইটের হল এর সম্পূর্ণ দেওয়াল এবং ভেতরের খেলানগুলো পাথরের আস্তরণে ঢাকা। এই মসজিদের দেওয়ালের জালি নকশা মেজে ভিত্তি মঞ্চ ও স্তম্ভ পাথরের।
এগুলো থেকে বুঝা যায় এই মসজিদের স্থাপত্য বাংলা স্থাপত্য রীতির প্রভাব
পাওয়া যায়। মসজিদটি আয়তাকার এতে রয়েছে দুটি আইন এবং তিনটি বে। মসজিদটির
প্রবেশ পথ একটি করে উত্তর দক্ষিনে এবং তিনটি পূর্বপ্রান্তে। মসজিদের
কেন্দ্রীয় মেহেরাব টি পশ্চিম দিকের দেওয়াল থেকে আলাদা। এই মসজিদটিতে
মোট মেহেরাব রয়েছে তিনটি যেগুলি সব কালো পাথরের তৈরি। মসজিদটির পূর্ব
দিকে রয়েছে বিশাল বড় দিঘী যে৭৭ বিঘা জমি নিয়ে রয়েছে।
কুসুম্বা মসজিদ’ কোন শাসকের রাজত্বকালে নির্মিত হয়?
কুসুম্বা মসজিদ দীঘি এটি মুসলিম স্থাপত্য কলার এক অসাধারণ নিদর্শন। মসজিদটির প্রধান পঠকে লেখা রয়েছে এর নির্মাণকাল ৯৬৬ হিজরী (১৫৫৮ থেকে ১৫৫৯) খ্রিস্টাব্দ। বাংলায় আফগানদের শাসন আমলে শেষের দিকে শাসক গিয়াস উদ্দিন বাহাদুর শার রাজত্বকালে সোলায়মান নামে একজন মুসলিম ব্যক্তি এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। জানা যায় সোলাইমান ব্যক্তিটি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন সেই সময়। সবুর খান নামে ধর্মপ্রান এই মুসলিম এই মুর্শিদ টি নির্মাণ করে
আরো পড়ুনঃ রাশিয়া ইউক্রেনের সর্বশেষ যুদ্ধের খবর জানুন
কুসুম্বা মসজিদের ইতিহাস
আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি মসজিদটি হিজরি ৯৬৬ সাল ১৫৫৮ থেকে ১৫৫৯ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয়এই মসজিদটি। মসজিদটি প্রতিষ্ঠা বিষয়ে জনপ্রিয় অনেক উপকথা আছে কালিগ্রাম পরগনার জমিদার ছিলেন সিলমন মজুমদার তিনি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার কারণে কারারুদ্ধ হয়ে বসবাস করেন পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
সোলেমান নাম ধারণ করেন এবং রাজস্বের দায় থেকে মুক্ত হন। কারামুক্ত
হয়ে সুলেমান খান এই মসজিদটি তৈরি কর। তার স্ত্রীর ধর্মান্তরের নাম হয় সোনা
বিবি, স্ত্রীর ইবাদতের জন্য তিনি এই মসজিদটি নির্মাণ করেন মসজিদটির ইতিহাস
যাই থাকুক না কেন নির্দ্বিধায় নিঃসংকোচে এই মসজিদ টি প্রাচীন এক অনন্য
নিদর্শন।
ঐতিহ্যের-নিদর্শন-কুসুম্বা-মসজিদ
প্রায় সাড়ে চারশো বছরের ঐতিহ্য ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছে কুসুম্বা এই
মসজিদটি। নওগাঁ জেলা থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে মান্দা উপজেলা কুসুম্বা
ইউনিয়নের কুসুমবা গ্রামে এই কুসুম্বা মসজিদটি অবস্থিত। রাজশাহী নওগাঁ
মহাসড়কের মান্দা ব্রিজের পশ্চিম দিকে ৪০০ মিটার উত্তরে অবস্থিত। এই মসজিদটি
দেখার জন্য প্রতিদিন শত শত ী দর্শনার্থী এইখানে আসে মসজিদ দেখার জন্য।
কথিত আছে কুসুম্বা মসজিদ দিঘি, এই দিঘিতে নেমে কেউ যদি কোন কিছু চায় তাহলে
তার মনের আশা পূরণ হয়ে যায়।
কুসুম্বা মসজিদের দীঘি
কুসুম্বা মসজিদের দিঘীটি মসজিদের পূর্ব পাশে অবস্থিত ৯৬৬ সালে এই দিঘিটির
বানানো হয়। তখনকার মুসল্লিদের ওযু করার জন্য এবং গ্রামবাসীর পানির সুবিধার
জন্য এইদিঘিটি করা হয়। অনেক রকম রূপকথা আছে এক সময় মনে করা হতো এইদিঘিতে
গোসল করতে গিয়ে যা চাইবে তাই পাবে এরকম করার জন্য দূর দূরান্ত থেকে বিভিন্ন
রকম নারী-পুরুষ এসে জমায়ে হত। কালের বিবর্তনে আসতে আসতে করে এই প্রভাবটি
কমতে থাকে বর্তমানে এই দিঘিতে মাছ চাষ করা হয়। ৭৭ বিঘা জমি নিয়ে এ দিঘি
তৈরি করা হয়।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক এই পর্বে আমরা আলোচনা করেছি কুসুম বা মসজিদের দিকে ও কুসুমবামর্শ
মসজিদের ইতিহাস সম্পর্কে। আরো আলোচনা করেছি কুসুম্বা মসজিদের ঐতিহ্য নিদর্শন
সম্পর্কে। আজকের এই আর্টিকেল সম্পর্কে যদি আরো কিছু জানতে চান তাহলে অবশ্যই
কমেন্ট করে জানাবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url